ফরিদপুরে রেলপথ সংস্কার -স্থানীয় প্রকল্পের জাতীয় গুরুত্ব

স্বাধীনতার চার দশকে যোগাযোগ খাতে প্রভূত উন্নতি ঘটেছে, তা নিয়ে দ্বিমত নেই। বিশেষ করে অভিন্ন সড়ক নেটওয়ার্ক প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদের জনগণের জন্যও যাতায়াত সুগম করে দিয়েছে। তবে সড়কপথ যতটা এগিয়েছে সে তুলনায় রেল ও নৌপথ অনেক পিছিয়ে কিংবা আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, যা ছিল তার তুলনায় পিছিয়ে গেছে।


অথচ এ পথ ব্যয় সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। সঙ্গত কারণেই রেল ও নৌপথের প্রতি মনোযোগ বাড়ানোর জনপ্রত্যাশা রয়েছে এবং বিশেষজ্ঞদের তরফেও দেওয়া হচ্ছে তাগিদ। সরকারের কাছেও সম্ভবত এ বার্তা কিছুটা হলেও পেঁৗছাতে শুরু করেছে। শুক্রবার সমকালে 'আবার রেলগাড়ি ফরিদপুরে' শিরোনামের খবরটিকে এ আলোকেই দেখা যেতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২২ বছর পর আবার ফরিদপুরে রেল পুনরুজ্জীবনের কাজ শুরু হয়েছে। রাজবাড়ী জেলার পাচুরিয়া থেকে ফরিদপুর শহর এবং শহর থেকে ভাঙ্গা উপজেলা পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার রেললাইন পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে এবং তা সম্পন্ন হতে এক বছরের মতো সময় প্রয়োজন হবে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এ পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই। এ রেলপথ সরকারের নীতির কারণেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এ নীতি ছিল রেলপথ এবং একই সঙ্গে নৌপথের গুরুত্ব হ্রাস করে সড়কপথকে প্রাধান্য দেওয়া। রেলওয়ে খাতের বিপুল অদক্ষতা এবং অব্যাহত লোকসানের মুখে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে সরকার দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া বিবেচনায় আনেনি। নজির হিসেবে ফরিদপুর জেলার রেলপথের কথাই বলা যেতে পারে। বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলায় রেলপথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ষাটের দশকে ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার তালমা পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছিল। পরে এ প্রকল্প পরিত্যক্ত হয়। অথচ পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হলে বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে রেলগাড়ি নিয়ে যেতে ফরিদপুর-তালমা রেলপথের বিকল্প নেই। নীতিনির্ধারকদের অদূরদর্শিতার কারণে রেলওয়ের আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এভাবে পরিত্যক্ত হয়। আমরা আশা করব, ফরিদপুর-রাজবাড়ী রেলপথ সংস্কারের উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় অন্যান্য জেলার জন্য গৃহীত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের কাজও শুরু হবে। এজন্য ইতিমধ্যেই চলি্লশটির বেশি প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন প্রয়োজন হচ্ছে পর্যাপ্ত আর্থিক বরাদ্দ প্রদান। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে মনে রাখতে হবে, কেবল নতুন লাইন বসালেই জনসাধারণ রেলগাড়িতে চাপতে আগ্রহ বোধ করবে না। এর অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে, রেলপথ ও রেলস্টেশন এবং ইঞ্জিন-বগি আধুনিক করার পাশাপাশি দক্ষতা বৃদ্ধি। রেলগাড়িকে হতে হবে যাত্রী ও মালামাল বহনের নিরাপদ বাহন এবং সময়সূচি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। আন্তঃনগর ট্রেনের পাশাপাশি লোকাল ট্রেনের প্রতি মনোযোগ বাড়াতে হবে। রেলওয়ে খাতের উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটও বিবেচনায় রাখা চাই। ট্রানজিট, কানেকটিভিটি, ট্রান্স এশীয় রেলপথ_ এসব এখন আর কেবল পুঁথিগত শব্দ নয়, দূরবর্তী বিষয়ও নয় বরং রীতিমতো বাস্তবের কাছাকাছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে রেলপথের জন্য নির্ধারিত রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ফরিদপুরে কিংবা দেশের অন্য কোনো জেলায় নতুন রেলপথ নির্মাণ কিংবা পুরনো পথের আধুনিকায়ন ও সংস্কার করার কাজেও এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখা চাই।
 

No comments

Powered by Blogger.