সাকিব আল হাসান লিখছেন প্রথম আলোয়-সুন্দরের স্বপ্ন দেখি

মানুষ সুন্দরের স্বপ্ন দেখে। আমিও দেখি। ২০১২ সালের প্রথম দিনে আমি দেখি সুন্দর একটা বছরের স্বপ্ন।
ক্রিকেটার হিসেবে বছরটা আমার জন্য সুন্দর হবে, যদি আমি ভালো খেলি। ২০১১ সাল টেস্ট ও ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে শেষ করতে পারাটা নতুন বছরে আমার জন্য বড় প্রেরণা হবে। গত বছর যা-ই করেছি, নতুন বছরে তার চেয়েও ভালো করতে চাই—২০১২ সালে এটাই লক্ষ্য আমার।


এ বছর কাউন্টি ক্রিকেটে না খেলারই ইচ্ছা। ঘরোয়া-আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ২০১২ সালে খেলা কম নেই। এখন প্রিমিয়ার লিগ খেলছি। এরপর বিপিএল, এশিয়া কাপ। এপ্রিলে পাকিস্তান সফর হতে পারে। আইপিএল আছে। বছরের শেষ দিকে জিম্বাবুয়ে সফর, ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলতে আসবে আমাদের দেশে। এত খেলার মধ্যে যদি আবার ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলতে যাই, আমার জন্য বেঁচে থাকাই কঠিন হবে। নিজেকে ঠিক রাখতে তো বিশ্রামও দরকার!
তবে আইপিএলে খুব ভালোভাবে খেলতে চাই। চেষ্টা থাকবে যত বেশি ম্যাচ খেলা। আর এটা হবে, যদি আমি ভালো পারফরম করি। যে ম্যাচেই সুযোগ পাব, আইপিএলে নিজের সেরা খেলাটা খেলতে চেষ্টা করব।
ভালো কিছুর স্বপ্ন শুধু নিজেকে নিয়েই দেখছি না। ব্যক্তির আগে দল বড়, আমিও চাই ২০১২ সালটা স্বপ্নের মতো কাটুক বাংলাদেশ দলের। পরবর্তী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আমরা খেলব মার্চে, দেশের মাটিতে অনুষ্ঠেয় এশিয়া কাপে। এরপর পাকিস্তান সফরের সম্ভাবনা আছে। এশিয়া কাপটা আমাদের জন্য কঠিন হবে। তার পরও আমি মনে করি, এই দুটোতে আমাদের খুব ভালো খেলা উচিত। জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ আছে। ওই দুই সিরিজেই জয়ের লক্ষ্য থাকা উচিত আমাদের।
মাঠের পারফরম্যান্স হিসাব করলে গত বছরটা আমাদের ভালোর চেয়ে খারাপই গেছে বেশি। কিছু কিছু ব্যর্থতায় সাফল্যগুলো হয়ে গেছে ম্লান। আগের বছরের ভুলগুলো শুধরে নিতে হবে এবার। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং—তিন বিভাগেই উন্নতির সুযোগ দেখছি আমি। সবাই ব্যাটিংয়ের উন্নতির কথা বেশি বললেও আমার মনে হয় ফিল্ডিং নিয়েও অনেক কাজ করার আছে। খুব সাদামাটা ফিল্ডিংয়ের দল হয়ে গেছে বাংলাদেশ। বোলারদের অনেক সাফল্য মার খেয়ে যাচ্ছে ফিল্ডিংয়ের ব্যর্থতায়। নতুন বছরে সুনির্দিষ্টভাবে এই দিকটার ওপর জোর দিতে হবে। বোলিং-ব্যাটিংয়ের সঙ্গে ভালো ফিল্ডিংয়ের ধারাবাহিকতা তৈরি না হলে ভালো কিছুর স্বপ্ন বৃথা যাবে।
উন্নতির সুযোগ আছে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও। গর্ব করে বলছি না, তবে এটা সত্যি, আমার আর তামিমের পারফরম্যান্সের অন্য রকম একটা প্রভাব পড়ে দলের মধ্যে। এ রকম ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স বাড়াতে হবে। তামিমের জন্য ২০১১-এর শেষটা ভালো হয়নি। আশা করব, নতুন বছরে নতুন করে শুরু করবে ও। মুশফিক ভাইয়ের পারফরম্যান্সও আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওনার ব্যাট প্রায়ই দলকে নির্ভরতা দিচ্ছে। নতুন বছরে এটা বাড়বে, আশা করি। আশা আছে, ২০১১-এর আবিষ্কার নাসির হোসেনকে নিয়েও। ভালো শুরু করেছে নাসির। এই ফর্ম যদি ধরে রাখতে পারে, দলের জন্য বিরাট প্রাপ্তি হবে। সঙ্গে যদি আরও এক-দুজন পারফরমার বাড়ে...। বোলারদের মধ্যে রুবেল, শফিউল ভালো বল করছে। সেটা ধরে রেখে নতুন বছরে নিজেদের ছাপিয়ে যেতে হবে তাদের। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের উন্নতি আসলে সবাইকেই করতে হবে। আমিও যেখানে আছি, সেখান থেকে আরও অনেক এগোতে চাই।
বছরের শুরুতে বিপিএল আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে নতুন দিনের সূচনা করবে। তবে এখানেই যেন সব শেষ হয়ে না যায়। এপ্রিলে পাকিস্তান সফরে যদি যাই-ও, এরপর লম্বা বিরতি পড়বে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। এই সময়টা যেন আমাদের বসে থাকতে না হয়। খেলোয়াড়েরা যেন খেলতে পারে। বিশেষ করে, জিম্বাবুয়ে-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের আগে আমাদের দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট বেশি খেলা জরুরি। আশা করি, নতুন বছরে আমাদের সেই সুযোগ করে দেবে বোর্ড।

No comments

Powered by Blogger.