নৈতিকতা দিবস by আসিফ আহমেদ

প্রতি বছর ১ জানুয়ারি এথিকস ডে বা নৈতিকতা দিবস পালনের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। মিথ্যা কথা না বলা, অসৎ চিন্তা ও কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি আহ্বান থাকবে এ দিনে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে নৈতিকতা, সততা, সহিষ্ণুতা, মানবিক মূল্যবোধ, শিষ্টাচার, ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, অসাম্প্রদায়িক মনোভাব গড়ে তোলার জন্য থাকবে আন্তরিক চেষ্টা। এসব ভালো ভালো কথা। এমন পথে চলতে পারলে দেশ হিসেবে আরও


অনেক এগিয়ে যাওয়ার কথা বাংলাদেশের। কিন্তু বাস্তবে কি তা সম্ভব? তবে অসম্ভবকেও বাঙালি জাতি একাত্তরে সম্ভব করেছিল। তাদের কাছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজিত হয়েছিল। পাকিস্তানি শাসকরা বাঙালিদের চাকরিতে বড় পদে নিতে চাইত না, কারণ তারা দক্ষ নয়। তারা বাঙালিদের সেনাবাহিনীতে নিতে চাইত না, কারণ তারা যোদ্ধার জাতি নয়। কিন্তু একাত্তরে এই বাঙালিদের কাছেই তাদের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। যারা একাত্তরের দিনগুলো স্মরণ করতে পারেন, তারা বলবেন যে প্রবল শক্তিশালী পাক বাহিনী মুক্তিবাহিনীর নাম শুনলেই ভয়ে কাঁপতে থাকত।
এখন আমরা অবশ্যই পারি ন্যায়-নীতির ভিত্তিতে একটি সমাজ গড়ে তুলতে। এ জন্য অবশ্যই ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। নীতিকথা বললেই সবাই শুনবে, এমন নয়। তবে শিশু-কিশোররা অবশ্যই এর প্রতি গুরুত্ব দেবে। যদি সংগঠিত উদ্যোগ থাকে তবে স্কুলে শিক্ষা বছরের প্রথম দিনে সব ছাত্রছাত্রী সমবেত হয়ে সৎভাবে চলার শপথ নিতে পারে। কেউ বলতেই পারেন যে স্কুলের পাঠ্যবইয়ে বিষয়টি থাকে। শিক্ষকরাও সর্বদা ছাত্রছাত্রীদের সৎপথে চলার উপদেশ-পরামর্শ দেন। কেউ কখনও ক্লাসে বলেন না যে ছাত্ররা অন্যায় পথে চলতে থাক। এতেই মোক্ষলাভ। তারপরও কেন আবার একটি দিনকে ভালো কথা বলার জন্য চিহ্নিত করা? ছাত্রছাত্রীরা নতুন বই হাতে নিয়ে ক্লাসে আসে। যারা ভালো ফল করে, তাদের সবাই অভিনন্দন জানায় নতুন ক্লাসে। এমন দিনকে মাটি করার কোনো মানে আছে?
কিন্তু অন্যভাবেও আমরা দেখতে পারি। বছরের প্রথম দিনে সবার মনে বিশেষ আনন্দের অনুভূতি কমবেশি থাকেই। যদি প্রতিটি শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা তাদের শ্রেণীশিক্ষককে ফুল দেয়, প্রধান শিক্ষককে আরেকটি ফুলের তোড়া দেয় তো কেমন হয়? যদি সেরা পাঁচজন ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষকরা ফুল তুলে দেন কিংবা দেওয়া হয় অন্য কিছু উপহার_ যা হতে পারে বই কিংবা এ ধরনের শিক্ষা উপকরণ, তাহলে কতই না প্রেরণা হতে পারে সবার জন্য। এ দিন কিছু সময় নীতিকথা বলা যেতে পারে। ভালো ফল যারা করেছে, তাদেরও বলার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। অনেক বড় কিছু করে ফেলবে সবাই, এমন দাবি করার দরকার নেই। কিন্তু যা সবার আয়ত্তে এমন ছোট ছোট কাজ সবার জন্য চিহ্নিত করাই যায়। প্রত্যেকের জন্য কাজ নির্দিষ্ট হতে পারে তার উপযুক্ত করে। যে ভালো খেলে কিংবা ভালো গান করে কিংবা কবিতা লেখে তাকে সে ধরনের কিছু কাজ দিয়ে দেবেন শিক্ষকরা।
ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ভালো কাজে সংগঠিত হওয়ার কথাও বলা যায়। তারা অঙ্গীকার রক্ষা করছে কি-না সেটা বছরজুড়েই নজরে রাখা যায়। জুন-জুলাইয়ে হতে পারে পর্যালোচনা। তবে সবকিছুই নির্ভর করবে সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষা ও উদ্যোগের ওপর। ছাত্রছাত্রীরা সুপথে চললে সমাজেও তার প্রভাব পড়বে বৈকি। তারা ঘরে ঘরে নিয়ে যাবে এ বার্তা। সেখান থেকেও কিন্তু মিলতে পারে নতুন কিছু পরিকল্পনা। আসুন, সবাই মিলে এ দিনটিকে বিশেষ কিছু অর্জনের অঙ্গীকারে বেঁধে ফেলি।

No comments

Powered by Blogger.