নিজামী হত্যা-লুট করেছেন তা প্রমাণ হয়েছে কি : ফখরুল-জামায়াত নেতারা 'যুদ্ধাপরাধী' কি না কিছুই বলব না, কারণ আমি রাজনীতি করি

কাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত ট্রাইব্যুনাল নিরপেক্ষ নয় বলে দাবি করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অভিযুক্ত জামায়াত নেতারা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত কি না সে বিষয়েও সন্দেহ পোষণ করেছেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, 'এ ব্যাপারে ইয়েস-নো কিছুই বলব না; কারণ আমি রাজনীতি করি। জামায়াতের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক ঐক্য রয়েছে। বিষয়টিকে সেভাবে নিতে হবে।'


তিনি আরো বলেন, 'নিজামী সাহেব কোথায় লুণ্ঠন করেছেন, হত্যা করেছেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগে আনতে হবে। এ পর্যন্ত তাঁদের বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে কি?'
গতকাল শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। তিনি দাবি করেন, 'যুদ্ধাপরাধীদের' বিচার ঠেকাতে নয়, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্যই খালেদা জিয়া যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
ফখরুল বলেন, জামায়াত নেতাদের বিচারের ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। আইনি সহায়তা থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। যে প্রক্রিয়ায় বিচার করা হচ্ছে তা স্বচ্ছ নয়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের বিচার হচ্ছে।
মতিউর রহমান নিজামীসহ জামায়াত নেতাদের 'যুদ্ধাপরাধী' বলে মনে করেন কি না জানতে চাইলে বিএনপির ওই নেতা বলেন, 'এ প্রশ্নের সোজা উত্তর দেব না। তবে নিজামী সাহেব কোথায় লুণ্ঠন করেছেন, হত্যা করেছেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগে আনতে হবে। অভিযোগের প্রমাণ থাকলে অবশ্যই তাদের বিচার হতে হবে। এ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে কি?'
ট্রাইব্যুনালে নিয়োগপ্রাপ্তদের অতীত পরিচয় কী : মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে আন্তর্জাতিকমানের বলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এ বিষয়টি আমাদের জানা নেই। আপনারা এর কপি দেখালে বিষয়টি আমরা অবগত হব।' তিনি বলেন, 'যাঁদের ট্রাইব্যুনালে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের অতীত পরিচয় কী? ট্রাইব্যুনাল নিরপেক্ষ নয়। তাই যুদ্ধাপরাধের বিচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক হলে বিচারের মূল বিষয় ব্যাহত হবে।'
মন্ত্রীরা বিচারের আগেই ট্রাইব্যুনালের কাজ করে যাচ্ছেন : ফখরুল বলেন, 'মন্ত্রীরা বিচারের আগেই ট্রাইব্যুনালের কাজ করে যাচ্ছেন। গোলাম আযম সাহেব কবে গ্রেপ্তার হবেন তা-ও আইন প্রতিমন্ত্রী নির্ধারণ করে দিচ্ছেন।' তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কথা বললেও একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারই প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়েছিল।'
তখন তারা জায়েজ ছিল : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, 'জামায়াতের নেতারা যখন ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, তখন এই জামায়াত যুদ্ধাপরাধী ছিল না? তখন তারা জায়েজ ছিল। আর আমাদের সঙ্গে ঐক্য হলেই তারা নাজায়েজ হয়ে যায়!'
সরকারের ভিত নড়ে গেছে : মির্জা ফখরুল বলেন, 'রোডমার্চে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দেখে সরকারের ভিত নড়ে গেছে। সরকার ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে রাজনৈতিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। সরকার এ জন্যই বিরোধী দলের ওপর অগণতান্ত্রিক আচরণ করছে। সরকারি দলের সদস্যরা সংসদে যে ভাষায় কটূক্তি করছেন তা কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না।'
প্রেসনোট অসামঞ্জস্যপূর্ণ : পদ্মা সেতুর ব্যাপারে সরকারের দেওয়া প্রেসনোট অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, 'বিশ্বব্যাংক, জাইকা ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রকাশ্যে বলেছে, সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী দুর্নীতি করেছে। অথচ নির্লজ্জভাবে সরকারের প্রধান নির্বাহী যোগাযোগমন্ত্রীর পক্ষ নিচ্ছেন। দুর্নীতির দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদার ওপর। এ থেকে কি সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে না?'
কঠোর আন্দোলন শুরু হবে : ২৭ অক্টোবর ময়মনসিংহে খালেদা জিয়ার জনসভার কথা জানিয়ে ফখরুল বলেন, 'সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সিলেট ও রাজশাহীর বিশাল জনপদে খালেদা জিয়ার রোডমার্চে লাখ লাখ মানুষ সাড়া দিয়েছে।' তিনি বলেন, 'দুই বিভাগে রোডমার্চ হয়েছে। এরপর চট্টগ্রাম, খুলনা ও রংপুরে রোডমার্চ হবে। সবশেষে সরকার হঠাতে কঠোর আন্দোলন শুরু হবে।'
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কবীর রিজভী, শিক্ষাবিষয়ক সহসম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সহদপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, যুবদল নেতা এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.