গাভাস্কার-সৌরভের দুই মত

দুজনই সাবেক অধিনায়ক। দুজনের নেতৃত্বেই অস্ট্রেলিয়ায় খেলেছে ভারত। চলতি সিরিজে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন দুজনই। তবে সিরিজের সম্ভাব্য গতিপথ নিয়ে দুজনের ধারণা দুই রকম। সুনীল গাভাস্কার বলছেন, প্রথম টেস্টে এমন হারের পর অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম সিরিজ জয়ের স্বপ্ন আপাতত শেষ ভারতের। তবে সৌরভ গাঙ্গুলীর ধারণা, সিডনি থেকেই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াবে ভারত। দুই দেশের দুই গ্রেট গাভাস্কার ও অ্যালান বোর্ডারের নামেই ১৯৯৬ সাল থেকে ভারত-অস্ট্রেলিয়া


সিরিজের নাম বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি। গাভাস্কারের নেতৃত্বেই ১৯৮১ অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রথম টেস্টে হেরেও ৩ টেস্টের সিরিজ ড্র করে ফিরেছিল ভারত। এবার সিরিজ চার টেস্টের, ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ যথেষ্টই আছে। ব্যাটসম্যানদের টানা ব্যর্থতায় হতাশ গাভাস্কার তার পরও বলছেন সিরিজ জয়ের আশা ভুলে যেতে, ‘আমার ধারণা, ভারত এবার আর সিরিজ জিততে পারবে না। এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হলে আমি খুশিই হব, কিন্তু আমার মনে হয় না সেটা হবে। এক ইনিংসেও আমরা তিন শ ছুঁতে পারিনি, বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেট দারুণ ব্যাটিং-সহায়ক ছিল। ইংল্যান্ডেও আমরা মাত্র একবার তিন শ করতে পেরেছিলাম, অথচ আমাদের ব্যাটিং লাইনআপের রান ৩০-৪০ হাজার। সতর্কসংকেত কিন্তু জোরেশোরেই বাজছে!’
সৌরভ অবশ্য এমন কোনো সংকেত দেখতে বা শুনতে পাচ্ছেন না। গত ২৬ বছরে অস্ট্রেলিয়া থেকে সিরিজ ড্র করে ফেরা একমাত্র ভারতীয় দলের অধিনায়ক (২০০৩-০৪) ছিলেন তিনি। ভারতের সফলতম টেস্ট অধিনায়কের ধারণা, এবার ভালো কিছু নিয়ে ফিরবে ভারত। তাঁর এই দৃঢ় বিশ্বাসের ভিত্তি ইতিহাস, ‘মেলবোর্নের পারফরম্যান্সে ভারতীয়রা হতাশই হবে। বেশ কয়েকবার ভালো পজিশনে থেকেও সেটার সুবিধা নিতে পারেনি। তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, সিডনিতে দল অনেক ভালো করবে। ইতিহাস বলছে, বিদেশ সফরে ভারত প্রথম টেস্টটা ভালো করতে পারে না, দ্বিতীয় টেস্ট থেকেই ক্রমান্বয়ে উন্নতি করতে থাকে। এই সিরিজের এখনো অনেক বাকি।’
ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি সমালোচনা হচ্ছে মহেন্দ্র সিং ধোনির রক্ষণাত্মক অধিনায়কত্বেরও। সমালোচকদের একজন ওয়াসিম আকরাম। পেশাগত কারণে এখন ভারতের সঙ্গেই সংযোগটা বেশি সাবেক পাকিস্তান অধিনায়কের, চলতি সিরিজে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন তিনিও। মেলবোর্নে ধোনিকে যথেষ্ট সক্রিয় মনে হয়নি আকরামের, ‘এমসিজিতে ধোনির পরিকল্পনা আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। উইকেট থেকে বাউন্স-মুভমেন্ট পাওয়া যাচ্ছিল, অথচ ধোনি সারাক্ষণই ডিপ পয়েন্টে ফিল্ডার রেখে গেল থার্ডম্যান ফাঁকা রেখে। তা ছাড়া ম্যাচে ধোনি প্রায় কোনো কথাই বলেনি, বোলারদের সেভাবে উৎসাহ দেয়নি। আমার মতে, স্টাম্পের পেছনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা আর মাঝেমধ্যে জ্ঞানীর মতো দু-একটা পরামর্শ দেওয়া এখনো উপমহাদেশের সংস্কৃতি নয়।’
গাভাস্কার অবশ্য এককভাবে ধোনিকে দুষছেন না, ‘অধিনায়কেরা সব সময়ই অনেক চাপে থাকে, সে সময় সহ-অধিনায়ককে এগিয়ে আসতে হয়। আমার মনে হয় না ধোনি এই সহায়তা পাচ্ছে। আর আমার ধারণা, দলের সবাই নিজ নিজ বৃত্তে ঢুকে গেছে। এখানেই সতীর্থদের সঙ্গে ধোনির পারস্পরিক যোগাযোগটা বাড়াতে হবে।’
অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সিডনিতে চার পেসার নিয়ে নামবে অস্ট্রেলিয়া। তবে একাদশ সম্ভবত পাল্টাচ্ছে না। স্পিনার ছাড়া মাঠে নামতে অনিচ্ছুক কোচ মিকি আর্থার, ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি, তবে আমি স্পিনার ছাড়া কোনো টেস্টেই মাঠে নামতে চাই না। তা ছাড়া সিডনির উইকেট যতই গতিময় হোক, ইতিহাস বলে এখানে স্পিন ধরেই। পাঁচ দিন অনেক লম্বা সময়। শুধু প্রথম ইনিংস নয়, আমাদের তো দ্বিতীয় ইনিংসেও বোলিং করতে হবে।’ ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.