কর্মশালায় অভিমত-পাটের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে নজর দেওয়ার তাগিদ

পাটপণ্য ব্যবহারে বাংলাদেশকে অভ্যন্তরীণ বাজারে নজর দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকার সুযোগ বা রপ্তানির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে গতকাল শনিবার ক্যাটালিস্ট আয়োজিত পাট ও বাংলাদেশের অর্থনীতিবিষয়ক এক কর্মশালায় বক্তারা এ তাগিদ দেন। কর্মশালায় বক্তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী দিন দিন পাটপণ্যের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। ফলে পাট খাতে রপ্তানি আয় বাড়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সুযোগটি কাজে লাগাতে
পারছে না বাংলাদেশ। এ ছাড়া পাটের অভ্যন্তরীণ বাজারটিও বেশ বড়, কিন্তু অবহেলিত। অভ্যন্তরীণ বাজার সবচেয়ে ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে ভারত। সে অনুযায়ী পাটপণ্য ব্যবহারে বাংলাদেশকেও ভারতের মতো অভ্যন্তরীণ বাজারের দিকে নজর দিতে হবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। কর্মশালায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পাটকল সংস্থার (বিজেএমসি) চেয়ারম্যান টি ডি মিত্র, বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) সভাপতি মোহাম্মদ শামস উজ জোহা এবং বাংলাদেশ পাটকল সমিতির (বিজেএমএ) সভাপতি নজরুল হক। ক্যাটালিস্টের শাহরোজ জলিল কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন।
কর্মশালায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) দুটি আলাদা সমীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। প্রতিবেদনগুলো উপস্থাপন করেন যথাক্রমে সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও বুয়েটের শিক্ষক নূর আল কুদ্দুস। কর্মশালায় সঞ্চালক ছিলেন সাংবাদিক জাহিদুজ্জামান ফারুক।
সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পলিপ্রপাইলিনের (পিপি) সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে পাটকে টিকে থাকতে হচ্ছে। তবে আশার কথা যে বিশ্বব্যাপী পিপির ব্যবহার কমছে। আর এ সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে ভারত, চীন ও পাকিস্তান। নিজেদের প্রতিযোগিতাশীল করে তুলেছে তারা। কিন্তু ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। রপ্তানি অনেক বাড়ানো দূরে থাক, অভ্যন্তরীণ বাজারটিরই যথাযথ ব্যবহার করতে পারছে না এই দেশ।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০১০ সালে পাস হওয়া বাধ্যতামূলক পাটের ব্যাগ ব্যবহার আইনটি বাস্তবায়ন করা গেলেও বছরে দেশে ৮৪ কোটি পিস পাটের ব্যাগের দরকার হবে। আর একেকটি ব্যাগ তিনবার ব্যবহার করলেও চাহিদা দাঁড়ায় ২৮ কোটি পিস। অথচ বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে মাত্র ৯০ হাজার পিস। অর্থাৎ পুরো সম্ভাবনাই পড়ে রয়েছে, কিন্তু কাজে লাগানো হচ্ছে না।
পাটনীতি প্রণয়ন ও পাট খাতের জন্য গতিশীল নেতৃত্ব তৈরি করা এবং ছোটখাটো পরিবর্তন এনে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, ভারতের সাম্প্রতিক শুল্কমুক্ত রপ্তানি ঘোষণার সুযোগ গ্রহণ, মজুরি বাড়িয়ে হলেও কারখানায় দক্ষ শ্রমিকদের ধরে রাখা, নারীদের জন্য কাজ করার সুযোগ তৈরি করা, পাট খাতের প্রতি ব্যাংকগুলোর নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং পাট খাতে নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা শ্রেণী গড়ে ওঠার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয় প্রতিবেদন দুটিতে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘আমাদের জমি কম, কিন্তু উৎপাদন বাড়াতে হবে।’ প্রতিবেদনে পাটের কৃষি অংশটি বাদ পড়েছে বলে সমালোচনা করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘১৪০ বছর আগে থেকে পাটশিল্পে বিশ্বনেতৃত্বের ভূমিকায় থেকেও আজ আমরা পিছিয়ে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পণ্যের বহুমুখিনতা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করতে না পারায় এমনটি হয়েছে।’
বিশ্ববাজারে পাটপণ্যের শেয়ার ততটা না বাড়ার কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী অন্তত বর্তমান অবস্থান ধরে রাখার বিষয়ে তাগিদ দেন। একই সঙ্গে কৃষি ও শিল্পের সঙ্গে জড়িত বলে অর্থনীতিতে পাট বড় অবদান রাখতে পারে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী জানান, বাধ্যতামূলক পাটের ব্যাগ ব্যবহার আইনটি পাস করা হলেও তা প্রয়োগ করতে পারছেন না তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে দেখি আমি নিঃসঙ্গ, কেউ সহযোগিতা করছে না।’ তবে খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করেছে বলে স্বীকার করেন তিনি। শিল্প মন্ত্রণালয়ের ভূমিকার ব্যাপারে বলতে গিয়েও থেমে যান তিনি।
বিজেএমসির চেয়ারম্যান টি ডি মিত্র বলেন, বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থারই (বিসিআইসি) বছরে ছয় কোটি ব্যাগ দরকার। কিন্তু তা ব্যবহার করছে না তারা। বাধ্যতামূলক পাটের ব্যাগ ব্যবহারের আইন কার্যকরের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বিজেএসএর সভাপতি শামস উজ জোহা বলেন, পাটকে কৃষিভিত্তিক শিল্প ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে কৃষিভিত্তিক হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয় না।

No comments

Powered by Blogger.