পবিত্র কোরআনের আলো-ভবিষ্যতের সব কিছুতে 'ইনশাআল্লাহ' বলা চাই

৯৯. ফালাম্মা- দাখালূ 'আলা- য়ূসুফা আ-ওয়া- ইলাইহি আবাওয়াইহি ওয়া কা-লাদখুলূ মিসরা ইনশা-আল্লা-হু আ-মিনীন। সুরা ইউসুফ।
অনুবাদ : ৯৯. এরপর যখন তারা ইউসুফের কাছে পৌঁছল,
তখন তিনি মা-বাবাকে নিজের কাছে স্থান দিলেন* এবং বললেন, আপনারা সবাই মিসরে প্রবেশ করুন। ইনশাআল্লাহ, এখানে আপনারা শান্তিতেই থাকবেন।*
তাফসির : * কোনো বর্ণনায় আছে, হজরত ইউসুফ (আ.) ভাইদের সঙ্গে ২০০ উট বোঝাই করে অনেক আসবাবপত্র, বস্ত্র ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল এর মাধ্যমে গোটা পরিবারের লোকজন ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে মিসরে চলে আসতে পারবে। হজরত ইয়াকুব (আ.) পরিবারসহ মিসরে পৌঁছার সময় তাঁদের লোকসংখ্যা কত ছিল- এ নিয়ে কোনো বর্ণনায় বলা হয়েছে বাহাত্তরজন, কোনো বর্ণনায় লেখা হয়েছে তিরানব্বইজন পুরুষ ও মহিলা ছিল। এদিকে ইয়াকুব (আ.) মিসরে পৌঁছার সময় সে দেশটির নিকটবর্তী হলে ইউসুফ (আ.) ও শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ তাঁদের অভ্যর্থনা জানানোর লক্ষ্যে শহরের বাইরে এগিয়ে আসেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে চার হাজার সশস্ত্র সিপাহিও সামরিক কায়দায় অভিনন্দন জানাতে জমায়েত হলো। সবাই যখন মিসরে ইউসুফ (আ.)-এর ঘরে প্রবেশ করল, তখন তিনি মা-বাবাকে নিজের কাছে জায়গা করে দিলেন। এখানে ইউসুফ (আ.)-এর মা-বাবাকে বিশেষ সম্মান জানানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর বেঁচে থাকা এবং তিনি হজরত ইউসুফ (আ.)-এর পিতা হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কোনো ভিন্ন মত নেই। কিন্তু তাঁর মা তো সেই শৈশবেই ইন্তেকাল করেছিলেন বলে বিভিন্ন বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলে এখানে মা বলে কাকে বা কী বোঝানো হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাব হলো, শৈশবে ইউসুফ (আ.)-এর মায়ের ইন্তেকালের পর তাঁরই এক খালা লাইয়াকে হজরত ইয়াকুব (আ.) বিয়ে করেছিলেন। তিনি একদিকে তাঁর খালা, দ্বিতীয়ত পিতার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে ওঠায় লাইয়াও হজরত ইউসুফ (আ.)-এর কাছে নিজের মায়ের মতোই সম্মানিত ছিলেন। তিনি তাঁকে ঠিক মায়ের মতোই সম্মানও দেখিয়েছেন।
* হজরত ইউসুফ (আ.) শহর থেকে বেরিয়ে উপশহরে চলে গিয়েছিলেন পিতা ইয়াকুব (আ.)-এর নেতৃত্বে আগমনকারী নিজের আত্মীয়স্বজনকে অভ্যর্থনা জানানোর লক্ষ্যে। ইয়াকুব (আ.)-এর ভাইয়েরা ছাড়া খোদ পিতা ইয়াকুব (আ.)সহ পরিবারের অন্য সবাই প্রথমবারের মতো মিসরে এসেছেন। এ কারণে তাঁদের মধ্যে ইতস্তত বোধ করা খুব স্বাভাবিক বিষয় ছিল। তাই ইউসুফ (আ.) পরিবারের সবার উদ্দেশে বললেন, আল্লাহর নামে আপনারা সবাই মিসরে প্রবেশ করুন। এখানে কোনো ভয় নেই। বিশেষ কোনো বিধি-নিষেধও নেই। ইনশাআল্লাহ, এ শহরে আপনারা নিরাপদে ও শান্তিতেই থাকবেন। এখানে লক্ষ করার বিষয় হলো, হজরত ইউসুফ (আ.) শহরের নিরাপত্তা ও শান্তিতে থাকার আশ্বাস দিচ্ছিলেন আত্মীয়স্বজনকে। এ পর্যায়ে তিনি 'ইনশাআল্লাহ' বাক্যটি উচ্চারণ করেছেন। ভবিষ্যতের সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো কাজকর্মের সঙ্গে 'ইনশাআল্লাহ' বাক্যের ব্যবহার করা প্রিয়তম রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এরও সুন্নত। মানবীয় সব প্রস্তুতি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলেও তাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইচ্ছা বা অনুগ্রহ অথবা সহযোগিতা নিশ্চিত না হলে কোনো কাজই কারো পক্ষে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ভবিষ্যতের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিটি পর্বে 'ইনশাআল্লাহ' বাক্যের ব্যবহার করা চাই।
তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন অবলম্বনে হাসানুল কাদির

No comments

Powered by Blogger.