গোপালগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-সারা দেশে রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ, সময় একটু লাগবেই by সুব্রত সাহা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সারা দেশে রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগের সাত বছর কোনো রাস্তা মেরামত করা হয়নি। শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার বিকেল চারটায় গোপালগঞ্জ শহরের শেখ কামাল স্টেডিয়ামে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এসে এসব রাস্তা মেরামতের জন্য চৌদ্দ শ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছি। সময় একটু লাগবেই। রাতারাতি সব হয় না।


আমরা পুল, ব্রিজ সব নির্মাণ করব।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ৪৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরু করেছি। ২৪টি কেন্দ্রের কাজ শেষ হয়েছে। অন্যগুলোর কাজ চলছে। তিন বছরের মধ্যে দুই হাজার ৯৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারের তিন বছরে সাড়ে চার লাখ সরকারি চাকরি দিয়েছি। বেসরকারি খাতে আরও কয়েক লাখ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সারা দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকারখানা গড়ে তোলার মাধ্যমে শিল্প উন্নয়ন ও নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের ভোটের অধিকার ও নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাঁচাতে চেয়েছিলেন। পারেননি। খালেদা জিয়া এখন যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য আন্দোলন করছেন। কিন্তু এই বিচার এ দেশের মাটিতেই হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাজা মিয়া জনসভায় সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর দাদির নামে ‘শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল’, মায়ের নামে ‘বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল’ এবং গোপালগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বেলা সোয়া ১১টায় হেলিকপ্টারে করে টুঙ্গিপাড়ায় আসেন। তিনি প্রথমে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের পাবলিক প্লাজায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উদ্যোগে রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধের পাবলিক প্লাজায় ঢাকায় গোপালগঞ্জ সমিতি আয়োজিত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এই সরকারের উদ্দেশ্য হলো সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়া। সময়মতো পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণ ও সময়মতো ফল প্রকাশ করা। খ্রিষ্টীয় নববর্ষের দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে যাবে। তারা নতুন বইয়ের উৎসব করবে। তিনি বলেন, বিএনপির আমলে বই বিতরণ নিয়ে অনেক সমস্যা হয়েছিল। মাসের পর মাস চলে গেছে, ছেলেমেয়েদের হাতে সময়মতো বই পৌঁছায়নি। তিনি বলেন, লেখাপড়ার মান বাড়াতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে দুটি পাবলিক পরীক্ষা চালু করা হয়েছে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি শেখ কবির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের হাতে ল্যাপটপ কম্পিউটার ‘দোয়েল’ তুলে দেন। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান, আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
নির্মল সেনকে পাঁচ লাখ টাকার চেক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবীণ সাংবাদিক নির্মল সেনের চিকিৎসার জন্য পাঁচ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেছেন। গতকাল গোপালগঞ্জে কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে নির্মল সেনের কাছে এই চেক হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী।
অকৃতদার নির্মল সেন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছেন। তিনি কোটালীপাড়ায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে বাস করছেন।

No comments

Powered by Blogger.