বিদেশি সহায়তা বন্ধে ইউনূস কিছু করেননিঃ অর্থমন্ত্রী

দ্মা সেতুর অর্থায়ন বা বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস কোনো বাধা সৃষ্টি করেছেন বলে মনে করেন না অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ ব্যাপারে ইউনূস সাহেব প্রোপাগান্ডা করেছেন বা বিরোধিতা করছেন, আমি এখনো সে রকম দেখিনি।’ গতকাল রোববার সচিবালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স নিকোলাস জে ডিনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি আমি প্রথম শুনেছি আন্তর্জাতিক ঋণ মানকারী সংস্থা মুডির কাছ থেকে। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় যোগ দেওয়ার পর মুডির সঙ্গেও আমার একটি বৈঠক হয়। তখন তারা আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, বৈদেশিক সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে মুহাম্মদ ইউনূস কোনো বাধা সৃষ্টি করছেন কি না? আমি তাদের বলেছি এবং যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও বলেছি যে ব্যাপারটি মোটেও তেমন নয়।’
বৈদেশিক সাহায্যের চিত্র তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার সহায়তার আশ্বাস পেয়েছি। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকেরই রয়েছে ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। এটা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। সুতরাং সাহায্য তো কমেইনি, উল্টো বেড়েছে।
আপনি বলছেন মুহাম্মদ ইউনূস কোনো বাধা সৃষ্টি করছেন না, অথচ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, মুহাম্মদ ইউনূসের কারণে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে ঝামেলা করছে বিশ্বব্যাংক। এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করব না। কারণ, আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই।’
নিকোলাস জে ডিনের সঙ্গে গতকাল অনুষ্ঠিত বৈঠকে গ্রামীণ ব্যাংক প্রসঙ্গ উঠেছিল বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আগামী তিন মাসের মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ দেওয়া হবে। বর্তমানে ব্যাংকের চলতি দায়িত্বে এমডি রয়েছেন একজন। এমডি খুঁজতে একটা সার্চ কমিটি করেছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি যখন প্রথম গঠন করা হয়, তখন থেকে এ পর্যন্ত কোনো বিকল্প লোক তৈরি করা হয়নি। একটা উপযুক্ত মানুষ পেতে গেলে তো ওভাবে হবে না, দরকার ভালো প্রার্থী। এ জন্যই এমডি পদে লোক নিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে।’
গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষকে গ্রামীণ ব্যাংক ঋণ দেবে—এ কথা উল্লেখ করে মুহিত বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের অন্য কোনো কিছু করার অধিকার নেই। কিন্তু নিয়ম ভেঙে তারা ৫৪টি প্রতিষ্ঠান করেছে। টাকা গেছে কল্যাণ তহবিল থেকে। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার নিবন্ধিত হয়েছে দেশের বাইরে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি। ভাবছি, এদের মধ্যে কীভাবে একটা সম্পর্ক সৃষ্টি করা যায়।’
মুহিত বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনকে (আইএফসি) গ্রামীণ ব্যাংক বিষয়ে একটা সমাধানের পথ বের করে দিতে বলেছিলাম। ওরা বলেছে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওদের নিজেদেরও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
উপায় বের করতে একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্মকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রায় প্রতিটি কোম্পানিরই উনি (মুহাম্মদ ইউনূস) চেয়ারম্যান। এটা একটা প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যা।’
পদ্মা সেতু: পদ্মা সেতু বিষয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারাই বিষয়টিকে ফেনিয়ে তুলেছেন।’
জাইকা ও এডিবি তাদের ঋণের কার্যকারিতা জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওই জানুয়ারির মধ্যেই সব কিছুর সুরাহা হয়ে যাবে।’
বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন না করলে বিকল্প উৎসের কথা ভাববেন বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। উৎসের নাম জানতে চাইলে মুহিত বলেন, ‘সবকিছু আপনাদের বলতে হবে নাকি! সময় হলেই জানতে পারবেন।’
বিশ্বব্যাংকের আপত্তি নতুন কিছু নয় বলে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ প্রকল্পেও বিশ্বব্যাংক বিরোধিতা করেছিল। এখন এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে সংস্থাটি রাজি।
টিইসিএফ: অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা ফোরাম (টিইসিএফ) নিয়ে দর-কষাকষি হচ্ছে। এটা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অনেকগুলো খসড়া হয়েছে এ ব্যাপারে। তবে এখন একটি জায়গায় আটকে রয়েছে। আর তা হলো শ্রমমান।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়টি মীমাংসার জন্য তাদের বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানাব।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কেন টিইসিএফ করা হচ্ছে, খসড়ায় কী আছে এবং এতে বাংলাদেশেরই বা কী লাভ হবে। এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বার্থ ছাড়া টিইসিএফ হবে না। আর খসড়ায় কী আছে, চূড়ান্ত হলেই তা জানা যাবে।’

No comments

Powered by Blogger.