মিয়ানমারে দিনবদলের হাওয়া by মাহবুব আলম

রিবর্তনের হাওয়া এসে লেগেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে। গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী সু চি বছরের পর বছর আটক ছিলেন যে মিয়ানমারে সেখানে এখন তিনি বিনা বাধায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সভা-সমাবেশ করছেন। কথা বলছেন বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে। কয়েক মাস আগেও এ দৃশ্য কল্পনা করা যেত না। মিয়ানমারের এই বদলে যাওয়ার প্রক্রিয়ার শুরু মূলত ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর সু চির মুক্তির পর থেকে।


গত এক বছরে সরকার এবং সু চি উভয় পক্ষ থেকেই সম্পর্ক উন্নয়নের যথেষ্ট চেষ্টা হয়েছে। সরকারকে সহযোগিতা করার ব্যাপারে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন সু চি। গত জানুয়ারি মাসে সু চির বাসায় ইন্টারনেটের সংযোগ দেয় সরকার। বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ পান সু চি। এরপর গেল অক্টোবরে সরকার দুই শতাধিক রাজবন্দীকে মুক্তি দেয়। সরকারের তরফ থেকে আরও রাজবন্দীকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণাও এসেছে। এ ছাড়া সরকার দেশটির উত্তর এলাকার উপজাতীয় কাচিন বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ করতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে।
তবে সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে গত নভেম্বরের শুরুতে। দেশটির প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন রাজনৈতিক দল-সম্পর্কিত আইনের সংশোধন অনুমোদন দেন। এতে কারাবন্দীরা রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবেন না—এমন বিতর্কিত শর্তটিও বাদ দেওয়া হয়।
পরিবর্তিত এই রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে সু চির দল এনএলডি রাজনীতিতে ফেরার ঘোষণা দিয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে এরই মধ্যে তারা নিবন্ধন করেছে। দেশটির পার্লামেন্টের দুই কক্ষ মিলিয়ে বর্তমানে ৪০টির বেশি আসন শূন্য। ওই সব আসনে উপনির্বাচনে অংশ নিতে সম্মত হয়েছেন সু চি।
এতে দীর্ঘ ২১ বছরের মধ্যে মিয়ানমারে প্রথম কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন সু চি। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে তাঁর দল এনএলডি জয়ী হলেও সামরিক জান্তা দলটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। এরপর গত দুই দশকের বেশির ভাগ সময় সু চিকে গৃহবন্দী, কখনো কারাবন্দী করে রাখা হয়।
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফকে সু চি বলেন, ‘মিয়ানমারে পরিবর্তন শুরু হয়েছে...আমরা সেই মিছিলে শামিল হয়েছি।’
পরিবর্তনের হাওয়া দেখে গত ৩০ নভেম্বর থেকে মিয়ানমার সফর শুরু করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। ৫০ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারে যান। হিলারির সঙ্গে বৈঠকে সু চি বলেন, তাঁর দেশ গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতে পারবে বলে তিনি আশাবাদী। তবে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে আরও কাজ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সু চি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি মিয়ানমারের জন্য ১২ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তারও প্রস্তাব দেন।
মিয়ানমারের পরিবর্তনের এই অগ্রগতিতে খুশি আঞ্চলিক জোট আসিয়ানও। গত ১৭ নভেম্বর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে সংস্থার ১৯তম শীর্ষ সম্মেলনে মিয়ানমারকে ২০১৪ সালের আসিয়ান চেয়ারম্যানের পদ দিতে সম্মত হন জোট নেতারা। এ ব্যাপারে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারতি নাতালিগাওয়া বলেন, সম্মেলনে যোগ দেওয়া বিভিন্ন দেশের নেতারা এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে মিয়ানমারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ও উন্নয়ন হয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে মিয়ানমার এখন আসিয়ানের চেয়ারম্যান হওয়ার মতো দায়িত্ব নিতে সক্ষম।

No comments

Powered by Blogger.