রাজধানীতে ভুয়া চিকিৎসক গ্রেপ্তার, সোয়া দুই বছরের কারাদণ্ড

চিকিৎসক হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা-দীক্ষা ছাড়াই অর্থোপেডিক ও স্নায়ুরোগের (নিউরোলজি) চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন দেবেশ সরকার (৩৩)। র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত গতকাল শনিবার ফকিরাপুলের একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্র থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে সোয়া দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। র‌্যাব সূত্র জানায়, গতকাল বেলা ১১টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এম আনোয়ার পাশার নেতৃত্বে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত নগরের ফকিরাপুলে ‘মডার্ন


ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ নামের একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে অভিযান চালান। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে ছিল র‌্যাব-৩-এর একটি দল। এ সময় সেখানে দেবেশ সরকার রোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র লিখছিলেন। তাঁকে তখন হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত দেবেশ সরকারকে গ্রেপ্তার করে এবং তাৎক্ষণিক সোয়া দুই বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ভুয়া চিকিৎসক দেবেশ সরকারকে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা দিতে না পারায় তাঁকে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আনোয়ার পাশা বলেন, ভুয়া চিকিৎসক দেবেশ সরকারকে রোগী দেখার সুযোগ করে দেওয়ায় রোগনির্ণয় কেন্দ্রটির কর্তৃপক্ষকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের মজিবুল্লাহ জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন।
আনোয়ার পাশা আরও বলেন, ভুয়া চিকিৎসক দেবেশ সরকার রোগীদের এক্স-রে ও প্যাথলজি পরীক্ষার জন্য ওই রোগনির্ণয় কেন্দ্রে পাঠাতেন। সেখান থেকেও তিনি এ বাবদ কমিশন পেতেন। তিনি ভারত থেকে ফিজিওথেরাপির ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণের একটি ফটোকপি করা সনদ দেখালেও তার মূল কপি দেখাতে পারেননি। ওই ফটোকপি এবং তাঁর নিজের হাতে পাঁচজন রোগীর জন্য লেখা চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র জব্দ করা হয়েছে।
দেবেশ সরকারের দাবি, তিনি ভারত থেকে ফিজিওথেরাপিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাঁর ব্যক্তিগত ছাপানো ভিজিটিং কার্ডে ‘ফিজিক্যাল থেরাপি রিহ্যাবিলিটেশন, বাতব্যথা, অর্থো-নিউরো, প্যারালাইসিস ও আর্থ্রাইটিস বিশেষজ্ঞ’ উল্লেখ করা হয়েছে।
আনোয়ার পাশা জানান, তাঁদের কাছে তথ্য রয়েছে যে, রাজধানীর অনেক নামকরা রোগনির্ণয় কেন্দ্র ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক নন এমন অনেক ব্যক্তি চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত পর্যায়ক্রমে ওই সব জায়গায় অভিযান পরিচালনা করবেন।
র‌্যাব-৩-এর মেজর এমারত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মেরুদণ্ডের ব্যথা নিয়ে এক পুলিশ সদস্য ফকিরাপুলের ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে ভুয়া চিকিৎসক দেবেশ তাঁকে অনেকগুলো ওষুধ দেওয়ায় তাঁর সন্দেহ হয়। এর পর ওই পুলিশ সদস্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি দেবেশের লেখা ওষুধ না খাওয়ার পরামর্শ দেন। ওই পুলিশ সদস্য ঘটনাটি র‌্যাবের কাছে বলেন। এর ভিত্তিতে গতকাল অভিযান চালানো হয়।
দেবেশ কয়েক মাস ধরে মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখে আসছিলেন। দেড় বছর আগে তিনি মালিবাগের মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও রোগী দেখতেন। তিনি ২৭ বিজয়নগরে থাকেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বিনাছড়িতে।

No comments

Powered by Blogger.