চামড়া ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের হুমকি-ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনা শুরু করছেন আজ by আবু হেনা মুহিব

রাজধানী থেকে সংগৃহীত এ বছরের কোরবানির পশুর চামড়া ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি শুরু হচ্ছে আজ। পর্যায়ক্রমে আগামী সপ্তাহের মধ্যে সারাদেশ থেকে সংগৃহীত চামড়া ট্যানার্সদের কাছে বিক্রি করবেন কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা। দর নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক থাকলেও শেষ পর্যন্ত ন্যায্য দর পাবেন বলে আশা করছেন আড়তদার ব্যবসায়ীরা। তবে ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রকৃত দর না পেলে এ নিয়ে আন্দোলনে যাওয়ার কথা বলেছেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি দেলোয়ার হোসেন।


ক্রেতা না থাকায় চামড়া কিনে বিপাকে পড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও ন্যায্য দর দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন আড়তদাররা। কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম দামে কেনা সত্ত্বেও এ বছর আড়তদারদের কাছে চামড়া বিক্রি এবং ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে হতাশা ছিল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে। ক্রেতার অভাবে এখনও অনেক জেলায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চামড়া বিক্রি করতে পারেননি বলে জানা গেছে।
কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি দেলোয়ার গতকাল সমকালকে কোরবানির পশুর চামড়ার জন্য বিখ্যাত জেলা পর্যায়ের হাটে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। কিশোরগঞ্জ, বগুড়ার পর গতকাল যশোর থেকে চামড়ার সংগ্রহ শেষ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি হাটগুলো থেকে চামড়া সংগ্রহ করা হবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ন্যায্য দামেই চামড়া কিনেছেন বলে দাবি করেন তিনি। পাবনা অঞ্চলসহ এখনও অনেক জেলায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্রেতার অভাবে চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন_ এ প্রসঙ্গে দেলোয়ার জানান, নির্দিষ্ট দিনে পাবনা থেকেও চামড়া সংগ্রহ করা হবে। চামড়ার দর প্রসঙ্গে তিনি জানান, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) পরামর্শ অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ করা হলেও এ দরকেই এতদিন ধরে বেশি বলছেন ট্যানারি মালিকরা। তবে শেষ পর্যন্ত জেলা পর্যায় থেকে ন্যায্য দরেই চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। দেলোয়ার জানান, রাজধানীর অনেক ট্যানারি মালিক এবং তাদের প্রতিনিধিরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যে দামে চামড়া কিনেছেন তার ভিত্তিতে বলা যায়, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনার সময় ট্যানারি মালিকরা স্বাভাবিক দাম দেবেন। তবে কম দাম পেলে এ নিয়ে আন্দোলনে যাওয়ার কথা বলেছেন তিনি। দেলোয়ার জানান, সারাবছরে একবার আমাদের ব্যবসা আসে। কোনো কারসাজিতে আর্থিক ক্ষতি গুনতে হলে আমাদের পথে বসতে হবে।
বিটিএ সহ-সভাপতি শামসুল হুদা সমকালকে জানান, কোরবানির চামড়া নিয়ে আসলে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নেই। এখনও সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। দর নিয়ে কোনো পর্যায়ে কারসাজি নেই বলে জানান তিনি। তবে এ বছর কোরবানির শেষ বাজারে পশু পাওয়া না যাওয়ায় অনেকে কোরবানি করতে পারেননি। এ কারণে এ বছর চামড়া কম সংগ্রহ হয়েছে।
গত ৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম দামে এ বছর কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে পশুর চামড়া ক্রয় করেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। গত বছরের তুলনায় গরুর চামড়া পিসপ্রতি দর কম হয়েছে গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে গত বছর মাঝারি আকারের গরুর চামড়া প্রতি পিসের দাম ছিল গড়ে ২১শ' থেকে ২২শ' টাকা। এ বছর এ দাম ১৬শ' থেকে ১৭শ' টাকার বেশি পাওয়া যায়নি। এ পরিস্থিতির জন্য মৌসুমি ব্যবসায়ীরা স্থানীয় পর্যায়ের চামড়ার আড়তদারদের দায়ী করেছেন। আর আড়তদার এবং বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন পরস্পরের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কারসাজির অভিযোগ করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর কোরবানির আগে বিটিএ বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী চামড়ার দর আগাম নির্ধারণ করে দেয়। এ বছর দর আগাম নির্ধারণ না করায় এ বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

No comments

Powered by Blogger.