যশোরের চামড়া হাটে ১০ কোটি টাকার বিকিকিনি

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটে শনিবার প্রায় ১০ কোটি টাকার চামড়া কেনাবেচা হলেও দাম গতবারের তুলনায় কম। স্থানীয় বাজারে নিম্নদরের কারণে এবার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কোরবানির পশুর চামড়া পাচারের আশঙ্কা আরও বেড়েছে। শনিবারের হাটে সীমান্ত এলাকার পাচারকারী চক্রের তৎপরতাও লক্ষ্য করা গেছে।


সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে দাবি করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) যশোর ২২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল হাসিবুল আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভারতে কোরবানির পশুর চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে টহল বাড়ানোর জন্য ঈদের আগেই বিওপি ক্যাম্পগুলোতে নির্দেশ পাঠানো হয়। ঈদের পরদিন থেকে নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সীমান্তে ভ্রাম্যমাণ টহল বাড়ানো হয়েছে।
চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের পরে দ্বিতীয় হাট শনিবারে প্রচুর চামড়া উঠলেও দাম ছিল গতবারের তুলনায় বেশ কম। এ হাটের ইজারাদার হাসানুজ্জামান হাসু জানান, এদিন গরু ও ছাগল মিলিয়ে আনুমানিক ২০ হাজার পিস চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। এদিনও সেখানে এ ক্যাটাগরির গরুর চামড়া ২ হাজার টাকা থেকে ২২শ' টাকা বিক্রি হয়েছে। মাঝারি মানের গরুর চামড়া ১৬শ' থেকে ১৮শ' টাকায় এবং নিম্নমানের এক হাজার থেকে ১২শ' টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় গরুর চামড়ার এ দাম বেশ কম। গত বছর কোরবানির পর এ হাটে মানভেদে ১৮শ' থেকে ৩ হাজার টাকায় গরুর চামড়া বিকিকিনি হয়েছে। ছাগলের চামড়া ১৩০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত বছর একই মানের চামড়ার দাম ছিল ২৫০ থেকে সাড়ে তিনশ' টাকা।
এদিকে, স্থানীয় বাজারে চামড়ার দাম কম হওয়ায় গতকাল রাজারহাটে ভারতীয় চামড়া ব্যবসায়ীদের এজেন্টদের তৎপরতা বেশি দেখা গেছে। এ এজেন্টদের অধিকাংশই সীমান্ত এলাকার ব্যবসায়ী। সূত্র জানিয়েছে, সীমান্ত এলাকার এ ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে নিয়ে এলাকায় ফিরে যাচ্ছেন। এ নিয়ে হাটে প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই।
বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল জানান, এবার ট্যানারি মালিকরা দাম নির্ধারণ করে না দেওয়ায় তারা অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে চামড়া কিনেছেন। পাশাপাশি ট্যানারি মালিকদের কাছে এ হাটের ব্যবসায়ীদের পাওনা প্রায় ৩ কোটি টাকা। বকেয়া ওই টাকা কিংবা ব্যাংক ঋণের সুবিধা না পাওয়ায় সাধারণ ব্যবসায়ীদের চামড়া কেনার ক্ষেত্রে নগদ অর্থের সংকটের মুখোমুখি পড়তে হয়।
অবিক্রীত ২ কোটি টাকার চামড়া :ঈশ্বরদী প্রতিনিধি জানান, ঈশ্বরদীতে এবার ঈদে প্রায় ২ কোটি টাকার পশু চামড়া আমদানি হলেও ভালো দাম না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন এ এলাকার চামড়া ব্যবসায়ীরা। অবিক্রীত অবস্থায় এসব চামড়া এখনও বিক্রির অপেক্ষায় ঈশ্বরদীতেই পড়ে আছে।
ঈশ্বরদী চামড়া মোকামের নিয়মিত ব্যবসায়ী আশাদুজ্জামান আশা জানান, এবার ঈদুল আজহায় ঈশ্বরদীতে প্রায় ৬ হাজার গরুর চামড়া এবং ১৪ হাজার খাসির চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। প্রতিটি গরুর চামড়া গড়ে ২ হাজার থেকে ২২শ' এবং খাসির চামড়া গড়ে ৩শ' টাকা দরে বেচা-কেনা হয়। অন্য ঈদের চেয়ে এবার ঈশ্বরদীতে পশুর চামড়া আমদানি বেশি হওয়ায় নিয়মিত ব্যবসায়ীদের চেয়ে ফড়িয়া ও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা মাঠ পর্যায় থেকে চামড়া সংগ্রহ করায় তারা খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। এদিকে আমদানি বেশির কারণে আন্তর্জাতিকভাবে চামড়ার দাম কমিয়ে দেওয়ায় ঈশ্বরদীর চামড়া ব্যবসায়ীরা ফড়িয়া ও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনে অনেকটা বিপাকে পড়েছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বাজারে ক্রেতা নেই :পাবনা অফিস জানায়, পাবনাসহ উত্তরাঞ্চলে চামড়া ব্যবসায়ীরা ক্রেতা না পাওয়ায় হতাশায় ভুগছেন। ক্রেতাশূন্যতার কারণে গরু ও খাসির লাখ লাখ পিস চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। ট্যানারি মালিকরা এখনও কেনা শুরু না করায় ভারতে চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। পাবনাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার চামড়ার বাজারের খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, কয়েক লাখ পিস চামড়া নিয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। ঢাকার ট্যানারিগুলো এগিয়ে না আসায় ৫০ শতাংশ চামড়ায় লবণ মাখিয়ে রেখে বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, এ অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা সদরের চামড়ার বাজারে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার পিস গরু ও ৪০ থেকে ৪৫ হাজার পিস খাসির চামড়া আমদানি হয়েছে। সে হিসাবে উত্তরের ১৬ জেলায় প্রায় ৫ লাখ গরু ও ৮ লাখ খাসির চামড়া উঠেছে। গত শনিবার পর্যন্ত গরুর ২ লাখ ও খাসির ৪ লাখ পিস চামড়া বিক্রি হয়েছে এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে অবিক্রীত অবস্থায় রয়েছে গরুর ৩ লাখ ও খাসির ৪ লাখ পিস চামড়া। এসব চামড়া ব্যবসায়ীর ভাগ্য এখন ট্যানারি মালিকদের ওপর নির্ভর করছে। ট্যানারি মালিকরা এসব চামড়া না কিনলে সীমান্ত পেড়িয়ে ভারতে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.