ট্রটের বিস্ময়, বিস্মিত প্রিয়র

বিস্ময় শব্দটি দুজনের কাছে নতুন। একজন বিস্ময়ের পর বিস্ময় উপহার দিয়ে চলেছেন। আরেকজন নিজেই বিস্মিত!
অ্যাশেজ শেষে যখন ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হলো, তখন টি-টোয়েন্টি খেলছেন ম্যাট প্রিয়রও। তবে বিগ ব্যাশে। ইংল্যান্ডের এক নম্বর টেস্ট উইকেটকিপার যে অনেক দিন ধরেই অপাঙেক্তয় রঙিন পোশাকে! বিগ ব্যাশটা খেলেই দেশে ফিরে যাবেন, মাস দুয়েকের ছুটি কাটাতে। ইচ্ছে ছিল ঘুরে বেড়াবেন, আর বাড়িতে বসে আয়েশ করে বিশ্বকাপ দেখবেন। সেই প্রিয়রই কি না নিজেকে আবিষ্কার করলেন বিশ্বকাপ দলে!
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে থিতু হতে একদম সময় নেননি জোনাথন ট্রট। অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি, এরপর দ্রুতই আপন করে নিয়েছেন ইংল্যান্ডের তিন নম্বর জায়গাটা। ১৮ টেস্ট শেষে নামের পাশে ৫ সেঞ্চুরি, গড় ৬১.৫৩। কমপক্ষে ২০ ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ট্রটের চেয়ে বেশি গড় আছে ক্রিকেট ইতিহাসে কেবল স্যার ডন ব্র্যাডম্যানেরই। বিস্ময়-জাগানিয়া পরিসংখ্যান, কিন্তু আঁটসাঁট রক্ষণ ও নিখুঁত টেকনিক মিলিয়ে তবু ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়। কিন্তু এ ধরনের ব্যাটসম্যান কি এই যুগের ওয়ানডের সঙ্গে তাল মেলাতে পারবেন?
১৮ ওয়ানডেতে ৩ সেঞ্চুরি আর ৬ ফিফটি, গড় ৫৩.৬২। পরের ২ ইনিংসে ৪২ রান করতে পারলে ভেঙে যাবে ওয়ানডেতে দ্রুততম হাজার রানের বিশ্ব রেকর্ড। ওয়ানডের ট্রট চমকে দিয়েছেন ক্রিকেট-বিশ্বকেই। রহস্য কী এমন সাফল্যের? ট্রট জানালেন, রহস্য কোনো রহস্যময় কিছু না, ‘আমি যে কাজটা পারি, সেটাই ঠিকভাবে করার চেষ্টা করেছি। নিজের ব্যাটিংয়ে খুব বেশি পরিবর্তন আনিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটেও এভাবে খেলেই প্রচুর রান করেছি, নিজের মতো করে খেলেই। বেসিকটা সব সময় ঠিক রাখি। কোচ, ব্যাটিং কোচ যা বলেন, সেসব মেনে চলার চেষ্টা করি। এই তো...।
বিস্ময়ের ধাক্কা খানিকটা কমে এসেছে। প্রিয়রের মনজুড়ে এখন প্রথম বিশ্বকাপ খেলার রোমাঞ্চ, ‘ভীষণ রোমাঞ্চিত আমি। বিশ্বকাপটা সব সময়ই অসাধারণ। আর সেটা যদি হয় উপমহাদেশে, এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না। খেলাটার জন্য এখানে যে আবেগ, যে ভালোবাসা, যে উত্তেজনা এর কোনো তুলনা হয় না।’
প্রিয়র তো রোমাঞ্চিত, কিন্তু স্টিভ ডেভিসের যে হূদয় ভেঙে গেল! গত সেপ্টেম্বরে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬৭ বলে ৮৭ রান করার পর রঙিন পোশাকে জায়গা পাকা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ফর্ম হারালেন বড় বাজে সময়ে। অ্যাশেজে প্রিয়রের দুর্দান্ত ফর্মটাও কাল হলো ডেভিসের জন্য। শেষ হয়ে গেল বিশ্বকাপ-স্বপ্ন। প্রিয়রের কিন্তু সতীর্থের জন্য সহানুভূতি নেই বরং তিনি দারুণ পেশাদার, ‘ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পুরোটাই আমাকে অনেকবার দলে আসা-যাওয়া করতে হয়েছে। এটা ইংল্যান্ড উইকেটকিপারদের পার্ট অ্যান্ড পার্সেল। ব্যাপারটা পরিষ্কার, যদি ভালো ব্যাটিং করেন, ভালো কিপিং করেন, তাহলে দলে থাকবেন। ভালো না করলে নয়।’
তো, কত দিন চলবে এই আসা-যাওয়া? এবারই যেমন ফেরার পর প্রথম দুই ম্যাচে শূন্য। পরের ম্যাচে একটা ফিফটি করায় তবু স্বস্তি পেয়েছেন, কিন্তু পরের তিন ম্যাচে আবার ব্যর্থ। এভাবে চলতে থাকলে তো আবার বাইরে যেতে সময় লাগবে না! প্রিয়র জানালেন, এটাই এখন তাঁর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। টেস্টের মতো ওয়ানডে দলেও জায়গাটা নিরঙ্কুশ করতে চান এই বিশ্বকাপেই।
চ্যালেঞ্জ একটা ট্রটেরও আছে। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ায় রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছেন। এবার উপমহাদেশের উইকেটে স্পিন-পরীক্ষা। নিজের এই পরীক্ষা নেওয়ার জন্য নাকি ট্রটেরও তর সইছে না!

No comments

Powered by Blogger.