পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল-বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ

পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। আজ রবিবার এ-সংক্রান্ত ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। তবে এ বিষয়ে কিছুই জানে না অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এ ধরনের তহবিল গঠনের এখতিয়ার বিএবির নেই।বিএবির শীর্ষ একটি সূত্রে জানা যায়, তহবিল গঠনের বিষয়ে ইতিমধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। কিভাবে এবং কী প্রক্রিয়ায় তহবিল গঠন করা হবে, সে বিষয়ে আগামীকালের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


সব কিছু ঠিক থাকলে আগামীকালই পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিলের ঘোষণা দেওয়া হবে। এ তহবিলের নাম হবে বাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিল (এমএসএফ)। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এ তহবিল থেকে বিনিয়োগ করা হবে। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করাই এ তহবিল গঠনের উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছে ওই সূত্রটি।
বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, 'আগামীকাল (রবিবার) বৈঠক শেষে সব জানা যাবে। এ মুহূর্তে এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না।'
তবে পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন নিয়ে এবিবির সঙ্গে কোনো বৈঠক করেনি বিএবি; যদিও এ ধরনের তহবিল গঠনের বিষয়ে একমাত্র এবিবিই প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। এ বিষয়ে এবিবির চেয়ারম্যান মাহমুদ সাত্তারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। সংগঠনটির ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, 'তহবিল গঠনের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বিএবি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন। আইন অনুযায়ী বিএবি এ ধরনের তহবিল গঠন করতে পারার প্রশ্নই আসে না। এমনকি এবিবিও এ ধরনের কোনো তহবিল গঠন করতে পারে না। তবে এবিবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন হওয়ায় তারা এ ধরনের তহবিল গঠনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে।
ব্যাংকিং খাতে তারল্য চাপ বিরাজমান। সেখানে এ ধরনের কোনো তহবিল গঠন করা সম্ভব কি না_প্রশ্নের জাবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ একটি সূত্র জানায়, 'আমাদের কাছেও বিষয়টি অনেকটা অবাস্তব ঠেকছে। কারণ প্রতিদিনের দায় মেটাতে ব্যাংকগুলো যেখানে কলমানি থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থ ধার করছে। সেখানে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন কিভাবে সম্ভব তা আমাদের বোধগম্য নয়।'
ওই সূত্র আরো জানায়, এবিবি এর আগে আইনি সীমার মধ্যে থেকে বিনিয়োগের যে ঘোষণা দিয়েছে, তা যৌক্তিক। বাংলাদেশ ব্যাংক এতে সমর্থন জানিয়েছে। আইনের মধ্য থেকে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু বলার নেই। তবে কেউ যদি আইন লঙ্ঘন করে কোনো অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয় এবং এতে কোনো ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সে যতই প্রভাবশালী হোক না কেন বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে ছাড় দেবে না।
বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ
ব্যাংক হিসাব, বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট খোলায় এবং ব্যাংকঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের সচিব মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে তাঁদের মতামতও তুলে ধরেছেন। তবে কমিশন মনে করে, অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই পদ্ধতি চালুর আগেই নাগরিক সেবার ক্ষেত্রে পরিচয়পত্র দাখিল বাধ্যতামূলক করা ঠিক নয়। গতকাল অনলাইন বার্তা সংস্থা বিডিনিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত এসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক খায়রুল হোসেন বার্তা সংস্থাটিকে বলেন, 'হিসাব খোলা এবং ঋণ নিতে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহারের বিষয়টি বৈঠকে তুলে ধরেছি আমরা। আমাদের কী কী চাহিদা তাও বলেছি। এখন সার্বিক বিষয়ে ইসি সিদ্ধান্ত নেবে।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন জানান, 'আমরা পরিচয়পত্রের তথ্য অনলাইনে যাচাইয়ের পক্ষে। এ জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছি আমরা। কিন্তু সব ধরনের প্রস্তুতির আগেই নাগরিক সেবা নিতে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা ঠিক হবে না।'
নির্বাচন কমিশনার আরো জানান, ইসিতে সংরক্ষিত নাগরিকদের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহারের বিষয়ে একটি নীতিমালা করা হচ্ছে। সবার কাছে ত্রুটিমুক্ত জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহের পর সেই নীতিমালা মেনেই শিগগির এ কার্যক্রম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০ অনুযায়ী, যেকোনো সেবা বা নাগরিক সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে সেবাপ্রত্যাশী নাগরিকের পরিচিতি যাচাইয়ের জন্য নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন বা এর অনুলিপি জমা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করতে পারবে সংশ্লিষ্ট সেবা দাতা সংস্থা।
এ আইন অনুযায়ী নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা, পরিচয়পত্র তৈরি করা, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক সব দায়িত্ব পালনের এখতিয়ার থাকবে কমিশনের হাতে।
তথ্য যাচাই : ইসি কর্মকর্তারা জানান, এ পর্যন্ত সাড় আট কোটিরও বেশি ভোটারকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। প্রথমবারের মতো পরিচয়পত্র দেওয়ায় এর উল্লেখযোগ্য একটি অংশে বানান ও তথ্যগত ভুল রয়ে গেছে।
এ ছাড়া ভোটার তালিকা হালনাগাদ না হওয়ায় অন্তত ১৫ লাখ লোক এখনো পরিচয়পত্র পাননি। চলতি বছরের শেষ দিকে হালনাগাদের কার্যক্রম শুরু হবে বলে কর্মকর্তারা জানান।
ইসির অতিরিক্ত সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই ব্যাংকের মতো কিছু প্রতিষ্ঠান জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করায় কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন সম্ভব হয়নি। প্রদর্শিত পরিচয়পত্রটি আদৌ আসল কি না, তা যাচাইয়ের পদ্ধতি চালু না থাকায় বাজারে জাল পরিচয়পত্র তৈরির হিড়িক পড়ে গেছে। তিনি বলেন, এ দুষ্কর্ম রোধ করতে হলে সেবা দানকারী সংস্থাগুলোকে প্রদর্শিত জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাইয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে।
ইসি এখন অনলাইনে এসব তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ দিতে প্রস্তুত উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম জানান, এ পদ্ধতিতে সহজেই 'ভুয়া' পরিচয়পত্র চিহ্নিত করা যাবে। ফলে কেউ ভুয়া পরিচয়ে ব্যাংকঋণ নিতে অথবা একাধিক বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট খুলতে চাইলে তা ঠেকানো যাবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির জন্য সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে জাতীয় নিবন্ধন আইনে।

No comments

Powered by Blogger.