মিসরে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে তোড়জোড়

মিসরে চলমান রক্তপাতের অবসান এবং বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দেশটিতে একটি পূর্ণাঙ্গ অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন নতুন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হাজেম আল-বেবলাউয়ি। এ চেষ্টার অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার তিনি উদারপন্থী নেতাদের দ্বারস্থ হন।
ক্ষমতাচ্যুত ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুড বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভায় তারা যোগ দেবে না।
গণবিক্ষোভের মুখে সেনাবাহিনী গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট মুরসিকে উৎখাতের পর তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা দেশটিতে অব্যাহতভাবে ব্যাপক বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। সোমবার কায়রোতে মুরসির সমর্থকদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি ছোড়েন সেনাসদস্যরা। এতে অন্তত ৫১ জন নিহত ও ৪৩৫ জন আহত হন।
উদারপন্থী অর্থনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী বেবলাউয়ি (৭৬) বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, তিনি উদারপন্থী রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ এল বারাদি ও জিয়াদ বাহা আল-দিনের সঙ্গে বৈঠক করে মন্ত্রিসভার সদস্যদের বাছাই ও সরকারের কাজ শুরুর চেষ্টা চালাবেন। বেবলাউয়ি মিসরের সাবেক অর্থমন্ত্রী।
এল বারাদি ও জিয়াদ বাহা উভয়েই মিসরের প্রধান ধর্মনিরপেক্ষ দল ন্যাশনাল স্যালভেশন ফ্রন্টের জ্যেষ্ঠ নেতা। দেশটির প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসির পদত্যাগের দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভে দলটি নেতৃত্ব দিয়েছিল।
সব দলের সমর্থিত ব্যক্তিদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠনের কাজটি একটি চ্যালেঞ্জ হবে—বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেবলাউয়ি বলেন, ‘কোনো কিছুর পেছনে সর্বসম্মত সমর্থন থাকতে পারে, এমনটা আমি বিশ্বাস করি না। আমরা অবশ্যই জনগণের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সংগতি রেখে কাজ করার চেষ্টা করি। তবে, এ অবস্থায়ও সব সময় কোনো কিছু বাছাই করে নেওয়ার সুযোগ থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী বেবলাউয়ি ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি তাঁর মন্ত্রিসভায় ব্রাদারহুড মনোনীত প্রার্থীসহ অন্য ইসলামপন্থীদের অংশগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়ার ব্যাপারে খোলামন দেখাবেন। তবে ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখা ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি (এফজেপি) বলেছে, বেবলাউয়ির গঠন করা মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার প্রস্তাব তারা গ্রহণ করবে না।
মিসরের সংবিধান সংশোধন ও নির্বাচনের রূপরেখা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট আদলি মানসুর সোমবার রাতে এক আদেশ জারির কয়েক ঘণ্টা পর এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেবলাউয়ি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জাতিসংঘের আণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএর সাবেক প্রধান এল বারাদির নাম ঘোষণা করা হয়।
ব্রাদারহুড নেতা বাদিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ: মিসরের সরকারি অভিযোক্তার কার্যালয় গতকাল বুধবার ব্রাদারহুড নেতা মোহাম্মদ বাদিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এ খবর জানানো হয়। সোমবার রাজধানী কায়রোতে রিপাবলিকান গার্ডের সদর দপ্তরের বাইরে সহিংসতায় বাদির বিরুদ্ধে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। ওই দিনের সহিংসতায় অন্তত ৫১ জন মারা যান।
ব্রাদারহুডের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা এরই মধ্যে আটক রয়েছেন। এ ছাড়া দলের আরও কয়েক শ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এফজেপির মুখপাত্র জেহাদ আল-হাদ্দাদ বলেন, তাঁদের আন্দোলন নস্যাৎ করতেই বাদি ও ব্রাদারহুডের অন্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
অ্যামনেস্টির অভিযোগ: আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গতকাল বলেছে, তাদের কাছে থাকা তথ্যপ্রমাণ অনুযায়ী, মিসরে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ শক্তি প্রয়োগ করেছে। দেশে ‘বিপর্যয়’ এড়াতে সেনাবাহিনীকে সংযত হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
সোমবার কায়রোয় রিপাবলিকান গার্ডের সদর দপ্তরের বাইরে সেনাসদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারী মুরসি-সমর্থকদের সংঘর্ষে বহু লোক হতাহতের ঘটনার দুদিন পর অ্যামনেস্টি এ অভিযোগ করল। এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.