বাংলাদেশ হতে পারে বহুত্ববাদের নির্মল উদাহরণ by মাসুদা ভাট্টি

কাশে পূর্ণ চাঁদ, জানালা দিয়ে ঢুকে পড়তে চাইছে গোটা আকাশ ঘরের ভেতর। এমনই এক পূর্ণিমা রাতে তথাগত জন্মেছিলেন এবং আরেক পূর্ণিমায় ঘর ছেড়ে জ্ঞানের শরণ নিয়েছিলেন। বৌদ্ধ ধর্মে পূর্ণিমা তাই এক বিশাল স্থান জুড়ে আছে। এই ধর্মে পূর্ণিমা কেবল বুদ্ধের জন্ম কিংবা সংসারত্যাগের দিন নয়, মনের ও জীবনের আঁধারবিদারী আলোর প্রতীকও।
শ্রীলঙ্কায় প্রতিমাসে একটি দিন বেশি ছুটি থাকে এবং তা এ পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে। আজ রাতও পূর্ণিমার রাত, মানুষের ক্ষুদ্রত্ব ও পৃথিবীর অন্ধত্ব এ রকম পূর্ণিমার নির্মল আলোয় ভেসে যাবে_এ রকমটাই বিশ্বাস করতে প্রাণ চাইছে। আর মাত্র তিন দিন বাকি খ্রিস্ট ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব ক্রিসমাসের। বিশ্বব্যাপী এখন সাজ সাজ রব, যদিও এ উৎসবের কট্টর ধর্মীয় দিকটি এখন প্রায় সর্বত্রই অনুপস্থিত। এখন দেশে দেশে এ উৎসব পরিণত হয়েছে পরিবারের সবাইকে নিয়ে রাতের বেলা খাবার খাওয়া এবং সবাইকে উপহার দিয়ে দিনটি বছরময় স্মরণীয় করে রাখা। পেগান বা পৌত্তলিকরা এ উৎসব পালন করত। খ্রিস্ট ধর্মও এ সামাজিক অনুষ্ঠানটি গ্রহণ করেছে এবং এখন এ অনুষ্ঠান পরিণত হয়েছে সামাজিক, পারিবারিক আয়োজনে।
এই তো মাত্র কিছুদিন আগে বাঙালি হিন্দুর দুর্গাপূজা ও বাঙালি মুসলমানের ঈদুল আজহা প্রায় একই সঙ্গে পালিত হলো। পাঠক হয়তো ভাবছেন, কেন হঠাৎ করে আমি ধর্ম উৎসব নিয়ে কথা বলছি? আসলে আমি এ ভূখণ্ডের মানুষের 'বহুত্ববাদ' বা প্লুরালিজম নিয়ে বেশ ভাবছি, বিশেষ করে এ ভূখণ্ড যে চাইলেই বহুত্ববাদের প্রকৃত উদাহরণ হতে পারে, সে কথা আবারও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। এ কথা সত্য, এ ভূখণ্ডে বারবারই এ বহুত্ববাদ ব্যাহত হয়েছে, মানুষে-মানুষে ধর্ম কিংবা রাজনৈতিক রক্তপাত এখানকার মাটিকে করেছে রক্তাক্ত। কিন্তু এ কথাও সত্য, আগুনে পুড়েই সোনা খাঁটি হয় এবং বাঙালি দীর্ঘ ও বন্ধুর পথ পেরিয়ে আজ যে জায়গায় দাঁড়িয়েছে, সেখান থেকে এ বহুত্ববাদের পথটিই হতে পারে আদর্শ পথ।
একজন মানুষের নানা পরিচয় থাকতে পারে। জাতীয়ভাবে এক পরিচয়, রাষ্ট্রীয়ভাবে আরেক; ধর্মীয়ভাবে এক পরিচয়, সামাজিকভাবে আরেক এবং সর্বোপরি পারিবারিকভাবে তার পরিচয় হতে পারে ভিন্ন। কিন্তু সবার আগে তার মানুষ পরিচয় জ্বলজ্বল করে এবং এটাই তার সবচেয়ে বড় পরিচয়; বাকি সব পরিচয় আসলে মানুষ নিজেই নিজেকে দিয়ে থাকে। প্রকৃতির তাতে কোনো হাত নেই। পশু কিংবা পাখির মতো গোত্র ও পরিবারভেদ হয়, কিন্তু তাতে তাদের প্রাথমিক পরিচয় 'পশু' কিংবা 'পাখি'_তা কিন্তু বদলায় না। এ বঙ্গভূমিতে মানুষের বসবাস কত পুরনো, তা নিয়ে নানা গবেষক নানা প্রমাণ দিয়ে থাকেন। কিন্তু এখানে মানুষ ছিল এ কথা সত্য। প্রকৃতিকে ধর্ম মেনে তারা তার চর্চা চালালেও প্রকৃতির ধর্মে বিশ্বাসীদের মধ্যে জোর করে ধর্মবিশ্বাস সৃষ্টির কোনো প্রমাণ মেলে না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বহু ধর্মই যে জোরজবরদস্তি এবং অন্যের ধর্মের ওপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতে গিয়ে রক্তারক্তি ও অযুত-নিযুত মানুষকে হত্যা করেছে, ইতিহাস তার সাক্ষী। এ ভূখণ্ডেও ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে রয়ে গেছে বহু ভয়ংকর ক্ষত; তার পরও মানুষ এ ভূখণ্ডের ঔদার্যের কারণেই নিজের ধর্ম বা সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে পার করে দিয়েছে হাজার হাজার বছর। তবে আধুনিককালে এসে যখন ধর্ম রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করেছে, তখন এ ভূখণ্ডেও শুরু হয়েছে সংখ্যাগুরু ধর্মের মানুষের হাতে সংখ্যালঘু ধর্মবিশ্বাসীদের অত্যাচারিত হওয়ার প্রবণতা।
আজকে চট্টগ্রামের সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে আটক করেছে রাষ্ট্র। এ কথা আসলে এ ঘটনার আগ পর্যন্ত কেউই বিশ্বাস করতে পারেনি যে এ রকমটি হতে পারে এবং তা বাংলাদেশে। সবাই এ কথা বলতে শুরু করেছিল, সাকা চৌধুরীর গায়ে হাত দেওয়া সহজ নয়। অথচ আইন তার নিজস্ব গতিতে চললে কোনো মানুষই যে আইনের ঊধর্ে্ব নয়, সাকা চৌধুরীর গ্রেপ্তার তা প্রমাণ করে। বলা হয়, এই সাকা চৌধুরী ১৯৭১ সালে একটি নির্দিষ্ট ধর্মবিশ্বাসী নাগরিককে হত্যা করেছে বলে প্রমাণ রয়েছে। ১৯৭১ আসলে এক অদ্ভুত সময়। ভারতে ইংরেজ শাসনের ধর্মবিভক্তি লিগ্যাসি হিসেবে পাকিস্তান তার রাষ্ট্রনীতিতে স্থান করে দিয়েছিল। ফলে এ পাকিস্তানে ইসলামে বিশ্বাসীরা ক্রমেই হিন্দুদের ওপর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অত্যাচার-নির্যাতন চালাতে শুরু করে। ঢালাওভাবে মুসলমান হিন্দুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল_এ কথা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। সাকা চৌধুরীর মতো এ রকম কিছু 'মানুষ' এ কুকর্মে লিপ্ত হয়েছিল এবং তারা মূলত পাকিস্তানি রাষ্ট্রযন্ত্রের নিকটতম ছিল। মজার ব্যাপার হলো, একাত্তরে এসে বাঙালি যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তখন কিন্তু বাঙালির মধ্যে কোনো বিভক্তি ছিল না; তারা একটি প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রকাঠামো ভাঙে এবং এই যে এ রকম একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রকে ভেঙে বেরিয়ে আসার শক্তি, এর মূলমন্ত্র আসলে ছিল বহুত্ববাদ বা প্লুরালিজম বা আরেকটু ক্ষুদ্র করে বললে সেক্যুলারিজম।
একাত্তরে যারা এ মূলমন্ত্রের বিরোধিতা করেছে, তারাই আসলে স্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছে। তারা যে বিজয়ী হয়নি, তা তো বলাই বাহুল্য। কিন্তু মাত্র চার বছরের মাথায় তারা আবার বিজয় লাভ করে এবং বাংলাদেশ পাকিস্তানের রাষ্ট্রকাঠামোয় ফিরে না গেলেও পাকিস্তানের ধর্মাশ্রয়ী নীতিতে ফিরে যায়। বিশেষ করে সামরিক শাসককুল মনে করে, এ রাষ্ট্রকে শাসন করতে হলে 'ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি'ই আসলে সবচেয়ে কার্যকর। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় 'রুল' বা 'শাসন' বলতে কিছু নেই, আছে 'গুড গভর্ন্যান্স', বাংলাদেশে যা দীর্ঘকাল অনুপস্থিত ছিল। এখনো যে সম্পূর্ণভাবে তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সে কথা হলফ করে বলা না গেলেও তা প্রতিষ্ঠার যে প্রসেস শুরু হয়েছে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
