ওসামা হত্যা by ইসরাত জাহান

ক্যালেন্ডারের পাতায় দিনটি ছিল রোববার। ১ মে রাত। হোয়াইট হাউস থেকে টেলিভিশনে প্রচারিত হলো প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এক নাটকীয় ঘোষণা: ‘অবশেষ ন্যায়বিচার হয়েছে। এই রাতে মার্কিন জনগণ ও বিশ্ববাসীকে আমি জানাচ্ছি যে যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালিত এক অভিযানে মারা গেছেন ওসামা বিন লাদেন।’ মুহূর্তেই বিশ্বজুড়ে তোলপাড়। লাদেন নিহত
স্থানীয় সময় দিবাগত রাত একটার পর কোনো এক সময়ে পাকিস্তানে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর মাত্র ৪০ মিনিটের এক


অভিযানে নিহত হন যুক্তরাষ্ট্রের ‘মোস্ট ওয়ানটেড’ ওসামা বিন লাদেন। লাদেনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করতেই হোয়াইট হাউস থেকে আসে ওবামার ঘোষণা। মার্কিন সেনাবাহিনীর বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দল নেভি সিলের সদস্যরা এ অভিযানে অংশ নেন। অভিযানটির সাংকেতিক নাম ছিল ‘অপারেশন নেপচুন স্পেয়ার’। পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ এলাকায় এর আগেই অত্যন্ত সংগোপনে মার্কিন গোয়েন্দারা শনাক্ত করেছিল লাদেনের অবস্থান। নিহত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গোপনে আরব সাগরের অজ্ঞাত স্থানে সমাহিত করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ১০ বছরের ত্রাস ওসামা বিন লাদেনের দেহ।

উত্থান
ওসামা বিন লাদেনের জন্ম ১৯৫৭ সালে সৌদি আরবের রিয়াদে। তাঁর বাবা মুহাম্মদ বিন লাদেন ছিলেন একজন ধনবান ব্যবসায়ী। ১৯৬৯ সালে তিনি যখন মারা যান, তখন মাত্র ১১ বছরের লাদেন পৈতৃক সূত্রে আট কোটি ডলার মূল্যের সম্পত্তির মালিক হন। তারপর জেদ্দায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। মেধাবী ওসামার সমাজতন্ত্রবিরোধী মনোভাব কাজে লাগাতে যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়। এরপর ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে আফগানিস্তানে সোভিয়েতবিরোধী লড়াইয়ে প্রথম তিনি যোদ্ধা হিসেবে অংশ নেন। ওই সময়ই তিনি আল-কায়েদা গঠন করেন।
পরে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে মনোভাব বদলান ওসামা। তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন, সারা বিশ্বে মুসলিমরা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সন্ত্রাসবাদের শিকার হচ্ছে। এরপর অভিযোগ আছে, নব্বইয়ের দশক থেকে তিনি আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মার্কিন স্থাপনায় হামলা চালাতে থাকেন। বিভিন্ন শিবিরে সারা বিশ্ব থেকে আসা জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন। মূলত ৯/১১ হামলার পরই তাঁকে ‘মোস্ট ওয়ানটেড’ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। ওই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে তিন হাজার মানুষ নিহত হয়। যুক্তরাষ্ট্র তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করে আড়াই কোটি ডলার।

No comments

Powered by Blogger.