রেকর্ড গড়লেন নাবিলা by ইমদাদ হক

পারিবারিকভাবে ছোট্টবেলায় পড়ালেখায় হাতেখড়ি। বাবা মোঃ আবুল হোসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক। মা পারভীন আখতার গৃহিণী। বাবার নির্দেশনা আর মায়ের যত্ন বুঝিয়ে দিয়েছিল পড়ালেখায় ভালো করতে হবে। তখন থেকেই পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী। খেলাধুলাও সঙ্গে ছিল। ছিল দুরন্তপনার শৈশব। সুযোগ পেলেই বন্ধুদের সঙ্গে গান-বাজনা। তবে ক্লাসে প্রথম হওয়ার ব্যাপারে প্রথম থেকেই জেদি। এ ছাড়া চশমা চোখে আব্বুর পড়ানো আকর্ষণ করত। আদর্শ শিক্ষক হিসেবে সমাজে তার গ্রহণযোগ্যতা অনুপ্রাণিত করত। তাই ছোট্টবেলায়ই শিক্ষক হওয়ার বাসনা মনে চেপে বসে।


বলছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের কৃতী শিক্ষার্থী নাবিলা নুজহাত তন্বী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে অর্থনীতি বিভাগে রেকর্ডসংখ্যক সিজিপিএ পেয়ে তিনি উত্তীর্ণ হন। অনার্স ও মাস্টার্স উভয় পরীক্ষাতেই তিনি ৩.৯৫ সিজিপিএ অর্জন করেন। এর আগে কোনো শিক্ষার্থী নান্দনিক এ ফল অর্জন করতে পারেননি। একজন নারী শিক্ষার্থী হিসেবে এ কৃতিত্ব
প্রশংসনীয়। স্বীকৃতিস্বরূপ সম্প্রতি একই বিভাগে যোগ দিয়েছেন শিক্ষক হিসেবে।
বাবার চাকরির সুবাদে জাহাঙ্গীরগর বিশ্ববিদ্যালয়েই বেড়ে ওঠা। পড়াশোনার হাতেখড়ি বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজে। পরিবেশটা শিক্ষাবান্ধব। শিক্ষার প্রতি অনুরাগ সেই থেকেই। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে কৃতিত্বপূর্ণ ফলের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি। এর মাঝে বাবার পিএইচডির সময় বছরখানেক ইংল্যান্ডে থাকা। পরিবেশ ও সৃষ্টিশীল কাজের সুযোগই নাবিলাকে শিক্ষকতার প্রতি আকৃষ্ট করে।
নাবিলা বলেন, 'বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী শিক্ষা ও নারীদের উন্নতির জন্য উদ্যোগী ভূমিকা দরকার। পুরুষশাসিত সমাজের সে উদ্যোগ এখনও সম্পূর্ণ নয়। তাই পিছিয়ে পড়া নারীদের উন্নতির জন্য পরিকল্পিত পদক্ষেপ দরকার। মনে হয়েছে শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে অবদান রাখা সহজ হবে। এগিয়ে আসবে পিছিয়ে পড়া নারীরা।' এ ভাবনা থেকেই কৃতিত্বপূর্ণ ফলের পর প্রাইভেট ও মাল্টিন্যাশনাল সেক্টরে ভালো সুযোগ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে নেওয়া। জানালেন তিনি। ভাবনার সঙ্গে রয়েছে পরিকল্পনা। সামাজিক ও সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে পদক্ষেপ নিয়েছেন। ইয়ুথ এম্পাওয়ারমেন্টের ক্ষেত্রে নকশিবাংলার ইয়ুথ সোসাইটির পরামর্শক হিসেবে তারুণ্যের অগ্রযাত্রায় কাজ করছেন। অর্থনীতি বিভাগের ডিবেটিং ক্লাবকে আরও ভালো পর্যায়ে নেওয়ার জন্য কাজ করছেন। এ ছাড়া নারীদের জন্য ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং সার্ভিস নামে একটি প্রকল্প শুরুর চিন্তাও রয়েছে।
তবে পরিশ্রমকেই সাফল্যের পূর্বশর্ত হিসেবে স্বীকার করেন তরুণ এ প্রভাষক। সামাজিক অবস্থান ও সুযোগ-সুবিধার চেয়ে অধ্যবসায়ের প্রতি নজর দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। দরকার দৃঢ় মানসিকতার। ক্লাস, টিউটোরিয়ালসহ অন্যান্য ব্যস্ততার মাঝেও নিজের পড়াটা ঠিক করতেন তিনি। নিয়মিত অধ্যয়ন তাকে ভালো ফল এনে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর ও অর্থনীতি বিভাগে রেকর্ডসংখ্যক নম্বর পাওয়ায় 'ড. আখলাকুর রহমান বৃত্তি', 'মীর মুয়াজ্জেম আলী ও আজীফা আলী বৃত্তি', 'শরফুদ্দিন বৃত্তি' এবং 'আসাদুল কবির স্বর্ণপদক ও বৃত্তি' লাভ করেছেন।
বর্তমানে সমাজের অসঙ্গতি ভাবিয়ে তোলে
নাবিলাকে। নারীদের প্রতি সহিংসতা, যৌন হয়রানি, অধিক হারে আত্মহত্যার ঘটনা উদ্বিগ্ন করে তোলে। এগুলোকে বর্তমান প্রজন্মের নৈতিক অবক্ষয় বলেই মনে করেন তিনি। এসব ক্ষেত্রে নারীরাই বেশি নির্যাতনের শিকার। নারীরা পারে এগুলোর প্রতিরোধ করতে। নারীদের প্রতিবাদী হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। দরকার সচেতনতা ও সংঘবদ্ধ প্রয়াস। তিনি বলেন, স্কুল পর্যায় থেকেই শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ করতে হবে। তবেই তার প্রতি সব ধরনের অন্যায়ের প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ করতে সাহসী হবে মেয়েরা। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও উদ্যোগী ভূমিকা রাখার ব্যাপারটি জরুরি বলে মনে করেন তিনি। বর্তমান সময়ে নারীরা সর্বক্ষেত্রেই সফল হচ্ছে। গ্রাম পর্যায়ে এ সফলতার কথা তুলে ধরলে গ্রামীণ নারীরা শিক্ষার প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হবে। নারীদের সংঘবদ্ধ প্রয়াসে একটি সমৃদ্ধ দেশের স্বপ্ন দেখেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.