জাপানে সুনামির ধাক্কা by দাউদ ইসলাম

০১১ সালের ১১ মার্চ। জাপানের উত্তর-পূর্ব উপকূলে আঘাত হানে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট সুনামির আঘাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। নিহত অথবা নিখোঁজ হয় প্রায় ২০ হাজার মানুষ।এই ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় টোকিওর ২২০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বের ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বিদ্যুৎ সরবরাহ ও শীতলীকরণব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।


একপর্যায়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে তেজস্ক্রিয়া ছড়াতে শুরু করে। ওই এলাকা থেকে সরিয়ে নিতে হয় প্রায় এক লাখ মানুষকে, যারা এখনো বাড়িঘরে ফিরতে পারেনি। সম্ভবত চেরনোবিলের পর এটাই বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ পরমাণু দুর্ঘটনা।
চুল্লির শীতলীকরণের ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। কেন্দ্রের চারপাশের ৩০ কিলোমিটার এলাকাকে বিপজ্জনক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
দুর্ঘটনার পর একপর্যায়ে শুধু পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকা নয়, টোকিওর বাতাসেও স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি তেজস্ক্রিয়া ধরা পড়ে।
ফুকুশিমা বিপর্যয়ের প্রভাব হয় সুদূরপ্রসারী। এই দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন দেশ তাদের পরমাণু বিদ্যুৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে। অনেক দেশই নিজস্ব পরমাণুনীতি পর্যালোচনা করতে শুরু করেছে। এসব কারণে বিশ্বে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যেতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পরিণতিতে ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৫ শতাংশ কমে যেতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে ফুকুশিমা বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ করতে এবং আশপাশের এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে ৪০ বছর সময় লেগে যেতে পারে। এর আগে ধারণা করা হয়েছিল, এ কাজে ৩০ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোপুরি বন্ধ করার ক্ষেত্রে কারিগরি দিক থেকে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পর্যায় হলো জ্বালানি অপসারণ করা। সরকার বলছে, ২৫ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এ কাজে এমন রোবট ব্যবহার করতে হবে, যা এখনো তৈরিই হয়নি। এরপর চুল্লিগুলো পুরোপুরি বন্ধ করতে আরও ৫ থেকে ১০ বছর লেগে যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.