আমেরিকায় গত বছর রপ্তানি বেড়েছে ১৬%

বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানি ২০১০ সালে তার আগের বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্টোভাবে বললে, আমেরিকায় বাংলাদেশের রপ্তানি গত বছর এই হারে বেড়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০১০ সালে আমেরিকা বাংলাদেশ থেকে ৪২৯ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। আর ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৭০ কোটি ডলার। আর ২০০৮ সালে এই আমদানির পরিমাণ ছিল ৩৭৪ কোটি ৮৪ লাখ ডলার।
অর্থাৎ বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি তার প্রধান বাজারে আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।
পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, এই প্রথমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বার্ষিক সামগ্রিক রপ্তানি ৪০০ কোটি ডলার অতিক্রম করল।
২০০৯ সালে রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার পেছনে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়াই মূল কারণ ছিল। মন্দাজনিত কারণে চাহিদা ও দাম কমে যাওয়া পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
২০১০ সালে আমেরিকা থেকে পণ্য আমদানিও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সালে যেখানে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৪৩ কোটি ৪৬ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল, সেখানে গত বছর এই আমদানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ কোটি ৭২ লাখ ডলার। আর ২০০৮ সালে ছিল ৪৬ কোটি ৮১ লাখ ডলার।
সামগ্রিকভাবে আমেরিকার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় পণ্য বাণিজ্যে ভারসাম্য বাংলাদেশের অনুকূলে রয়েছে। ২০১০ সালে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বাংলাদেশের উদ্বৃত্ত ছিল ৩৭১ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। আর ২০০৯ সালে এই বাংলাদেশের উদ্বৃত্ত ছিল ৩২৬ কোটি ৫১ লাখ ডলার। অবশ্য ২০০৮ সালে এই উদ্বৃত্ত ছিল ৩২৮ কোটি ডলার।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্রায় সব পণ্যকেই উচ্চহারে আমদানি শুল্ক দিয়ে প্রবেশ করতে হয়।
বাংলাদেশি পণ্য আমেরিকার বাজারে প্রবেশ করতে গড়ে ১৫ শতাংশ হারে শুল্কারোপের মুখে পড়ে। কম্বোডিয়ার পণ্যের ক্ষেত্রে দিতে হয় ১৭ শতাংশ। অথচ একই সময়ে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য এক শতাংশের কম হারে শুল্ক প্রদান করে।
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডেমোক্রেটিক লিডারশিপ কাউন্সিলের (ডিএলসি) তথ্যানুসারে, ২০১০ সালের প্রথম সাত মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) বাংলাদেশ থেকে ২৩০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানির বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ৩৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার আদায় করেছে আমদানি শুল্ক হিসেবে। আর একই সময়ে কম্বোডিয়া থেকে ১২০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানির বিপরীতে শুল্ক আদায় করা হয়েছে সাড়ে ১৯ কোটি ডলারের।
অথচ একই সময়ে যুক্তরাজ্য থেকে দুই হাজার ৭৯০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ পণ্য আমদানির বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মাত্র সাড়ে ১৯ কোটি ডলারের আমদানি শুল্ক আদায় করেছে। শুল্কের হার মাত্র দশমিক ৭০ শতাংশ।
আবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সমন্বিতভাবে ১৭ হাজার ৭৪০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানির বিপরীতে আদায় করা শুল্কের পরিমাণ মাত্র ১৯৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। গড় শুল্কের হার মাত্র এক দশমিক ১০ শতাংশ।
গত বছর ডিসেম্বর মাসে জেনেভায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) এশিয়া ও আফ্রিকার সাংবাদিকদের এক কর্মশালায় একটি অধিবেশনে এসেছিলেন ডব্লিউটিওতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইকেল পুংকে। তাঁর কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ার পরও কেন বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়াকে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য থেকে উচ্চহারে ও বেশি পরিমাণে শুল্ক দিতে হয়?
জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে এটুকুই বলেছিলেন, ডব্লিউটিওর হংকং ঘোষণার আলোকে আমেরিকা স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে ছাড় দিয়ে আসছে। হংকং ঘোষণায় এলডিসিগুলো থেকে মোট উৎ পাদিত পণ্যের ৯৭ শতাংশকে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিতে উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাস্তবে অবশ্য আমেরিকা ছাড়া আর সব উন্নত দেশই বিভিন্নভাবে এলডিসির শতভাগ পণ্যকে বাজার সুবিধা দিয়ে দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.