ফিরে যাই একাত্তরের কথায়। একাত্তরে যে বহুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার কথা বাঙালি সর্বজনসিদ্ধ করে নিয়েছিল এবং সাকা চৌধুরীদের মতো কিছু মানুষ তাতে বাধা দিয়েছিল, তা আজ আবার নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার সময় এসেছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, বাংলাদেশে ইসলামে বিশ্বাসীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। কিন্তু এখনো এ রাষ্ট্রে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ছাড়াও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী রয়েছে, তাদের নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস রয়েছে। ধর্মে বিশ্বাসীদের সংখ্যা বিচারে যে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা চলতে পারে না, তার প্রমাণ আজকের অস্থির বিশ্বের সর্বত্রই ছড়ানো। এমনকি কেবল জাতীয়তার পরিচয়ে বলেও যে মানুষ ঋজু থাকতে পারে না, তাও দেশে দেশে দেখা যাচ্ছে। আজকে বাংলাদেশ নানা কারণে পৃথিবীর, বিশেষ করে পশ্চিমের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু বাংলাদেশ নিজেকে কোনো ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে সৃষ্টি করতে পারছে কি? আমার মনে হয়, এখানেই বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের মানুষ ও সরকার একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপের মাধ্যমে বৃহৎ অর্জন সম্ভব করতে পারে। সেটি কী? সেটি আর কিছুই নয়, বাংলাদেশে বহুত্ববাদ বা প্লুরালিজম প্রতিষ্ঠা করা।
বাংলাদেশের ভূখণ্ড যেমন উর্বর, এ মাটির মানুষের মনও তেমনই। যা বপন করা যায়, তা-ই তরতরিয়ে বাড়ে, যদি না বিরুদ্ধশক্তি দেয়াল তুলে দাঁড়ায়। আমি বিশ্বাস করি, পঁচাত্তরের এ ভয়ংকর রক্তকাণ্ড না ঘটলে বাংলাদেশ বহুত্ববাদের উদাহরণ হতো হয়তো; কিন্তু তা সম্ভব হয়নি বিরুদ্ধশক্তির তুলে দেওয়া দেয়ালের কারণে। এখন বাংলাদেশের শক্তিশালী অংশটি হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। তারা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, তারা মেধা দিয়ে জীবনযুদ্ধে বিজয়লাভের চেষ্টা করছে। তারা তাদের পূর্বসূরিদের মতো গায়ের জোরে কিংবা রাষ্ট্রযন্ত্রকে দিয়ে সংখ্যার কারণে যারা দুর্বল তাদের প্রাপ্য ছিনিয়ে নেওয়ার মতো নোংরামিতে বিশ্বাস করতে পারে না বলে আমি বিশ্বাস করি। তার পরও রাষ্ট্র বা সরকার যদি সামান্য সংযত ও কঠোর হয়, তাহলে এই নতুন প্রজন্মকে দিয়েই বহুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে। এ ক্ষেত্রে কেবল সচেতনতা ও সদিচ্ছারই প্রয়োজন, বাকি কোনো কিছুরই আসলে প্রয়োজনীয়তা তেমন নেই। ১৯৭১ সালে কুণ্ডেশ্বরী হত্যাকাণ্ড কিংবা দেশের ভেতর ঘটে যাওয়া এ রকম বহু কুখ্যাত হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হলে