গাজীপুর থেকে শিক্ষা নিন by মোশারফ বিন কামাল

খুলনা, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয় আওয়ামী লীগের জন্য ছিল একটা সতর্কবার্তা। ৬ জুলাই গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হারাটা বলা চলে চূড়ান্ত সতর্কবার্তা।
গাজীপুর নির্বাচনের পূর্ববর্তী চার সিটিতে পরাজিত হয়ে গাজীপুর সিটির জন্য ব্যাপক উদ্দীপনা ও প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচন করার জন্য মাঠে নামা সত্ত্বেও বিরোধীদলীয় সমর্থন প্রার্থী অধ্যাপক এমএ মান্নানের কাছে আওয়ামী লীগের সমর্থন প্রার্থী আজমত উল্লার পরাজয় সে কথাই জানান দেয়। চার সিটি কিংবা গাজীপুর কোনোটায়ই স্থানীয় নির্বাচন হয়নি, জাতীয় ইস্যুই নির্বাচনগুলোয় প্রভাব ফেলেছে। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতাটি ছিল সরকারি জোটের সঙ্গে বিরোধী জোটের। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায়, প্রার্থী হিসেবে এই পরাজয়ের জন্য দীর্ঘ ১৮ বছরের পৌর মেয়র আজমত উল্লার দায় একার নয়। মহাজোট সরকারেরও। ইতিহাস বলে গাজীপুরের সব সংসদীয় আসন ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। এমনকি মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যানের পদগুলোও ছিল আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের। স্থানীয় নেতাদের মধ্যকার কোন্দল, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সীমাহীন টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বেপরোয়া আচরণ। তা ছাড়া বর্তমান সরকারের সাড়ে চার বছরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতা নির্বাচনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। তার মধ্যে সরকারের নানা মহলে দুর্নীতি, জনসাধারণের কাছ থেকে নির্বাচিত নেতাকর্মীদের যোগাযোগের বিচ্ছিন্নতা, পদ্মা সেতু ও শেয়ারবাজারের কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি ও হলমার্ক জালিয়াতি ইত্যাদি। এ ছাড়া সারাদেশে হত্যা, গুম ও নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে সরকারের একরোখা আচরণ, নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বর্তমান সরকারের মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়িও এই নির্বাচনে পরাজয়ের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। তাই আওয়ামী লীগ সরকার তাদের শেষ সময়ে এসে হলেও তাদের যে নীতিগত ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা পুনর্বিবেচনা করে দেখা উচিত। বিশেষত তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা নিয়ে যা করা হচ্ছে, তা থেকে বের হয়ে আসা উচিত। জনগণ এই ব্যবস্থাকে সমর্থন করে। তাই সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি এই বিষয়ে তাদের আরেকবার পুনর্বিবেচনা করে দেখার।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন আশা করা যায় রাজনীতিবিদদের চিন্তার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। নির্বাচনের ফলাফল পরাজিত ক্ষমতাসীনদের বোধোদয় ঘটাবে এবং বিজয়ী বিরোধী দলকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে উৎসাহিত করবে। এখনই উপযুক্ত সময় উভয় দলের সম্ভাব্য সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়াতে সমঝোতা উদ্যোগ করা। সে ক্ষেত্রে মূল ভূমিকার কাজটি সরকারি দলকেই করতে হবে। আর বিরোধী দলকেও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

স মোশারফ বিন কামাল : শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.