ব্যালটে সিলের বদলে আসছে টিক চিহ্ন

ব্যালট পেপারে সিল মেরে ভোট দেওয়ার যুগ শেষ হতে চলেছে! ভোট দিতে সিলের পরিবর্তে টিক বা ক্রস চিহ্ন ব্যবহারের পদ্ধতি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে দেশব্যাপী ২০১২ সালের ভোটার হালনাগাদে ৭০ লক্ষাধিক নতুন ভোটারের আইডি কার্ড আগামী দুই মাসের মধ্যে দেওয়া হচ্ছে। ছবিযুক্ত হালনাগাদ এ ভোটার তালিকার চূড়ান্ত মুদ্রণের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে সেনাবাহিনীকে। গতকাল বুধবার শেরেবাংলা নগরে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ সাপ্তাহিক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
সিইসি বলেন, 'ভোটাধিকার প্রয়োগে সিলের ব্যবহারে অনেক ভোট নষ্ট হয়ে যায়, বাতিল ভোটের সংখ্যা বাড়ে। এ সমস্যার সমাধানে সিলের পরিবর্তে টিক বা ক্রস চিহ্ন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উন্নত দেশগুলোর অনুসরণে এ পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে ছোট ছোট নির্বাচন করে দেখব। এতে বাতিল ভোটের পরিমাণ কমে যাবে বলে মনে করছি।'
ইসি সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রায় ১৮ হাজার ভোট বাতিল হওয়ার কারণে প্রাথমিকভাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে সিল-প্যাডের খরচ কিছুটা লাঘব হবে বলে মনে করছে কমিশন।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভোটার বেশি হওয়ায় ৩৯২টি কেন্দ্রে ভোট নিতে অনেক সময় লেগেছে। সিলে ভোট নেওয়ার কারণে নির্দিষ্ট সময়ের পরও ৩৭টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করতে হয়েছে। ভোটারকে ব্যালট দেওয়ার পর সিল দিতে হয়। সেই সিল দেওয়ার ক্ষেত্রে সময় নষ্ট হয়। সিলে কালি বেশি লাগলে অপর পাতায় দেখা যায়। এ জন্য ব্যালটের পর একটি কলম দিলে ভোটাররা সহজেই এবং অল্প সময়ের মধ্যে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে। পাশাপাশি সিলের কারণে বৃদ্ধ বা শিক্ষাগত যোগ্যতা কম থাকা ভোটাররা অন্য প্রতীকে বা নির্ধারিত স্থানের বাইরে সিল মেরে থাকেন। এতে ভোট নষ্ট হয়। এসব বিবেচনায় পদ্ধতি বদলানোর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনেও এ পদ্ধতির ব্যবহার হবে কি না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, 'জাতীয় নির্বাচন এখনো অনেক দেরি, এর আগে পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ অন্যান্য নির্বাচনে টিক ও ক্রস চিহ্ন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
ডিসিসি নির্বাচন সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'ঢাকা সিটি করপোরেশন-দক্ষিণের সীমানা নির্ধারণে দাগ নম্বর নিয়ে কিছু জটিলতা ও সিদ্ধান্তের বিষয় রয়েছে। আশা করছি রমজানে তা শেষ হবে। ঈদের পরই আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারব।'
সীমানা নির্ধারণে সরকারদলীয় সংসদ সদস্যদের স্বার্থ রক্ষাসহ নানা অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি বলেন, 'এমন অভিযোগ শুধু রাজনৈতিক পর্যায় থেকে নয়, গ্রাম পর্যায় থেকেও আসছে। খসড়া প্রকাশের পর রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও ইউপি চেয়ারম্যান পর্যন্ত আমাদের কাছে এসে বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্যকে প্রাধান্য দিয়ে সীমানা চূড়ান্ত করা হয়েছে।'
জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে রকিব উদ্দিন বলেন, 'জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এরই মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে প্রেসে পাঠিয়েছি এবং ব্যালট মুদ্রণের কাজ চলছে।' কবে নাগাদ ভোট হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'নিয়ম অনুযায়ী অক্টোবর থেকে জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা।'

No comments

Powered by Blogger.