প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির অমিল by রথীন্দ্র নাথ রায়

ক্রিকেটের ধ্রুপদী সংস্করণ কোনটা? এক কথায় টেস্ট ক্রিকেট। কেবল ব্যাপ্তির কারণে নয়_ গভীরতা, বৈচিত্র্য এবং ইতিহাসের কারণেই এটা শ্রেষ্ঠ। কোনো দেশের দক্ষতা বিচারের জন্য সেরা মানদণ্ড টেস্ট ক্রিকেট। যদি তাই হয় তাহলে ক্রিকেটে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়? পারফরম্যান্স বিচারে অবশ্যই তলানির দিকে।বাংলাদেশের টেস্ট অভিষেক হয়েছে ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর। প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। যে দলের নেতৃত্বে ছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী।


তখন স্বাগতিক দলের অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়। অভিষেক টেস্টে আমিনুল ইসলাম বুলবুল অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করেছিলেন। অভিষেক টেস্টের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি লিখেছিলেন, 'টেস্ট কী জিনিস, সেটাও জানতাম না। শুধু জানতাম, এটি পাঁচ দিনের খেলা। বোলাররা যত ইচ্ছা বল করতে পারে। ভারতের পেসার তখন জাভাগাল শ্রীনাথ আর আগারকার। কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। তখনই আমাদের শ্রদ্ধেয় কোচ এডি বার্লো সাহস জোগালেন। তিনি নিজেই তখন হুইল চেয়ারে বসে থাকেন। বললেন, তোমার মধ্যে টেস্ট খেলার যোগ্যতা এবং সাহস দুটিই আছে। সত্যি বলছি, সেদিন সেঞ্চুরি করার পর বার্লোর মুখটিই বারবার ভেসে আসছিল। তবে অনভিজ্ঞতার জন্যই দ্বিতীয় ইনিংসে ভরাডুবি হয়। যা হোক সেদিনের পর সবাই বলেছিল, তোমরা অনেক দূর এগোবে। কিন্তু ১১ বছরে ৭১ টেস্ট খেলে তিনটি জয়ের পরিসংখ্যানই বলে দেয়, আমরা সেভাবে এগোতে পারিনি। এখনও জিম্বাবুয়ে আর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েই খুশি আছি।'
একেবারেই সত্যি কথা। ৬১ টেস্ট হেরেছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও আহামরি কিছু নয়। সদ্য সমাপ্ত টেস্ট সিরিজে তারা হেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। যদিও দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভালো অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। বৃষ্টি না হলে চট্টগ্রাম টেস্টের ফল বাংলাদেশের পক্ষেও যেতে পারত। যায়নি। তবে মুশফিকদের দলীয় পারফরম্যান্স ছিল ইতিবাচক, যা পরের টেস্টেই মুছে যায়। মিরপুরে সিরিজের শেষ টেস্টে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ের সময় তাদের যে মনোভাব ফুটে উঠেছিল তা টেস্ট খেলার মেজাজের সঙ্গে যায় না। জঘন্য খেলে আউট হন সাকিব ও তামিম। ব্যর্থ হন বাংলাদেশের বোলাররাও। ফলে ১-০তে সিরিজ হারে বাংলাদেশ। চলতি বছরে এই পরাজয় তবু ছিল বাংলাদেশের চেয়ে অধিক শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। কিন্তু জিম্বাবুয়ে সফরে একমাত্র টেস্ট পরাজয়ের কী ব্যাখ্যা। আসলে কোনো ব্যাখ্যাই দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ পাঁচ বছর পর টেস্ট অঙ্গনে ফেরা জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সফরকারী বাংলাদেশ ভালো করবে, এটাই ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু সাকিব-তামিমরা বুঝতে পারেননি টেস্ট ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের জন্য কী কঠিন প্রস্তুতি নিয়েছে জিম্বাবুয়ে। ফলও হাতে হাতেই পেয়েছে তারা। একমাত্র টেস্টে বাংলাদেশকে হারিয়ে প্রত্যাবর্তনকে সার্থক করেছে স্বাগতিকরা। মাথা নিচু করে দেশে ফেরে বাংলাদেশ দল। সফরে ব্যর্থতা এবং আরও কিছু কারণে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় সাকিব ও তামিমকে। নতুন অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হয় মুশফিকুর রহিমের। যিনি শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বৃষ্টির কারণে দুই ইনিংসই ডিক্লেয়ার করেন। কিন্তু বছর শেষে দেখা যায় ৩টি টেস্ট খেলে দুটিতে হেরেছে বাংলাদেশ। একটি ড্র।
পারফরম্যান্সে স্পষ্ট, টেস্ট দল হিসেবে এখনও দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। তাই মাঝে মধ্যে বিচ্ছিন্ন দু'একটা জয় পেলেও ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলতে পারে না তারা। যদিও ২০০৯ সালে সাকিবের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট সিরিজে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। অবশ্য সেটা ছিল খর্ব শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবু জয় তো। তারও আগে মুলতান টেস্টে জয় পেতে পেতেও পায়নি বাংলাদেশ। এসব টুকরো সাফল্য ছাড়া বলার মতো কিছু নেই। অবশ্য ব্যক্তিগত পারফরমারের জন্ম দিয়েছে তারা। উঠে এসেছেন সাকিব-তামিম-মাশরাফির মতো ক্রিকেটার। কিন্তু ব্যক্তিগত পারফর্ম দিয়ে তো আর টেস্ট ক্রিকেট হয় না। তাই বাংলাদেশও সমীহ জাগাতে পারেনি। পাঁচ দিনের ম্যাচ তাই চার দিন না যেতেই শেষ হয়ে যায়।

No comments

Powered by Blogger.