নেতিবাচক রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলাতে হবে-কমিশনের কাজে হস্তক্ষেপ নয়

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা বৃহস্পতিবার এক সেমিনারে আক্ষেপের সুরে বলেছেন, যথেষ্ট স্বাধীনতা ও ক্ষমতা পেলেও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী—উভয় দলকে লক্ষ্য করে তিনি অভিযোগ তুলেছেন।


সিইসির এ বক্তব্যে অতিরঞ্জন কিছু নেই। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সফল হয়েছে, আবার রাজনৈতিক দলগুলোর অসহযোগিতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে সফল হতে পারেনি। সর্বশেষ ইসি নির্বাচনী আইন সংস্কারের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে, কিন্তু প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সংলাপে অংশ নেয়নি। তারা নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যে দল নির্বাচনে পরাজিত হয়, তারাই নির্বাচন কমিশন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর দোষ চাপায়। এই আত্মঘাতী রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে নির্বাচনী বিতর্কের অবসান হবে না। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, এরপর নতুন কমিশন গঠিত হবে। অতএব সংলাপে দুরভিসন্ধি না খুঁজে কীভাবে নতুন কমিশন গঠন করা যায়, সে ব্যাপারে সুচিন্তিত পরামর্শই কাম্য। সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হলে নির্বাচন কমিশনকেও হতে হবে এমন, যেন সব পক্ষ তার প্রতি আস্থা বোধ করে।
অন্যদিকে সরকারও যে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সব সময় সহযোগিতামূলক আচরণ করে আসছে, তা বলা যাবে না। ইসি একাধিকবার ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েও সফল হয়নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতার কারণে। মুখে শক্তিশালী ও স্বাধীন ইসির কথা বলা আর কাজে তার বিপরীতটি কাম্য নয়। ডিসিসির নির্বাচন না হওয়া সম্পর্কে সিইসির অভিযোগের কী জবাব দেবে সরকার? স্থানীয় হোক বা জাতীয় হোক, ইসি যেভাবে ও যখন চাইবে, তখনই সেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসিকে সহযোগিতা করা সরকারের কর্তব্য। সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়, যাতে ইসি বিব্রত হয় বা তাদের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়।
আমরা আশা করব, সরকার নির্বাচন কমিশনের কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করবে না। বিরোধী দলও কমিশনকে বৈরী ভাববে না। নির্বাচন কমিশনকে নিজের পক্ষে রাখার কিংবা বৈরী ভাবার মানসিকতা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সহায়ক নয়, টেকসই গণতন্ত্রের অনুকূলও নয়।

No comments

Powered by Blogger.