নিশ্চয়ই এ কথা নতুন প্রজন্মের মানুষও বিশ্বাস করতে শুরু করবে যে অন্যায়ের আসলে ক্ষমা নেই, রাষ্ট্র এখানে অত্যন্ত কঠোর। সাকা চৌধুরীকে গ্রেপ্তার তাই আসলে নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। এখন কেবল প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা, সততা ও জনগণের ধৈর্য এবং এসবের মিশ্রণে বাংলাদেশে ক্রমেই একটি বহুত্ববাদে বিশ্বাসী ব্যক্তি-শ্রেণী, সমাজ, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে_সেই স্বপ্নই এ পূর্ণিমার ধবল জ্যোৎস্না বারবার বলছে।
ঢাকা, ২০ ডিসেম্বর ২০১০, সোমবার
================================
শিক্ষানীতি ২০১০, পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি এবং জাতীয় স্বার্থ  চীন-ভারত সম্পর্ক এবং এ অঞ্চলে তার প্রভাব  নারী লাঞ্ছনার সর্বগ্রাস  একজন এস এ জালাল ও মুক্তিযুদ্ধের তথ্যভাণ্ডার  গল্প- স্বপ্নের মধ্যে কারাগারে  গল্পিতিহাস- কাঁথা সিলাই হইসে, নিশ্চিন্ত  ‘এখন প্রাধান্য পাচ্ছে রম্যলেখা'  অকথিত যোদ্ধা  কানকুনের জলবায়ু সম্মেলন, বাংলাদেশের মমতাজ বেগম এবং আমার কিছু কথা  নাপাম বোমা যা পারেনি, চ্যালেঞ্জার ও আব্রাম্‌স্‌ ট্যাংক কি তা পারবে?  ঠাকুর ঘরে কে রে...!  ষড়যন্ত্র নয়, ক্ষুধা ও বঞ্চনাই আন্দোলনের ইন্ধন  বাহাত্তরের সংবিধানের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বাধা কোথায়?  ড.ইউনূসের দুঃখবোধ এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা  গীতাঞ্জলি ও চার্লস এন্ড্রুজ  গল্প- তেঁতুল  একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের পুস্তক প্রকাশনা  গল্প- বট মানে গরুর ভুঁড়ি  গল্প- কিশলয়ের জন্মমৃত্যু  গল্প- মাকড়সা  দুর্নীতি প্রতিরোধে আশার আলো  জাগো যুববন্ধুরা, মুক্তির সংগ্রামে  ঢাকা নগর ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন প্রয়োজন  মারিও বার্গাস য়োসার নোবেল ভাষণ- পঠন ও কাহিনীর নান্দীপাঠ  লন্ডন পুলিশ জলকামানও নিল না  রাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জ ও যুদ্ধাপরাধী বিচারের দায়বদ্ধতা  পোশাক শিল্পে অস্থিরতার উৎস-সন্ধান সূত্র  বাতাসের শব্দ  গোলাপি গল্প  বজ্র অটুঁনি অথবাঃ  উদ্ভট উটের পিঠে আইভরি কোস্ট  আনল বয়ে কোন বারতা!  ফেলানীর মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গ- নিজ ভূমেই প্রশ্নবিদ্ধ ভারতের মানবিক চেহারা  বাজার চলে কার নিয়ন্ত্রণে  উঠতি বয়সের সংকট : অভিভাবকের দায়িত্ব  বিকল্প ভাবনা বিকল্প সংস্কৃতি  অন্ধত্ব ও আরোগ্য পরম্পরা  খুলে যাক সম্ভাবনার দুয়ার  কক্সবাজার সাফারি পার্কঃ প্রাণীর প্রাচুর্য আছে, নেই অর্থ, দক্ষতা  জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের গুপ্ত জীবন  ছাব্বিশটি মৃতদেহ ও একটি গ্রেপ্তার  ৩৯ বছর পরও আমরা স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি


দৈনিক কালের কন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ মাসুদা ভাট্টি
সম্পাদক, একপক্ষ

এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.