সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বন্দরের রেকর্ড অর্জন

অনেক সীমাবদ্ধতা। আছে ব্যর্থতাও। তবু এসব ছাপিয়ে কেবল কায়িক শ্রমনির্ভর প্রযুক্তি দিয়েই কনটেইনার পরিবহনের রেকর্ড গড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। কনটেইনার পরিবহনের হার বাড়ার দিক থেকে এটি এখন বিশ্বের সেরা ১০টি বন্দরের একটি।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের রেকর্ডের এই তালিকায় নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে, এক দিনে এক জাহাজ থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ ভোগ্যপণ্য খালাস, এক মাসে সর্বোচ্চ কনটেইনার ওঠানো-নামানো। এ ছাড়া কনটেইনার ওঠানো-নামানোর সংখ্যার দিক থেকেও বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের এই বৃহত্তম সমুদ্রবন্দরটি।
চট্টগ্রাম বন্দরে দুই বছর সাত মাস দায়িত্বে থাকাকালে এসব অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করেছেন এর বিদায়ী চেয়ারম্যান কমোডর আর ইউ আহমেদ। বন্দর ত্যাগ করার আগে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্দরে কনটেইনার পরিবহনের হার বাড়ার অর্থ হচ্ছে দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে।’ তিনি জানান, তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানি বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও। এর প্রতিফলন ঘটছে কনটেইনার পরিবহনের প্রবৃদ্ধিতে।
গণতান্ত্রিক পরিবেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হওয়ায় আগামী দিনেও এ রকম অর্জন আরও বাড়বেই—দৃঢ় মন্তব্য বিদায়ী চেয়ারম্যানের।
বন্দর পরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন্দর জেটিতে এক দিনে এক জাহাজ থেকে সর্বোচ্চ ভোগ্যপণ্য খালাসের নতুন রেকর্ড হয়েছে গত শুক্রবার। এদিন সরকারি খাদ্য বিভাগের চালবাহী জাহাজ এমভি কোরাল থেকে বস্তাভর্তি চাল খালাস হয়েছে চার হাজার ২৫৭ দশমিক ৯৫ টন।
পরিবহন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক গোলাম ছরওয়ার প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন, ‘বন্দরের পরিসংখ্যানে জেটিতে এক দিনে এত বেশি ভোগ্যপণ্য খালাসের তথ্য নেই।’ এর আগে ১৯৯৪ সালের ২ মার্চ এমভি লুনা-২ নামের জাহাজ থেকে এক দিনে সর্বোচ্চ চার হাজার ৯৯ টন ভোগ্যপণ্য খালাস হয়েছিল।
গত অর্থবছরে বন্দরের প্রতিটি জাহাজ থেকে দিনে গড়ে ব্যাগভর্তি পণ্য খালাসের পরিমাণ ছিল এক হাজার ২৪৬ টন।
বিশ্বের সেরা বন্দরগুলোতে চট্টগ্রামের চেয়ে অনেক বেশি পণ্য খালাসের দৃষ্টান্ত আছে। তবে তারা পণ্য খালাস করে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরে এই অর্জন হয়েছে কার্যত কায়িক শ্রমনির্ভর প্রযুক্তি দিয়ে।
বন্দরের খাদ্য বিভাগের চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক মো. সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, চার গ্যাং শ্রমিক, জাহাজের তিনটি ক্রেন ও একটি শোর ক্রেনের সাহায্যে সরকারি আমদানির এই চাল খালাস হয়েছে। ক্রেনের সাহায্যে নামিয়ে সরাসরি ট্রাকে বোঝাই করতে পর্যাপ্ত ট্রাকও পাওয়া গেছে। এসবের সমন্বয়ে এমন অর্জন সম্ভব হয়েছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে কনটেইনার পরিবহনের হার বাড়ার দিক থেকে বিশ্বের সেরা দশের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ছিল নবম। তবে ২০১০ সালে তথ্য এখনো প্রকাশিত হয়নি।
তবে চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র দাবি করেছে, এখানে কনটেইনার পরিবহনের হার ২০০৯ সালে যেখানে সাড়ে ৮ শতাংশ ছিল, সেখানে ২০১০ সালে তা ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছে।
আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব পোর্ট অথরিটিজ, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব পোর্টস অ্যান্ড হারবারস ও কার্গো সিস্টেমস প্রভৃতি সংস্থা বিশ্বের সেরা ১০০ বন্দর নিয়ে বছরভিত্তিক র্যাঙ্কিং প্রকাশ করে থাকে। এসব সংস্থার তালিকা অনুযায়ী, ২০০৮ সালে সংখ্যার দিক থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর বিবেচনায় চট্টগ্রাম বন্দর ৯৪তম অবস্থানে ছিল, যা ২০০৯ সালে হয় ৯০তম। ২০১০ সালের বিশ্ব র্যাঙ্কিং এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে নতুন তালিকায় চট্টগ্রাম আরও এগিয়ে থাকবে বলে মনে করেন বন্দরের সচিব সৈয়দ ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ।
মাসভিত্তিক সর্বোচ্চ কনটেইনার ওঠানো-নামানোর সর্বোচ্চ অর্জন হয়ে গেল জানুয়ারি মাসে। এ মাসে কনটেইনার ওঠানো-নামানো হয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার ৩০০ ইউনিট (টিইইউ)।
বন্দরের টার্মিনাল ব্যবস্থাপক এনামুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের ইতিহাসে এক মাসে এত বেশি কনটেইনার ওঠানো-নামানো হয়নি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা বাড়লে চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা আরও বাড়বে।

No comments

Powered by Blogger.