ইমরানের ভুবনে by শফিক আল মামুন

২০০৮ সাল। মঞ্চে চলছে ‘চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ’-এর চূড়ান্ত দশের প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগীদের একজন ইমরান। গাইছেন মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর গাওয়া পুরোনো দিনের ‘ওই দূর-দূরান্তে, মন-মনান্তে’ গানটি।
মন দিয়ে শুনছেন দুই বিচারক—রুনা লায়না ও সাবিনা ইয়াসমীন।
গান শেষ। দর্শকের মুহুর্মুহু করতালি। রুনা লায়লা সোজা দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁর কণ্ঠে তখন শুধু একটি বাক্য, ‘অসাধারণ!’ বসে থাকতে পারলেন না সাবিনা ইয়াসমীনও। বললেন, ‘ইমরান, তুমি কি তোমার সঙ্গে আমার একটা গান গাওয়ার সুযোগ দেবে?’
বিস্ময়ে হতবাক ইমরানের মাথা নুয়ে গেল মঞ্চে। সেরা কণ্ঠ হিসেবে হলেন দ্বিতীয়। ‘আমি ভাবতেই পারিনি সেরা কণ্ঠে দ্বিতীয় হব। এ অনুষ্ঠানে সারা দেশ থেকে ৮০ হাজার প্রতিযোগী অংশ নেয়। তার মধ্যে আমি দ্বিতীয়!’
সম্প্রতি মৌচাকের নিজ বাসায় বসে বিস্ময় জাগা সেই স্মৃতিকথাগুলো শোনাচ্ছিলেন ইমরান।

স্বপ্ন ভাঙার গান
সেরা কণ্ঠ হওয়ার কিছুদিনের মাথায় চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার ডাক এল—হাতের নাগালেই স্বপ্ন। ভালোবাসার লাল গোলাপ ছবির ‘মেঘ যেখানে পাহাড় ছুঁয়ে যায়’ গানটিতে ইমরান কণ্ঠ দিলেন সাবিনা ইয়াসমীনের সঙ্গে।
ইমরান বললেন, ‘একটা সময় পার করার পর একজন শিল্পী চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। আমি কতটা সৌভাগ্যবান, স্বপ্ন দেখার আগেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। সাবিনা ইয়াসমীনের সঙ্গে প্রথম যখন চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিচ্ছিলাম, খুবই অস্থির লাগছিল ভেতরে ভেতরে।’
এরপর একে একে কিং খান, সূচনারেখার নিচে, তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা, প্রেমবাজ, গেইমসহ একাধিক ছবিতে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।

অতঃপর অ্যালবাম
শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটলেও তখনো কোনো অ্যালবামে গান করেননি তিনি। এর মধ্যে গান থেকে বছর খানেকের বিরতি। ২০১২ সালে গানের ভুবনে আবার ফিরে এসেই বেশ কয়েকটি দ্বৈত অ্যালবামে নিজের নাম ঠুকে দেন ইমরান। এর মধ্যে অন্যতম হলো মনের ঠিকানা ও স্বপ্নমুখী। স্বপ্নমুখী অ্যালবামের নির্ঝরের সঙ্গে গাওয়া ‘আরাধনা’ এবং মনের ঠিকানার ‘সখী ভালোবাসা কারে কয়’ ও ‘দূরে দূরে’ দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ল শ্রোতাদের মধ্যে। পূজা ও ইমরানের গাওয়া ‘দূরে দূরে’ গানটি নিয়ে তৈরি হলো মিউজিক ভিডিও।
‘সেরা কণ্ঠ বিজয়ী হওয়ার পর ভালো কিছু করার জন্য কিছুটা বিরতি নিয়েছিলাম। সফলও হয়েছি। গানগুলো দর্শক খুবই পছন্দ করেছিল।’ বললেন ইমরান।
এরপর এ বছরই বাজারে এসেছে ইমরানের তুমি অ্যালবামটি। এখানে নিজের কণ্ঠে নয়টি এবং ন্যান্সি, নাওমি ও পূজার সঙ্গে দ্বৈতভাবে গাওয়া দুটিসহ মোট গান ১১টি। এই অ্যালবামের ‘মানে না মন’ গানটি নিয়ে মিউজিক ভিডিও তৈরি হয়েছে।

এবং লক্ষ্য
চলচ্চিত্র থেকে অ্যালবাম হয়ে মিউজিক ভিডিও—নানা কথায় আমাদের আড্ডা যখন তুঙ্গে, তখন ইমরানের বাসায় তাঁর সাউন্ডপ্রুফ একান্ত ঘরটি যেন অন্য কিছু জানান দেয়—গিটার, কি-বোর্ড, আরএমই-ফায়ারফেইচ-৮০০ সাউন্ডকার্ড থেকে শুরু করে সংগীতের নানা উপকরণে ঠাসা ঘরটি।
চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছি এসব। আঙুল দিয়ে দেখিয়ে আচমকা ইমরান বলে উঠলেন, ‘ওই যে দেখছেন, নিউ ম্যান পিএলএম-১০৩ মাইক্রোফোন, আমি এটি ব্যবহার করি। কারণ, মাইক্রোফোনটি ব্যবহার করেন আমার ওস্তাদ।’
ওস্তাদ, কোন ওস্তাদ?
‘এ আর রহমান। আমি তাঁর ভক্ত—তাঁর কোনো অনুষ্ঠান মিস করি না।’
এদিকে ইমরান এবার যাত্রা শুরু করেছেন আরেক ভুবনে—সংগীত পরিচালনা। শুধু অডিও অ্যালবামেই নয়, চলচ্চিত্রের গানেও পারদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি।
বলেন, ‘সব কথার শেষ কথা, আমি সংগীত পরিচালক হতে চাই। সেই পথেই এগোচ্ছি। সুযোগ পেলে দেশের বাইরে গিয়ে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর কোর্স করব।’
ইমরানের চোখে অনেক দূরে যাওয়ার স্বপ্ন।

No comments

Powered by Blogger.