দিনবদল-কল্পনাতেই রয়ে গেল

র্ষণীয় গণ-আস্থা সম্বল করে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে গত সাধারণ নির্বাচনের পর। বিশাল এই সমর্থনের পেছনে ছিল তাদের দিনবদলের প্রতিশ্রুতি এবং সাধারণ মানুষের আস্থা। সরকারের বয়স তিন বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে চলতি সপ্তাহে। সংগত কারণেই মানুষ এখন হিসাব কষতে শুরু করেছে, তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে বর্তমান সরকার কতটা সক্ষম হয়েছে। আর ব্যর্থতার পরিমাণও-বা কী? মানুষ এই পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে উলি্লখিত


প্রতিশ্রুতিগুলো আর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের হিসাব পাশাপাশি রেখে মূল্যায়ন করছে। সরকার ক্ষমতায় আসার সময় যে অর্থনৈতিক অবস্থা পেয়েছে, সেই তুলনায় এখনকার অবস্থা কেমন, তাই সবার আগে বিচার্য। অর্থনৈতিক চাপের মধ্যেই সরকারের পরিবর্তন হয়েছে এ দেশে। এরই মধ্যে উন্নত বিশ্বসহ দুনিয়াব্যাপী যে মন্দার সৃষ্টি হয়েছে তাকেও মোকাবিলা করতে হয়েছে সরকারকে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব এ দেশেও পড়েছে। তবে এটা স্বীকার করতে হবে, বিশ্বমন্দার কারণে বাংলাদেশের মতো ছোট দেশে যতটা ধস নামার আশঙ্কা করা হচ্ছিল, বাস্তবে কিন্তু তেমনটা ঘটেনি। কিন্তু মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে যে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা সহজে মেনে নিতে পারছে না মানুষ। অর্থনৈতিক অবস্থা যে কেমন তা সরকারের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে না_এমন সন্দেহ অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই সোজা-সরল ইঙ্গিতই বলে দেয় বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়। দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়েনি, কাঙ্ক্ষিতভাবে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন সম্ভব হয়নি। দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে লক্ষণীয়ভাবে।
শেয়ারবাজারে অস্থিতিশীলতা সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছে, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিধানে সরকারের ব্যর্থতা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, দলীয়করণের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রয়েছে, দুর্নীতির ক্রমিকে ইতিবাচক যেটুকু হয়েছে তাকেও অনুল্লেখ্যই বলতে হবে। যোগাযোগব্যবস্থায় নেতিবাচক ফল স্পষ্ট, স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন যতটা হয়েছে তার চেয়ে বেশি হয়েছে স্বজনপ্রীতি। সরকারের সবচেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি ভিশন টোয়েন্টি ওয়ান এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া। এর কোনোটাই সফল হয়নি।
তবে একবারে অর্জন নেই; এমনটা বলা ঠিক হবে না। এই সরকার বিদ্যুতের পুরো চাহিদা পূরণ করতে না পারলেও লোডশেডিংয়ের অসহনীয় অত্যাচার থেকে রক্ষা করেছে। শিক্ষা খাতে ব্যাপক উন্নয়ন সরকারের সাফল্য তালিকা সমৃদ্ধ করেছে। ইতিপূর্বে যেখানে ফেব্রুয়ারি মাসেও শিক্ষার্থীর হাতে বই যেত না, এখন সেটা বছরের পহেলা দিবসেই চলে যাচ্ছে। পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের ক্ষেত্রেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। জেএসসি ও প্রাইমারি সমাপনী পরীক্ষা প্রচলন এবং পরীক্ষার ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে ডিভিশনের পরিবর্তে গ্রেড নির্ধারণ বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। সরকারের হাতে আরো দুই বছর সময় আছে। এখন ব্যর্থতাগুলোকে চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.