বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
নীলফামারী: ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ২১টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবার তিস্তা ডান তীর প্রধান বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। ডিমলার পূর্বছাতনাই ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান জানান, তাঁর ইউনিয়নে পাঁচ শতাধিক পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। ঝারশিঙ্গেশ্বর চর গ্রামে তিনটি পরিবারের ১৪টি ঘর পানির তোড়ে ভেসে গেছে।
ঝুনাগাছচাঁপানী ইউপির চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী বলেন, ইউনিয়নের ছাতুনামা ও ভেন্ডাবাড়ি গ্রামে এক হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি তলিতে আছে।
কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে সব কটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার দেড় শতাধিক চর ও গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৫০ হাজার মানুষ।
উজানের পানির প্রবল স্রোতে জেলার আটটি স্থানে নদ-নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ধরলা সেতুর দক্ষিণ দিকে কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর সড়কটি ভাঙনের কবলে পড়েছে। ভুরুঙ্গামারীর সোনাহাট সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পারে ভাঙন শুরু হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও: ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে ঠাকুরগাঁওয়ে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা গত মঙ্গলবার কমেছে। টাঙ্গন, শুক, সেনুয়া, কুলিক ও নাগর নদের পানি কমছে। মঙ্গলবার পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন শহরের হঠাৎপাড়া ও রিভারভিউ উচ্চবিদ্যালয় পরিদর্শন করে দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বুধবার শহরের মুন্সিপাড়া, খালপাড়া, টিকিয়াপাড়া, কলেজপাড়া, ঠাকুরগাঁও রোড ও সেনুয়াপাড়ায় দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন।
লালমনিরহাট: জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান জানান, উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, বড়খাতা, সিরন্দুনা, ডাউয়াবাড়ী ও পাটিকাপাড়া ইউনিয়নে পানি উঠেছে।
জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, হাতীবান্ধা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও): গতকাল বুধবার দুপুর দুইটার দিকে বৈরচুনা ইউনিয়নের কালঞ্চা পালপাড়া গ্রামের বিমল চন্দ্র রায় (৫৮) বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পানির তোড়ে ভেসে যান। পরে গ্রামবাসী তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে। পানির চাপে বৈরচুনার রানীঘাটা রাবার ড্যামের পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ড্যামের উজানে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে।
রাবার ড্যামের পশ্চিমে চান্দেরহাট বিজিবি ক্যাম্প সড়ক এবং নওডাঙ্গা-কালঞ্চা রাস্তা ও রানীঘাটা পাকা সড়কের দেড় ফুট ওপর দিয়ে পানি বইছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে পীরগঞ্জ-বোঁচাগঞ্জ-দিনাজপুর পথে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

No comments

Powered by Blogger.