বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ নিয়েছে

রাস্তার ওপাশের বিল্ডিংটার গায়ে এখনও খালি গায়ে ব্যাট-বল হাতে সাকিব, তামিম আর মাশরাফির পোস্টারটা জ্বলজ্বল করছে। মিরপুর স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকে ঢোকার মুখেই একটি কোমল পানীয়র ওই বিজ্ঞাপন বোর্ডটি সাত মাস আগের বিশ্বকাপ মহাযজ্ঞের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এর নিচেই রাস্তার মাঝখানে ডিভাইডারে নতুন করে সালমা-শুকতারাদের বোর্ড বসানো হয়েছে। পথচলতি মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে_ আরও একটি মহাআসর হতে যাচ্ছে মিরপুরে। মুশফিক-সাকিবদের মতোই বড় বড় সব পোস্টার লেগেছে মিরপুরে। স্টেডিয়ামের ভেতরও মুশফিকদের ব্যবহৃত ড্রেসিংরুম ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সালমাদের জন্য।


কোনো সিরিজের আগে ছেলেরা যেমন দলবেঁধে ফটোশুট করেন তেমননি গতকাল সালমারাও ব্যাকগ্রাউন্ডে হোম অব ক্রিকেট রেখে ছবি তুলেছেন। চার বছর ধরে ক্রিকেট খেললেও এর আগে কখনোই তাদের ঘিরে এতটা আগ্রহ দেখেননি সালমা। 'এর আগে এশিয়ান গেমসে আমরা খেলেছি; কিন্তু সেটা ছিল চীনে, সেখানে আমাদের এত সমর্থক ছিল না; কিন্তু এবার ঘরের মাঠে এতবড় আসর, আমাদের ঘিরে অনেকেরই প্রত্যাশা রয়েছে। চেষ্টা করব ভালো করতে।' সালমা তার দলের অনেক দুর্বলতা মেনে নিয়েও চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন দেশের হয়ে।
ঠিক এ ব্যাপারটিতেই কোচ মমতা মাবেন তার অধিনায়ককে পছন্দ করেন। 'সালমা ভীষণ সাহসী মেয়ে। সে যে কোনো পরিস্থিতিতেই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। আমরা জানি, আমাদের দলে অনেক ঘাটতি রয়েছে। ব্যাটিংটা আমাদের ভালো হচ্ছে না। তবে আমার বিশ্বাস, যদি মেয়েরা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী খেলতে পারে, তাহলে অবশ্যই দেশকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারবে।' এ আসরে দুটি ভালো উপহার রয়েছে বাংলাদেশিদের সামনে। প্রথমটি হলো, সেরা চারে থাকতে পারলেই ভারতে ২০১৩ বিশ্বকাপের টিকিট। আর দ্বিতীয়টি, সেরা ছয়ে থাকলে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার গৌরব। হাতের সামনে এত অর্জনের হাতছানি, ঘরের মাঠে সমর্থকদের প্রত্যাশা, সে সঙ্গে দলের অনেক দুর্বলতা। পারবেন কি সালমারা? 'সেটা তো মাঠে নামার পর বোঝা যাবে, এর আগে যেটা বলা যেতে পারে, তা হলো আমরা জয়ের জন্যই মাঠে নামব। আমাদের টপ অর্ডার ব্যাটিংটা ভালো নয়। হয়তো পাকিস্তানের সঙ্গে প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং লাইনআপে পরিবর্তন আনব। এটা ঠিক, কাগজে-কলমে পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ আমাদের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। তারা অনেক দিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে আসছে; কিন্তু তারা শক্তিশালী বলে যে আমরা আগেই হেরে যাব, এ মানসিকতা দূর করেই মাঠে নামব আমরা।' কোচ মমতা মাবেন মনে করেন, বিশ্বকাপের টিকিট পেতে হলে জাপান আর আয়ারল্যান্ড বাদে দুটো টেস্টখেলুড়ে দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে কোনো একটিকে হারাতেই হবে। 'আমাদের মেয়েরা যদি নার্ভ শক্ত রেখে মাঠে নামতে পারে তাহলে তাদের যে কোনো একটি দলকে হারানা সম্ভব। এটা ঠিক, ঘরের মাঠে খেলার যেমন একটা ইতিবাচক ব্যাপার থাকে, তেমনি প্রত্যাশার একটি নেতিবাচক চাপও থাকে। সেটি দূর করেই মাঠে নামতে হবে।'
প্রথম দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে যে দল দেড়শ'র ওপর রান তুলতে পারেনি, যে দলের চার ক্রিকেটারের গড় দশের নিচে, সে দলকে নিয়ে কতটা আশা করতে পারে সমর্থকরা? 'আমাদের এ মেয়েগুলোই কিন্তু শ্রীলংকায় গিয়ে ১৮০-র মতো রান তুলেছে। কোনো কারণে হয়তো তারা ঘরের মাঠে সেটা করতে পারছে না। হতে পারে ঘরের মাঠে প্রথম এতবড় ম্যাচ বলেই তারা ঘাবড়ে গেছে। তবে এখন তারা যথেষ্ট তৈরি। এ আসরে সব বড় বড় চ্যালেঞ্জ মেয়েদের সামনে। আমার বিশ্বাস, সালমা, শুকতারারা সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবে।' দূরে হাসতে থাকা সালমাদের দিকে হাত বাড়িয়েই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কোচ চ্যালেঞ্জ লুফে নেওয়ার কথা বললেন।

No comments

Powered by Blogger.