নবজাতকের চিকিৎসা-নিশ্চিত করতে হবে দ্রুততম সময়ে

হাসপাতালের বিশেষায়িত ও সংরক্ষিত কক্ষের রোগীদের প্রতি অধিকতর নজর দিতে হয় চিকিৎসাকেন্দ্রকে। বিশেষ করে রোগী যদি হয় শিশু, তাহলে সেখানে যত্নে ত্রুটি থাকার কোনো সুযোগ নেই। পরিবেশও থাকতে হয় চিকিৎসার অনুকূলে। কিন্তু কালের কণ্ঠের একটি প্রতিবেদনে হাসপাতালগুলোর শিশু চিকিৎসাক্ষেত্রে দুরবস্থার যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তাকে হতাশাজনক বলতে হবে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চিকিৎসায় অবহেলা। রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ, শিশু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বেশ কিছু হাসপাতালের তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে সেই প্রতিবেদনে। একটি হাসপাতালকেও শিশু চিকিৎসার জন্য যুগের উপযোগী বলার সুযোগ নেই।


কিন্তু যখন রোগ হয়, তখন শিশুর মা-বাবার সামনে কোনো পথ খোলা থাকে না। এই হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে ঘুরে বেড়াতে হয় মা-বাবাকে। তাঁরা বাধ্য হন সরকারি হাসপাতাল থেকে শিশুরোগী, বিশেষ করে নবজাতকদের সরিয়ে নিতে। বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানোর মতো সাধ্য থাকে না অধিকাংশ রোগীর। ফলে অনেক সময়ই নবজাতকের মৃত্যু পর্যন্ত হয় চিকিৎসার অভাবে। এসব হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতাকেও হার মানিয়ে দেয় অনেক সরকারি হাসপাতালের অপর্যাপ্ত বেডসংখ্যা। শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় প্রতিষ্ঠানে নবজাতকদের জন্য মাত্র ১৫টি বেডের ব্যবস্থা আছে। সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের যদি এই চিত্র হয়, তাহলে বাকি সরকারি হাসপাতালগুলোর অবস্থা কী হতে পারে! মিটফোর্ড হাসপাতালে একটি বেডে কখনো কখনো তিনজনকেও রাখতে হয় বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই স্বীকার করেছে। ঢাকার শিশু হাসপাতালের মোট বেডসংখ্যা ৫৫০ হলেও সেখানে নবজাতক ওয়ার্ডে মাত্র ৩০টি বেড রয়েছে। এনসিওগুলোতে যন্ত্রপাতির কথাও চলে আসে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব থাকার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নবজাতকদের চিকিৎসাসেবায় ব্যাঘাত ঘটে। মিটফোর্ড হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠানে বাচ্চাদের শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাজির হলে তাদের জন্য ভেনটিলেটর-সুবিধা প্রদান করা যায় না। শিশু হাসপাতালের মতো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে যেখানে এনআইসিইউতে ৫৫টি আসন থাকার কথা, কিন্তু সেখানে আছে মাত্র ৩০টি। ওখানে ইনকিউবেটর আছে আটটি, যার মধ্যে আবার দুটিই রয়েছে অকেজো হয়ে। এই দুরবস্থাগুলো থেকে রোগীদের রক্ষা করার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না_এটা সত্যি দুঃখজনক। তবে হাসপাতালের আধুনিকায়নের দিকে নজর না দেওয়ার পেছনের কারণ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তাকে অবশ্যই অস্বাভাবিক এবং দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করতে হবে। একটি হাসপাতালের প্রধান নির্বাহীর নিজস্ব ক্লিনিকে যাতে রোগী বেশি যায়, সে কারণেই নাকি সরকারি হাসপাতালটির প্রতি তাঁর নজর কম। এমন অভিযোগ সত্য হলে এর জন্য ওই পরিচালকের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নবজাতকদের চিকিৎসাসুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারের আরো দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.