এবার বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার ঘোষণা বি. চৌধুরীর

এবার বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন বিকল্প ধারার সভাপতি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
গতকাল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে তিনি এ ঘোষণা দিলেন। কিছুদিন আগে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে তৃতীয় শক্তি গড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। হোটেল রেডিসনে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবেই সে ঘোষণা দিলেও পরে পিছুটান দেন ড. কামাল হোসেন। কিছুদিন বিরতির পর গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানের সিলভার টাওয়ারে কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নতুন এ ঘোষণা দেন বি. চৌধুরী ও কাদের সিদ্দিকী। সমপ্রতি কয়েক মাস আগে বিকল্প ধারা যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী জোট করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন করার বিষয়ে ঘোষণা দেয়ার পর নতুন জোটের ঘোষণা দিল দলটি। সংবাদ সম্মেলনে বি. চৌধুরী বলেন,  আমরা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতাদের সঙ্গে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং বিকল্প শক্তি হওয়া নিয়ে আলোচনা করেছি। শিগগিরই আপনারা এর ফল দেখতে পাবেন। সাবেক এ প্রেসিডেন্ট বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী মাঝে মধ্যে বড় অগণতান্ত্রিক কথা বলে ফেলেন। এ দেশে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হলে একটি সর্বজনগ্রাহ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই তা হতে হবে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে বিকল্প ধারার আগেও একটা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন এ যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পেলো। আমরা মতের মাধ্যমে পথের সন্ধান করছি। গাজীপুর নির্বাচনে মহাজোট সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সেখানে ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত অনেক লোক আছেন। তারা কেউ মহাজোট সমর্থিত প্রার্থীকে ভোট দেননি। বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠান এর আগে নোবেল পুরস্কার পায়নি। কোন ব্যক্তিও পান নি। একমাত্র ব্যক্তি ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং একমাত্র প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক। অথচ সেই নোবেল বিজয়ীকে অপমান করা হচ্ছে এবং নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া চলছে। প্রতিষ্ঠানের ৫১ শতাংশ শেয়ার কেড়ে নেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে চুপ করে থাকা যায় না। ১৮ দলের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে আন্দোলনে অংশ নেবেন কিনা জানতে চাওয়া হলে বি. চৌধুরী বলেন, এটা ভবিষ্যতে দেখবো। নির্বাচন এসে গেলে সরকারকে ঠেকানোই আমাদের একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়াবে। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী বলেন, মানুষ যে কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় প্রথম হওয়ার জন্য। আমরা তৃতীয় হওয়ার জন্য তৃতীয় শক্তি সৃষ্টি করতে চাই না। আমরা দেশের প্রধান বিকল্প শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে চাই। ‘বাংলাদেশ এখন জ্বলছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাবিয়া দোজখের আগুনের অবস্থা সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নেই। কিন্তু বাংলাদেশ এখন হাবিয়া দোজখের কাছাকাছি পর্যায়ে আছে। যে প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ সরকারে থাকতে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের জন্ম হয়েছিল, সেই একই প্রক্রিয়ায় বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে বিকল্প ধারার জন্ম হয়। তাই এ দুই দলের জন্মের বেদনা প্রায় একই। আমরা উভয় দলই দেশে সুস্থ ধারার রাজনীতি চাই। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন নয়। প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইলে নাকি নির্বাচনই হবে না। এ কথা শুনে আমি মর্মাহত। একজন প্রধানমন্ত্রী নিঃসন্দেহে দেশের সেবক। এ ধরনের ভাষা তার মুখে মানায় না। সমপ্রতি ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মহাজোট সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয়কে অনেকে ১৮ দলীয় জোটের বিজয় হিসেবে দেখতে চান। কিন্তু আমার দলের নেতারা মনে করে, এটা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর খামখেয়ালিপনার পরাজয়। তিনি পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকা আবুল হোসেনকে যে সনদ দিয়েছেন, তা দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। হল-মার্ক, ডেসটিনির দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ রায় দিয়েছে। যখনই মানুষ সুযোগ পাবে তখনই এ ধরনের রায় দেবে। এ বিজয় মোটেও বিএনপির বিজয় নয়। এটা বর্তমান সরকারের এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পরাজয়। বৈঠকে অংশ নেন বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নান, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীক, সহ-সভাপতি নাসরিন কাদের সিদ্দিকী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী,  কোষাধ্যক্ষ আবদুল্লাহ বীরপ্রতীক, বিকল্প ধারা’র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী।

No comments

Powered by Blogger.