অন্তত লাশটা চান স্বজনরা

লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি গত ২৩ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও সার্তে থেকে ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এনটিসি) যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকায় ছেলে মুতাসিমকে সঙ্গে রেখে স্ত্রী ও অন্য সন্তানদের গোপনে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেন। সেই থেকে বাবার স্নেহবঞ্চিত ছিলেন আলজেরিয়ায় অবস্থান নেওয়া মেয়ে আয়শা। এখন তাঁর কাছে ওই স্নেহ-বঞ্চনা চিরকালের। বাবাকে হারিয়েছেন এনটিসি যোদ্ধাদের বর্বর হামলার মধ্য দিয়ে। সঙ্গে ভাই মুতাসিমকেও।


বাবা ও ভাইয়ের মৃত্যু কিছুতেই সইতে পারছিলেন না আয়শা। টেলিভিশনে বাবার রক্তাক্ত মুখখানি দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে পর্যন্ত নিতে হয়েছে তাঁকে। বাবা ও ভাইকে আর কোনো দিন ফিরে পাবেন না ৩৪ বছর বয়সী গাদ্দাফি-তনয়া। তাই অন্তত তাঁদের শেষযাত্রা যেন স্বজনদের হাত দিয়ে হয় সে জন্য মরদেহ ফেরত চেয়েছে গাদ্দাফির পরিবার ও তাঁর গোত্রের সদস্যরা। গত বৃহস্পতিবার জন্মশহর সার্তে এনটিসি যোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়েন গাদ্দাফি ও ছেলে মুতাসিম। এরপর যোদ্ধারা তাঁদের পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গাদ্দাফির মরদেহ মিসরাতা শহরের একটি মাংসের দোকানের ফ্রিজে রাখা হয়েছে। তাঁকে গোপনে দাফন করা হতে পারে বলে গুঞ্জন উঠেছে। এরই প্রেক্ষাপটে সাবেক ওই প্রতাপশালী শাসকের মরদেহ দাফনের সুযোগ চেয়েছে তাঁর পরিবার ও নিজ গোত্রের সদস্যরা।
গাদ্দাফির সমর্থক সিরিয়াভিত্তিক আল-রাই টেলিভিশন চ্যানেলে গতকাল শনিবার লিবীয় ওই নেতার পরিবার ও গোত্রের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রচার করে। এতে বলা হয়, 'গত বৃহস্পতিবার শহীদ হওয়া গাদ্দাফি, মুতাসিম ও অন্যদের মরদেহ সার্তের নিজ গোত্রের লোকদের কাছে তুলে দিতে অর্ন্তবর্তী সরকার এনটিসির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে আমরা জাতিসংঘ, ইসলামী সম্মেলন সংস্থা ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে অনুরোধ জানাচ্ছি।' বিবৃতিতে বলা হয়, 'ইসলাম ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করে তাঁদের দাফন করার সুযোগ দিতে মরদেহ নিজ গোত্রের লোকদের কাছে হস্তান্তর করা হোক।'
গাদ্দাফির পরিবারের দাবির ব্যাপারে মিসরাতায় এক এনটিসি কমান্ডার বলেন, 'একজন মুসলিম হিসেবে গাদ্দাফিকে তাঁর প্রাপ্য অধিকার দেওয়া হবে। মরদেহের গোসল করানোসহ সব ধরনের ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করেই তাঁকে দাফন করা হবে।' তবে সেটা তাঁদের পক্ষ থেকেই করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এনটিসি কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা গোপনেই গাদ্দাফির দাফন সম্পন্ন করবেন। তাঁর কবর ঘিরে যাতে মাজার তৈরি না হয় সে জন্যই এটি করা হবে বলে তাঁরা বলছেন। সূত্র : রয়টার্স ও জিনিউজ অনলাইন।

No comments

Powered by Blogger.