৯ দিন পর আজ লেনদেন শুরু

টানা ৯ দিন বন্ধ থাকার পর আজ থেকে দেশের উভয় শেয়ারবাজারে আবারও লেনদেন শুরু হচ্ছে। সর্বশেষ ৩ নভেম্বর ডিএসইতে গত ৩৪ মাসেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হওয়ায় কিছুটা হলেও উদ্বিগ্ন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তবে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট ও বিশ্লেষকরা বলছেন, ঈদের আগে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি কম থাকায় ওই লেনদেন ছিল স্বাভাবিক। ঈদের ছুটি শেষে সব বিনিয়োগকারী না ফেরায় চলতি সপ্তাহেও খুব বেশি লেনদেন বাড়ার সম্ভাবনা নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে লেনদেন না বাড়লে তা নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। আগামী সপ্তাহ থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


এদিকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সীমিত আকারে হলেও বিনিয়োগ শুরু করেছে বলে শেয়ারবাজার সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, ঈদকেন্দ্রিক গ্রাহকদের নগদ অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলো বেশি বিনিয়োগ করেনি। বাজারের বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারদর অনেক কম থাকায় সেসব শেয়ার কেনায় ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ বাড়াতে পারে। সেক্ষেত্রে লেনদেন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকবে।
সর্বশেষ তিনদিনের লেনদেন বিশ্লেষণ করে বাজার বিশ্লেষকরা কিছুটা আশাবাদী। তারা জানান, ১ থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকার শেয়ারবাজারের বেশির ভাগ শেয়ারের দর বেড়েছে। ফলে সাধারণ সূচকও বেড়েছে ১৭২ পয়েন্টের বেশি। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় থেকে কিছু পরিমাণ বিনিয়োগ এসেছে। একই সঙ্গে বাজার সূচক ও তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির শেয়ারদর গত এক বছরের প্রায় সর্বনিম্নে অবস্থান করায় তা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বিনিয়োগ বাড়াতে উৎসাহী করবে।
তবে ডিএসইর সর্বশেষ লেনদেন সপ্তাহের হিসাবে সাধারণ সূচক কমেছে প্রায় ১০০ পয়েন্ট। এ নিয়ে টানা পঞ্চম সপ্তাহে বেশির ভাগ শেয়ারদর ও সূচক কমেছে। লেনদেন হওয়া ২৬৪টি কোম্পানির শেয়ার ও অন্যান্য সিকিউরিটিজের মধ্যে মাত্র ৪২টির দর বেড়েছিল, কমেছিল ২১৯টির এবং অপরিবর্তিত ছিল তিনটি। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে ১ হাজার ৩৫২ কোটি টাকার শেয়ার ও অন্যান্য সিকিউরিটিজ কেনাবেচা হয়। দৈনিক গড় লেনদেন ৩৪ দশমিক ৮০ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ২৭০ কোটি ৪১ লাখ টাকায়। এর আগের সপ্তাহের দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪১৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
অন্যদিকে দেশের অপর শেয়ারবাজার সিএসইতে ছিল কিছুটা বিপরীত অবস্থা। লেনদেন হওয়া ১৯৮টি কোম্পানির শেয়ার ও অন্যান্য সিকিউরিটিজের মধ্যে ১০৫টির দর বেড়েছিল, কমেছিল ৯১টির এবং অপরিবর্তিত ছিল দুটি। নির্বাচিত খাত সূচক ১৩৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৩০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে ১৫২ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার ও অন্যান্য সিকিউরিটিজ কেনাবেচা হয়।
ডিএসইর সার্বিক লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কেবল জ্বালানি খাতের বেশির ভাগ শেয়ারের দর আগের সপ্তাহের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। এক্ষেত্রে কিছুটা মিশ্র অবস্থায় ছিল ব্যাংকিং ও মিউচুয়াল ফান্ড খাত। অন্য সব খাতের প্রায় সব শেয়ারের দরই কমেছে। ব্যাংক খাতের ৩০টি কোম্পানির মধ্যে ১৭টির দর কমলেও বেড়েছে ১৩টির। মিউচুয়াল ফান্ড খাতের ৩৭টির মধ্যে ১৭টির দর বেড়েছে। জ্বালানি খাতের ১৩টির মধ্যে আটটির দর বেড়েছিল। অন্য খাতের প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারদর কমেছিল।
শেয়ারদর কমার পাশাপাশি সব খাতের লেনদেনও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছিল। তারপরও খাতওয়ারি লেনদেনের দিক থেকে গত সপ্তাহে ব্যাংক খাতে সর্বাধিক ৪৫২ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়, যা মোট লেনদেনের ৩৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে জ্বালানি ও শক্তি খাতে ১৩৬ কোটি, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ১০৬ কোটি, বিবিধ খাতে ৯১ কোটি, বস্ত্র খাতে ৮৮ কোটি, প্রকৌশল খাতে ৮৮ কোটি, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাতে ৭৪ কোটি, বীমা খাতে ৬৫ কোটি টাকা, সিমেন্ট খাতে ৫৭ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়।

No comments

Powered by Blogger.