ঘাটতি পুষিয়ে নিতে ব্যয় সংকোচনের বাজেট ঘোষণা ওবামার

বিশাল অর্থনৈতিক ঘাটতি পুষিয়ে নিতে উন্নয়ন ও আবাসন খাতে ব্যয় কমিয়ে ২০১২ সালের জন্য বাজেট ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। প্রস্তাবিত এই বাজেটের পরিমাণ ৩ দশমিক ৭৩ ট্রিলিয়ন ডলার, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ২ দশমিক ৪ শতাংশ কম।
গত সোমবার ওবামা এই বাজেট ঘোষণা করেন। এই বাজেটের ফলে ১০ বছরে ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে ওবামার প্রশাসন মনে করে।
উন্নয়ন ও আবাসন খাতে ব্যয় কমানোয় দারুণ চটেছে সাধারণ মার্কিনরা। তারা বলেছে, এই দুই খাতে বাজেট কমানোয় দরিদ্র মার্কিনরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ঘাটতি কমাতে ওবামা যতটা ব্যয় সংকোচনের নীতি গ্রহণ করেছেন, রিপাবলিকানরা তার চেয়েও বেশি কৃচ্ছ্রতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এর ফলে প্রস্তাবিত বাজেট কংগ্রেসে অনুমোদন নিয়ে ওবামাকে বিরোধীদের চাপের মুখে পড়তে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মার্কিনদের ব্যয় কমানোর আহ্বান জানিয়ে ওবামা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব নীতিতেই টিকে থাকবে। তিনি এ-ও বলেন, ‘তবে ব্যাপক আকারে বাজেট কমিয়ে আমরা ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করতে পারি না।’
বাজেট বিবরণীতে ২০১১ অর্থবছরে মোট ঘাটতি ১ দশমিক ৬৪৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে পরের অর্থবছরেই অর্থাৎ ২০১২ সালে এই ঘাটতি ১ দশমিক ১০১ ট্রিলিয়ন ডলারে কমে আসবে। ২০১২ অর্থবছর শুরু হবে আগামী ১ অক্টোবর থেকে।
প্রস্তাবিত বাজেটের হিসাব অনুযায়ী, ঘাটতি কমলে ২০১৫ সাল নাগাদ এই ঘাটতি চলতি বছরের ১০ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমে ৩ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়াবে। এভাবে ২০১৩ সালের জানুয়ারি নাগাদ ঘাটতি অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে প্রেসিডেন্ট আশা করছেন।
ডিপার্টমেন্ট অব হাউজিং ফর মন্টগোমারি কাউন্টির পরিচালক রিক নেলসন বলেছেন, উন্নয়ন ও আবাসন খাতে বাজেট কমালে উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। এতে সমাজের নিচু স্তরের লোকজনকে সাহায্য করাটা দুরূহ হয়ে পড়বে।
রিপাবলিকানরা কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে ব্যয় সংকোচনের যে প্রস্তাব করেছে, তার চেয়ে ওবামা ঘোষিত বাজেটের আকার অনেক বড়। রিপাবলিকানরা আবাসন খাত বাবদ ১৬০ কোটি ডলার, স্বল্প আয়ের মানুষের বাড়ি ভাড়া বাবদ ১৪৭ কোটি ডলার ও স্থানীয় উন্নয়ন বাবদ দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনার প্রস্তাব করেছে।
ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অব এইচইউডি টেনান্টসের (এনএএইচটি) প্রধান মাইকেল কেইন রিপাবলিকানদের এই বাজেট প্রস্তাবের সমালোচনা করে বলেন, এটা হলো ‘গরিবের সর্বনাশের’ পরিকল্পনা। এটা স্বল্প আয়ের মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘টার্গেট করে বাজেট সংকোচন করা হচ্ছে। তারা গরিবের স্বার্থপরিপন্থী কাজ করছে।’
তবে হাউস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস কমিটির সভাপতি হল রজার্স বলেছেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটের সবকিছু অনেকের কাছে যুৎসই মনে নাও হতে পারে। তবে আমি মনে করি, একটা রাষ্ট্রের স্থিতিশীল পর্যায়ে ফিরে আসতে এই বাজেট সংকোচন ন্যায়সংগত।’ তবে তিনি বলেন, ‘আমরা ঘাটতি পোষাতে চাইলে সমাজের অরক্ষিত লোকজনকে টার্গেট না করেও অন্য অনেক উপায়ে তা করতে পারি।’
প্রস্তাবিত এই বাজেট এখন কংগ্রেসে পাঠানো হবে।

No comments

Powered by Blogger.