সঞ্চয়পত্র বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে

চলতি ২০১০-১১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সঞ্চয়পত্র আর মেয়াদি বন্ডের নিট বা প্রকৃত বিক্রি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
আলোচ্য সময়ে এক হাজার ৯৬৯ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ও বন্ড বিক্রি হয়েছে। আর ২০০৯-১০ অর্থবছরের একই সময়ে বিক্রির পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
এর মধ্যে গত ডিসেম্বর মাসে প্রকৃত সঞ্চয়পত্র বিক্রি ঋণাত্মক পর্যায়ে ছিল। অর্থাৎ এই মাসে যেটুকু সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে আগে বিক্রীত সঞ্চয়পত্রের মূল পরিশোধ করতে গিয়ে। ডিসেম্বর মাসে এক হাজার ৪০৭ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। আর এক হাজার ৫০৯ কোটি টাকা মূল হিসাব পরিশোধ করা হয়েছে। অর্থাৎ জমা আমানত থেকে বাড়তি ৯৮ কোটি টাকা দিতে হয়েছে সঞ্চয় পরিদপ্তরকে। জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নির্দিষ্ট সময় বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে ওই সময়ের আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করার মাধ্যমে গ্রাহকদের মূল ফেরত দেওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকেই নিট বা প্রকৃত বিক্রি ধরা হয়।
জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সুদের হার হ্রাস ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া গত ডিসেম্বর মাসের শুরুতে সঞ্চয়পত্র ভেঙে শেয়ারবাজারেও বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে গেছেন অনেকে।
তাঁরা আরও জানান, সঞ্চয়পত্রের আয়ের ওপর ১০ শতাংশ উৎ সে কর বলবৎ থাকায় বহু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী আর সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন না।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছর থেকে চালু হওয়া পরিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি ব্যাপকভাবে বেড়েছে, আর মূল পরিশোধের চাপও কম। অন্য সঞ্চয়পত্রের মূল পরিশোধের চাপ বেড়ে যাওয়ায় পরিবার সঞ্চয়পত্রের বিক্রীত অর্থ দিয়েই তা নির্বাহ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, আলোচ্য সময়ে দুই হাজার ৪৫৯ কোটি টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। আর মূল পরিশোধ হয়েছে মাত্র ২৯ কোটি টাকা।
জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মাসে নয় হাজার ১৩৯ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র ও বন্ড বিক্রি হয়েছে। একই সময় মূলধন ওঠানো হয়েছে সাত হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। এতে নিট বিনিয়োগ বা বিক্রি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা।
তবে সুদের অর্থ পরিশোধ করতে বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়। চলতি অর্থবছর সঞ্চয়পত্র ও বন্ডের সুদ পরিশোধের জন্য রাখা হয়েছে সাত হাজার ৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাই-ডিসেম্বর মাসে সুদ বাবদ পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়ায় তিন হাজার দুই কোটি টাকা।
জুলাই-ডিসেম্বরে প্রতিরক্ষা সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও তিন বছর মেয়াদি জাতীয় বিনিয়োগ বন্ডের নিট বিক্রি ঋণাত্মক পর্যায়ে রয়েছে।
চলতি অর্থবছর থেকে প্রতিরক্ষা সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এতে আর নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। শুধু মূল পরিশোধ হচ্ছে। ছয় মাসে মূল পরিশোধ হয়েছে ২০১ কোটি টাকা।
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা আর মূল পরিশোধ করতে হয়েছে দুই হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা।
জনপ্রিয় পেনশনার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৫৫ কোটি টাকার আর ৩৫০ কোটি টাকার মূল পরিশোধ হয়েছে। এতে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০৫ কোটি টাকা।
এ ছাড়া জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর পরিচালিত বাংলাদেশ প্রাইজবন্ড, ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, তিন বছর মেয়াদি জাতীয় বিনিয়োগ বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড—এই পাঁচটি বন্ডের নিট বিক্রি হয়েছে ৭০ কোটি টাকা। জুলাই-ডিসেম্বর মাসে ৫৫০ কোটি টাকার বন্ড বিক্রি হয়েছে। আর মূল পরিশোধ হয়েছে ৪৮০ কোটি টাকা।

No comments

Powered by Blogger.