বলিউড দুই লুটেরার গল্প

ছবিতে নেই কোনো আইটেম গান। নেই গ্ল্যামারের ছিটেফোঁটা কিংবা বারের ফ্লোরে নাচানাচি। অসাধারণ সিনেমাটোগ্রাফি খোঁচা মেরে বলবে—ভিনদেশে গিয়ে ছবি শুট করার আদৌ কি প্রয়োজন আছে? নির্মল আনন্দ বলতে যা বোঝায়, তা-ই যেন নতুন আলোয় আবার দেখা গেল সেলুলয়েডের রঙিন ফিতায়।
কাজলনয়না স্নিগ্ধ সোনাক্ষী যেমন অপাঙ্গে-কটাক্ষে হরণ করলেন পুরুষদের মন, রণবীরও তেমনি পৌরুষের দীপ্তিতে লুট করলেন অগুনতি নারী-হূদয়। এই দুই লুটেরার গল্প নিয়েই ছবির নাম লুটেরা।
ছবির নাম ভিন্ন রকমের হলেও ছবির গল্পটা বেশ ছিমছাম। সময়টা ১৯৫৩ সাল। কলকাতার মানিকপুর গ্রামে বরুণ শ্রীবাস্তব (রণবীর সিং) নামের এক যুবক এসে নিজেকে একজন প্রত্নতাত্ত্বিক বলে পরিচয় দেন। কিন্তু আদতে তিনি একজন লুটেরা। উদ্দেশ্য ওই গ্রামের এক প্রাচীন নিদর্শন চুরি করা। তবে বরুণের কথাবার্তা, কাজকর্মে খুব সহজে মুগ্ধ হয়ে যান গ্রামের জমিদার। সবকিছু যখন বরুণের অনুকূলে ঠিক তখনি তাঁর মনে ঝড় তোলে জমিদারকন্যা পাখি (সোনাক্ষী সিনহা)। ভালোবাসার লুটেরা পাখি বাসা বাঁধে বরুণের হূদয়ে। লুট করতে এসে বরুণ নিজেই লুট হয়ে যান পাখির প্রেমে। ছবির গল্প মোড় নেয় তখনই, যখন সবাই জেনে যায় বরুণের আসল পরিচয়। এরপর? যদি শাশ্বত প্রেমকে একবার ছুঁয়ে দেখতে চান, তাহলে বরুণ আর পাখির হাত ধরেই দেখুন না ছবির বাকিটুকু।
লুটেরা ছবিতে প্রথমবারের মতো জুটি বেঁধে রুপালি পর্দায় হাজির হলেন সোনাক্ষী-রণবীর সিং। তবে শুটিং শুরুর আগে রণবীরকে নিয়ে বিপাকেই পড়েছিলেন উড়ান-খ্যাত পরিচালক বিক্রমাদিত্য মোটওয়ানি। ছবিতে রণবীরের চরিত্রটি খুবই শান্ত, ধীরস্থির। ছবি শুরুর আগে কর্মশালা চলাকালে কিছুতেই এই চরিত্রে ঢুকতে পারছিলেন না রণবীর। এমনকি তিন দিনের মাথায় হাল ছেড়ে দেন এবং ছবির পরিচালককে বলেন অন্য কাউকে খুঁজে নিতে। কিন্তু পরিচালক জেদ ধরে বসে ছিলেন যে রণবীরই হবেন তাঁর ‘বরুণ’। রণবীর হতাশ করেননি। লুটেরা মুক্তির পরদিনই ছিল রণবীর সিংয়ের জন্মদিন। জন্মদিনের প্রথম প্রহরেই সমালোচকদের কাছ থেকে তিনি পেয়েছেন অভিনেতা হিসেবে যথার্থ মূল্যায়ন। আর এটাই নাকি তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার। আগের দুই ছবি ব্যান্ড বাজা বারাত ও লেডিস ভার্সেস রিকি ভেল বক্স অফিস সাফল্য অর্জন করলেও জিততে পারেনি সমালোচকদের মন। তাই তৃতীয় ছবি লুটেরা দিয়ে চলচ্চিত্র-বোদ্ধাদের মন জয় করলেন রণবীর। রণবীর বলেন, ‘এত দিনে পূর্ণতা পেলাম। আমার আগের সিনেমাগুলোতে হাসিখুশি চরিত্রে অভিনয় করেছি। তবে এবার ভিন্ন ধরনের কিছুতে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি খুশি। আমি ভালো কাজ করে যেতে চাই। আর এটা ধারাবাহিকতা, ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় দক্ষতা এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমেই সম্ভব।’
অন্যদিকে লুটেরা ছবিতে একদমই সাদাসিধে একজন বাঙালি তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোনাক্ষী। ছবিতে খোলামেলা না হয়েও যে আলোচনায় আসা সম্ভব, শত্রুঘ্ন সিনহা-কন্যা আবারও সেটা ভালো করে বুঝিয়ে দিলেন। লুটেরাতে আঁটসাঁট পোশাকে, শাড়ি জুয়েলারি ও বাঙালি সাজসজ্জায় দেখা যাবে সোনাক্ষীকে। ছবির কয়েকটি গানে তিনি শাড়িতেই তাঁর আবেদনের কারিশমা দেখাবেন দর্শকদের। ছবিটি নিয়ে দারুণ আশাবাদী সোনাক্ষী বলেন, ‘এই চরিত্রটি আমার জন্য অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ। কারণ, এই প্রজন্মের মেয়ে হয়েও ছবিতে আমাকে পঞ্চাশ দশকের প্রেক্ষাপটে অভিনয় করতে হয়েছে। চরিত্র ও অভিনয়ের দিক থেকে লুটেরা হলো আমার এযাবত্কালের সবচেয়ে কঠিন কাজ। বিক্রমাদিত্যের সঙ্গে কাজ করা হলো অনেকটা স্কুলে ফিরে যাওয়ার মতোই। পারফরম্যান্স আদায় করে নেওয়ার ব্যাপারে তিনি চমত্কার পরিচালক। আমি আশা করছি, দর্শকের এটা ভালো লাগবে।’
এদিকে লুটেরাতে একসঙ্গে কাজ করায় রণবীর-সোনাক্ষীকে নিয়ে বলিউডে লেগেই আছে নানা গুঞ্জন। দুজনের পর্দার বাইরের রসায়ন নিয়ে বিটাউনে চলছে মাতামাতি। আনুশকা শর্মার সঙ্গে রণবীরের বিচ্ছেদের মূল কারণ নাকি সোনাক্ষীই। তবে দাবাং-কন্যা সোনাক্ষী নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে এখন এতটাই ব্যস্ত যে শুধু রণবীরই নন, কোনো পুরুষের জন্যই নাকি তাঁর হাতে কোনো সময় নেই। সোনাক্ষী পুরো ব্যাপারটাই নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ‘রণবীরের সঙ্গে কাজ করতে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, সে একজন ভালো অভিনেতাও। কিছু অনুষ্ঠানে আমরা একসঙ্গে ছবি তুলেছি—ব্যাস এটুকুই। এ ছাড়া তাঁর সঙ্গে আমার আলাদা কোনো সম্পর্ক নেই। তবে পর্দার বাইরে কোনো রসায়ন না থাকলেও লুটেরাতে আমাদের রসায়নটা ইতিহাস হবে।’
 সাজিদুল হক
জিনিউজ, ইন্ডিয়া টাইমস, বলিউড হাঙ্গামা, বলিউড লাইফ, রেডিফ, আইএমডিবি অবলম্বনে

No comments

Powered by Blogger.