'কিছু নাটকীয় ঘটনা ঘটতে পারে'

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর বাকি কয়েক মাস। এখনো সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে এ নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়নি। এদিকে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারি দল শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে।
তাই একদিকে সরকারের অনড় অবস্থান ও আরেক দিকে বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম। সব মিলে আগামী কয়েক মাসে দেশে কিছু নাটকীয় ঘটনা ঘটতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম শাহীদুজ্জামান। তিনি বলেন, মিসরে গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনী রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করায় সেই প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে। কারণ বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে সংবিধানকে এমনভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তাতে সেনাবহিনী প্রলুব্ধ হতে পারে।
মঙ্গলবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে পর্যালোচনাভিত্তিক টক শো মুক্তবাক অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক মনির হায়দার ও তরুণ আলোচক সাংবাদিক আশরাফ কায়সার।
আলোচনার শুরুতে সঞ্চালক মাহমুদুর রহমান মান্না আলোচকদের কাছে জানতে চান, মিসরে বহুদিন পর গণতন্ত্র পুনরুদ্বার হলো। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেখানে সেনাবাহিনী আবারও ক্ষমতা নিয়ে নিল। কিভাবে দেখছেন।
জবাবে সাংবাদিক মনির হায়দার বলেন, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের প্রবণতা দীর্ঘদিনের। এসব দেশে গণতন্ত্র বনাম সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়ে পাল্টাপাল্টি প্রতিযোগিতা থাকে। তিনি বলেন, মিসরে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পেছনে ছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের সাজানো প্রশাসন। কারণ গণতান্ত্রিক নতুন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি যাঁকে সেনাপ্রধান বানিয়েছেন, তিনি ছিলেন হোসনি মুবারকের সাজানো সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ডের সদস্য। মুরসি যাঁকেই সেনাপ্রধান করতে চান না কেন তাঁকে হোসনি মুবারকের সাজানো চেইনের মধ্য থেকেই করতে হবে। বাইরে থেকে কাউকে সেনাপ্রধান করার সুযোগ ছিল না। তাই মুবারকের চেইনের কর্মকর্তারা তো আর মুরসির কাছের লোক হতে বাধ্য নন। তাই যা হওয়ার হয়েছে। মিসরের মতো একটি বড় দেশে গণতন্ত্র দুই বছরও লাস্টিং করল না।
আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক মাহমুদুর রহমান মান্না জানতে চান, মিসরে তো সেনাবাহিনী কোনো ধরনের ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতা দখল করেনি। কিন্তু আমাদের দেশে তো বিরোধী দল সরকারকে নির্বাচনের বিষয়ে নোটিশ দিচ্ছে যে তারা তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। সরকারও তেমন কোনো আলোচনায় আসছে না। কিভাবে দেখছেন।
জবাবে অধ্যাপক ড. শাহীদুজ্জামান বলেন, আমাদের দেশ কিন্তু মিসরের মতো নয়। কারণ মিসরে তেমন শক্তিশালী কোনো রাজনৈতিক দল নেই। আর আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সচেতনতা আছে। তারা আর যা-ই হোক সেনাবহিনীকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এ ছাড়া আমাদের দেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল আছে, যারা দেশের গণতন্ত্র নিয়ে সব সময় সোচ্চার। এ ছাড়া সাধারণ মানুষও বেশিদিন গণতন্ত্রের বাইরে কোনো শক্তিকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এ কারণে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় এলেও বেশিদিন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে না। তিনি বলেন, গাজীপুরসহ পাঁচটি সিটি করপোরেশনে যেভাবে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে, বিশেষ করে, মহিলারা যেভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে ভোট দিয়েছে, তাতে মহিলাদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, এখন যা অবস্থা তাতে আশা করি, আগামী ছয় মাসের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি পরিবেশ ঠিকই তৈরি হবে। তবে সরকার ও বিরোধী দলকে অবশ্যই এ বিষয়টি নিয়ে একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।
আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান যদি সরকার ও বিরোধী দল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সমঝোতায় না আসে, তবে আগামীতে কী হতে পারে।
জবাবে তরুণ আলোচক সাংবাদিক আশরাফ কায়সার বলেন, সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার ব্যাপারে শাদীদুজ্জামান ভাই যেভাবে আশাবাদী আমি কিন্তু সে রকম আশাবাদী নই। কারণ যারা গত এক বছরেও কোনো রাজনৈতিক সমঝোতায় আসতে পারেনি। তারা আগামী তিন বা চার মাসে যে সমঝোতায় আসবে তাতে আমার বেশ সন্দেহ আছে। তিনি বলেন, আগামী কয়েক মাসে সরকার ও বিরোধী দল নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে তিনটি বিষয় হরতে পারে। এক. সরকার এমন একটি নির্বাচন দেবে সেখানে বিরোধী দল আসবে না। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো হয়তো অংশ নেবে। দুই. জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন হতে পারে। তিন. রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় না আসতে পারলে যা হওয়ার তাই হবে। তৃতীয় কোনো পক্ষ হয়তো ক্ষমতা নেবে।

No comments

Powered by Blogger.