আলোর রাজ্যে অন্য আলো

এতটা চাপে আগে কখনো কি ভুগেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল? দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে চাপ আছে। আছে ভালো খেলার চাপ। মাঠের এসব চাপের সঙ্গে যোগ হয়েছে বিশ্বকাপের টিকিটের চাপও। দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের এই একটা ‘অপকারিতা’ খুঁজে পেলেন জাতীয় দলের ব্যাটসম্যান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ প্রতিটি ম্যাচের জন্য পাঁচটি করে সৌজন্য টিকিট পেয়েছেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। জনসংযোগে সবচেয়ে দুর্বল খেলোয়াড়টির পক্ষেও এত কমসংখ্যক টিকিট দিয়ে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন, আশরাফুলের পক্ষে তো অসম্ভবই। কাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে বিশ্বকাপের চাপ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সবার আগে এই চাপটার কথাই বললেন আশরাফুল, ‘বিশ্বকাপ দেশে হচ্ছে। সবাই শুধু টিকিট চায়। কিন্তু এত কম টিকিট পেয়েছি...খুব চাপে আছি।’ আশরাফুলদের জন্য সুখবর, অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নাকি ক্রিকেটারদের জন্য আরও কিছু টিকিটের সুপারিশ করেছেন বোর্ডের কাছে।
আশরাফুলের মতো টিকিটের চাপ আছে দলের অন্য খেলোয়াড়দের ওপরও। তবে এটাকে মধুর সমস্যা ধরে নিয়ে সবাই এখন বিশ্বকাপেই মনোযোগী। আর এই চাপের অন্য অর্থ তো মানুষের ভালোবাসাও!
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে ক্রিকেটারদের প্রতি ভালোবাসা আর সমর্থন জানাচ্ছে গোটা দেশের মানুষ। পরশু সন্ধ্যায় জাতীয় দলের খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের ডেকে তাঁদের পাশে থাকার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, ‘টাইগাররা যেন টাইগারের মতো খেলে।’ শুধু তা-ই নয়, ব্যর্থতায়ও দলের সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। ‘উনি (প্রধানমন্ত্রী) সব সময় ইতিবাচক কথা বলে আমাদের উৎ সাহ দেন। এটা ক্রিকেটারদের জন্য অনেক বড়’—প্রধানমন্ত্রীর কথায় যেন সব চাপই উড়ে গেছে আশরাফুলের।
দেশের মানুষ বিশ্বকাপ নিয়ে কতটা উন্মাদনায় ভুগছে, সেটা পরশু রাতেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। রাজপথের জনস্রোত মিশেছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। রাতের অন্ধকারেও লাল-সবুজের সমারোহ খুঁজে নিতে অসুবিধা হয়নি বিশ্বকাপের আলোয়। ছবি তোলা, আড্ডা আর ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ স্লোগানে মধ্যরাতে জেগেছিল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম।
কাল দুপুরে অনুশীলন করে মিরপুর স্টেডিয়াম থেকে বের হওয়ার সময় সে রকম উৎ সবের মধেই পড়ে গেলেন ওপেনার ইমরুল কায়েস। স্টেডিয়ামের গেটে দর্শকদের কৌতূহলী ভিড়। ‘বলে বোঝাতে পারব না আমার কী রকম লেগেছে...অসাধারণ! মানুষ বিশ্বকাপের জন্য এভাবে অপেক্ষা করছে!’—কিছুটা আবেগই যেন ছুঁয়ে গেল ইমরুলের কণ্ঠ। বিশ্বকাপ সামনে রেখে আলোকিত নগর, প্রত্যাশার ঢেউ, কোনোটার অর্থই অবশ্য ইমরুলের কাছে চাপ নয়, ‘এটা অন্য রকম একটা অনুভূতি। চাপ নয়, আমি বরং এসব উপভোগই করছি। আর চাপ-টাপ যা নেওয়ার তা তো জাতীয় দলে প্রথম খেলতে আসার দিনই নিয়েছি।’
বিশ্বকাপ নিয়ে মানুষের উন্মাদনা উপভোগ করছেন পেসার রুবেল হোসেনও। প্রত্যাশার এই চাপ মেনে নিয়েই এগোতে চান তিনি, ‘চাপ তো থাকবেই। কিন্তু এটা মাথায় রাখা যাবে না। মানুষের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করতে হবে।’ আরেক পেসার শফিউল ইসলামের কাছে পুরো ব্যাপারটাই ঘোরের মতো। দেশের মাটিতে খেলা বলে বিশ্বকাপের চাপটা বেশি মানছেন তিনিও, ‘আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব—সবার এক কথা, ভালো খেলতে হবে। এত আয়োজন, এত সাজসজ্জা সার্থক হবে যদি আমরা ভালো খেলি।’ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এই তরুণ পেসারের সঙ্গী প্রস্তুতি ম্যাচের পারফরম্যান্স, ‘দুটি ম্যাচেই ভালো বল করেছি। এটা আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে।’
শাহরিয়ার নাফীসের এটা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। দেশের মাটিতে খেলা হলেও এই বিশ্বকাপটাই বরং চাপহীন মনে হচ্ছে তাঁর কাছে, ‘আমার তো মনে হচ্ছে, দেশের মাটিতে খেলা বলে চাপ এবারই কম। বিশ্বকাপ খেলতে যাব, কী হয় না হয়—এসব নিয়ে আগেরবারের মতো টেনশন নেই। সবাই পরিচিত, সব মাঠ পরিচিত। আমার তো ভালোই লাগছে।’
বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ দিয়ে কাল শুরু হচ্ছে আসল বিশ্বকাপ। এত আয়োজন, এত প্রত্যাশার মধ্যে বিশ্বকাপের আগে ক্রিকেটারদের নির্ভার মুখ আশা জাগায়। রাজপথের আলোকসজ্জার সঙ্গে তাঁদের আত্মবিশ্বাসের রোশনাইও দ্যুতি বাড়াচ্ছে বাংলাদেশে প্রথম বিশ্বকাপের।

No comments

Powered by Blogger.