চিকিৎসক হতে গিয়ে ফিরলেন লাশ হয়ে by নূপুর দেব,

মানবসেবার ব্রত নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে (চমেকে) ভর্তি হয়েছিলেন মেধাবী ছাত্র আবিদুর রহমান। কিন্তু সেই ব্রত আর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন মরে গেল অঙ্কুরেই। পূরণ হলো না ছেলেকে নিয়ে মা-বাবার স্বপ্নও।চমকে বিডিএস কোর্সের সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থী আবিদুর রহমান গত বুধবার দ্বিতীয় পেশাগত প্যাথলজি ও মাইক্রোবায়োলজি মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। তখনো কি আবিদ জানতেন তাঁকে হতে হবে নোংরা ছাত্ররাজনীতির নির্মম শিকার! পাস করে চিকিৎসক হিসেবে বের হওয়ার আগেই তাঁকে লাশ হয়ে প্রিয় ক্যাম্পাস ছাড়তে হবে? বাবাও কি ভাবতে পেরেছিলেন তাঁকে প্রিয় সন্তানের লাশ বইতে হবে?


অমানুষিক ও বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়ে শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আবিদ। গতকাল দুপুরে কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে তাঁর লাশ গ্রামের বাড়ি কঙ্বাজারের চকরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়।
কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, 'গত প্রায় দেড় দশকে ক্যাম্পাসে এ রকম জঘন্য ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় দায়ীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। একজন মেধাবী ছাত্রকে এভাবে জীবন থেকে বিদায় নিতে হবে, তা কোনোক্রমেই কাম্য হতে পারে না।'
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. নূর হোসেন শাহীন জানান, সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনুরোধে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি ও ছাত্র সংসদের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। যারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের চিহ্নিত ও বহিষ্কার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, আবিদুর রহমান চকরিয়া বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে জিপিএ ৫ পেয়ে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। ২০০৭ সালে এ কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পান তিনি। ২০০৮ সালে ২৪ ডিসেম্বর সরকারি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে বিডিএস কোর্সে ভর্তি হন আবিদ। ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে ২০তম ব্যাচের নিয়মিত শিক্ষার্থী আবিদ প্রথম পেশাগত পরীক্ষায় ভালো ফল করেন বলে শিক্ষকরা জানান। গত ২৪ আগস্ট দ্বিতীয় পেশাগত পরীক্ষা শুরু হয়। এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পর সর্বশেষ গত ১৯ অক্টোবর আবিদ প্যাথলজি ও মাইক্রোবায়োলজি মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি চকরিয়ার বরইতলী গ্রামের সার্ভেয়ার নুরুল কবির চৌধুরীর ছেলে।
জানা যায়, আবিদুর রহমান চমেক ছাত্রলীগের বিগত কমিটির বিভাগীয় সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগ দ্বিতীয় বর্ষ কমিটির সদস্যসচিবও ছিলেন। তবে ১১ অক্টোবর গঠিত ছাত্রলীগের কমিটিতে তাঁর নাম ছিল না।
অভিযোগ উঠেছে, ছাত্রলীগের কমিটিতে থাকা অবস্থায় দু-তিন মাস ধরে তিনি ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে সক্রিয় করতে তৎপরতা চালান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কলেজ ছাত্রলীগ ও তাদের নিয়ন্ত্রিত ছাত্র সংসদের কয়েকজন নেতা-কর্মী আবিদসহ কয়েকজনকে বুধবার প্রথমে ছাত্র সংসদ কার্যালয়ে এবং পরে ছাত্রাবাসে ব্যাপক মারধর করে। এতে গুরুতর আহত আবিদ চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শুক্রবার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
চমেকে এটাই প্রথম হত্যাকাণ্ড নয়
শুধু আবিদুর রহমানই নন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে গত ২১ বছরে আরো পাঁচটি তাজা প্রাণ ঝরে গেছে। এর মধ্যে ১৯৯১ সালের ২১ অক্টোবর এমবিবিএস প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবকে ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা হত্যা করে। ১৯৯৩ সালের ১৮ অক্টোবর ক্যাম্পাসে ডা. মিজান, সন্ত্রাসী বোরহান ও ফরিদকে হত্যা করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। ১৯৯৫ সালে ছাত্রদল নেতা আপেলকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ছাড়া ডা. আবুল হোসেন শাহীনসহ আরো বেশ কয়েকজন মেডিক্যাল ছাত্র ও চিকিৎসক আহত হন প্রতিপক্ষ নেতা-কর্মীদের হাতে।

No comments

Powered by Blogger.