সিলেট সিটিতে বকেয়া কর ৫৩ কোটি টাকা by উজ্জ্বল মেহেদী ও সুমনকুমার দাশ

২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুষ্টিমেয় কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়ির মালিক ছাড়া কারও কাছ থেকে কোনো কর আদায় হয়নি। ফলে এ পর্যন্ত ৫৩ কোটি ২৭ লাখ টাকার কর অনাদায়ি রয়েছে।
আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর কর শাখা পুনর্বিন্যাস করতে গিয়ে এ তথ্য পাওয়া যায় বলে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর সূত্র নিশ্চিত করেছে। সিলেটের এই অনাদায়ি কর গত ১৫ জুন একই সঙ্গে নির্বাচন হওয়া খুলনা, বরিশাল এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মোট অনাদায়ি করের সমান।
সিলেট বাদে এই তিন সিটি করপোরেশনের কর শাখা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে খুলনায় মোট অনাদায়ি কর রয়েছে ২৮ কোটি টাকা, বরিশালে পাঁচ কোটি টাকা ও রাজশাহীতে ২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই তিন সিটি করপোরেশনের মোট অনাদায়ি করের পরিমাণ ৫৩ কোটি টাকা।
২০০২ সালে সিলেটকে পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার পর ওই বছরের ২০ মার্চ প্রথম নির্বাচন হয়। নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। সিটি করপোরেশন এলাকায় কর প্রদানকারী ব্যক্তির সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় ৫০ হাজার। এরপর গত ১১ বছরে আনাদায়ি করের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৩ কোটি ২৭ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩৮ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরের ২০ জুন পর্যন্ত তিন কোটি ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫২৫ টাকা কর আদায় হয়। দাবিকৃত কর ছিল ১০ কোটি টাকা। কর বকেয়া ছিল প্রায় সাত কোটি টাকা।
বিপুল পরিমাণ কর অনাদায়ি থাকায় ১৫ জুন নির্বাচনের পরপরই কর শাখায় ২০০২ সাল থেকে দায়িত্বে থাকা প্রধান কর নির্ধারককে দপ্তর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে।
কর্মকর্তাদের একটি সূত্র জানায়, সাবেক মেয়র ভোটের জন্য নাগরিকদের কাছ থেকে কর আদায়ের জন্য কোনো উদ্যোগ নেননি। এ ছাড়া মেয়র বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর ১০ থেকে ৪০ শতাংশ মওকুফ করে দিয়েছেন।
বদলি হওয়া প্রধান কর নির্ধারক চন্দন দাশ জানান, সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা জামায়াত হিসেবে নয় বরং যেকোনো নাগরিকের জন্য কর মওকুফের আবেদনে স্বাক্ষর করে দিতেন। করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, কিছুসংখ্যক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বাদে কারও কাছ থেকেই যথাযথভাবে কর আদায় করা হয়নি।
কেন এই কর আদায় হচ্ছে না, জানতে চাইলে মেহেদী হাসান বলেন, ‘সেটা সাবেক মেয়রই ভালো বলতে পারবেন। এর বাইরে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’ কর আদায়ে সাবেক মেয়রের কোনো বাধা ছিল কি না, প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নির্বাচনের কিছুদিন আগে কর আদায়ে সিটি করপোরেশন উদ্যোগী হয়। কিন্তু সাবেক মেয়রের নির্দেশে সেটা তখন স্থগিত করা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, ভোটের জন্য এসব কর আদায়ে অনাগ্রহী ছিলেন সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। এ অবস্থায় নগর ভবনকে ‘দেউলিয়া ভবন’ বলে মন্তব্য করেছেন নবনির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এখন যাঁর বছরে পাঁচ হাজার টাকা কর দেওয়ার কথা, তাঁকে দিতে হবে ৫০ হাজার টাকা। এটা ওই করদাতার জন্য মারাত্মক চাপের সৃষ্টি করবে। ভোটে জেতার জন্য সাবেক মেয়র এমনটি করে সিটি করপোরেশন ভবনকে দেউলিয়া ভবনে রূপান্তরিত করেছেন।’
যোগাযোগ করা হলে সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান কর অনাদায়ি থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘সিলেটের মানুষ এমনিতেই কর দিতে চায় না। পাঁচ বছর পর পর অ্যাসেসমেন্ট বোর্ড (কর নির্ধারণবিষয়ক সভা) গঠিত হয়।
গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যখন অ্যাসেসমেন্ট হয়েছিল, তখন আমি জেলে ছিলাম। এ সময় অনেক নাগরিক ভয়ে অ্যাসেসমেন্ট বোর্ডের কাছে হাজির হয়ে রিভিউ করেননি। ফলে করের টাকা অনাদায়ি থেকে যায়।’ ভোটের জন্য কর আদায় করা হয়নি—এ অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘যদি তাই হতো, তাহলে তো আমিই জিততাম।’

No comments

Powered by Blogger.