বস্তি আবার অস্বস্তিতেল, চিনি, রসুন, ডালের দাম কমেছে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, শসা ও বেগুনে আগুন

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে স্বস্তি ও অস্বস্তির মিশেল নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে রমজান মাস। প্রথম দিন রোজা শেষে ইফতারে শসা, কাঁচা মরিচ আর বেগুনি রাখতে গেলে পকেট থেকে একটু বেশি পয়সা বের করতে হবে।
কারণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ পণ্যগুলোর দাম ইতিমধ্যে বেড়ে গেছে। তবে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সুখবর আছে বাজারে। ১৫ দিন আগের চেয়ে ভোজ্য তেল, চিনি, ছোলা, মসুর ডাল, রসুনসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম কমেছে। খোলা সয়াবিন অথবা পাম তেলের দাম গত এক বছরের চেয়ে এখন কম। ৬০ টাকায় মিলছে এক কেজি ছোলা। খোলা চিনি কিনতে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকার বেশি লাগছে না।
ইফতারে কাঁচা মরিচ, শসা ও বেগুনি এড়িয়ে যেতে পারলে সার্বিকভাবে বাজারে স্বস্তি আছে। তবে এ কয়েকটি কাঁচাপণ্যের দাম দু-তিন দিনের মধ্যেই কমে যাবে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এবারের রোজার বাজার তদারকিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এবার রোজার আগে তেল, চিনি, ডালসহ অনেক পণ্যের দাম কমেছে। বেশি চাহিদার কারণে কাঁচা মরিচ, শসাসহ কয়েকটি পণ্যের দাম কিছুটা বাড়লেও দু-এক দিনের মধ্যে তা কমে যাবে।'
দীর্ঘদিন পর বেশ কিছুটা কমেছে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম। পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৬৪০ টাকা দরে, যা মাসখানেক আগে ছিল ৬৭০ টাকা। খোলা সয়াবিন তেলের দামও কমেছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল এখন ১০৮ থেকে ১০৯ টাকায় মিলছে। আর পাম তেল বিক্রি হচ্ছে লিটারপ্রতি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। এ দুই ধরনের তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে গত এক মাসে।
রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের বোতলের দাম না কমলেও সঙ্গে ২৮ টাকা দামের ১০০ গ্রাম সরিষার তেল দেওয়া হচ্ছে বিনা মূল্যে। সব মিলিয়ে পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল কিনলে এখন ক্রেতারা লিটারে ছয় টাকা কম পাচ্ছেন।
কেজিতে প্রায় ৩০ টাকা কমেছে আমদানি করা রসুনের দাম। চীন থেকে আমদানি করা বড় রসুন কেজিপ্রতি ৯০ থেকে ১০০ টাকা ছিল মাসখানেক আগে। এখন তা কমে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। ছোট দানা ভালো মানের মসুর ডালের দাম কেজিতে প্রায় ১৫ টাকা কমে এখন ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা দরে।
তবে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ভারতে বন্যা হওয়ায় সেখানে পেঁয়াজ মিলছে না। ফলে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা বেড়ে ৪৪ টাকা, আর দেশীয় পেঁয়াজ আট টাকা বেড়ে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ আমদানিকারক নারায়ণ চন্দ্র সাহা জানান, গতকাল বুধবার বন্দরে যে দাম ছিল, তাতে দু-এক দিনে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমতে পারে। আগের চেয়ে আমদানি কিছুটা বেড়েছে।
শবেবরাতের আগে প্রতি কেজি চিনির দাম দুই টাকা বেড়েছিল। এখন তা কমে ৪৭-৪৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেটজাত চিনির দাম কেজিতে দুই টাকা কমিয়ে ৫০ টাকা করেছে কম্পানিগুলো। সাধারণ ছোলা কেজিপ্রতি ৬০ টাকায় মিলছে, যেটি রোজার সপ্তাহখানেক আগেও ৬৫ টাকা ছিল।
বছরজুড়ে চালের দামে তেমন পরিবর্তন না হওয়ায় চিঁড়া ও মুড়ির দামও তেমন একটা বাড়েনি। সাধারণ মানের চিঁড়া কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৪২ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তবে উন্নতমানের চিঁড়া ৬৫ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মুড়ির দাম ৫০ টাকার মধ্যে আছে। তবে বিশেষ ধরনের মুড়ির দাম ৮৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে মিলছে বাজারে।
রোজার শুরুর দিনের অস্বস্তির তালিকায় শুরুতেই থাকবে কাঁচা মরিচ। রাজধানীর মহাখালী সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজারে গত রবিবার এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল ১০০ টাকা। গতকাল সেটি কোনো কোনো বাজারে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সপ্তাহখানেক আগেও দোকানে প্রতি কেজি হাইব্রিড শসা ৩৫ টাকায় মিলত। এখন সেটা ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি শসার ক্ষেত্রে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
বেগুনি তৈরির লম্বা বেগুনের তিনটি জাত মিলছে বাজারে। সবচেয়ে ভালো মানের বেগুন ৬০ টাকা, মাঝারি মানের বেগুন ৫০ টাকা আর এর চেয়ে কম দামের বেগুন মিলছে ৪০ টাকায়। গত তিন-চার দিন আগেও বেগুনের কেজি ৫০ টাকার মধ্যে ছিল। সে হিসেবে এ পণ্যের দাম তেমন বাড়েনি। বাজারে অন্যান্য সবজির দাম কেজিপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।
লেবুর হালিপ্রতি দাম কয়েক দিন আগেই বেড়েছে। নতুন করে তেমন বাড়তে দেখা যায়নি। এক হালি বড় আকারের লেবু ৩০ টাকা দিয়ে কিনতে হবে। আর কাগজি লেবুর হালিপ্রতি দাম ২০ টাকা চাচ্ছেন বিক্রেতারা। সে তুলনায় সস্তা কলম্বো লেবু। প্রতি হালি ২০ টাকা হলেও আকারে বেশ বড়। ধনিয়াপাতার মৌসুম এখন নয়। তাই ২০ টাকা কেজির ধনিয়াপাতা গতকাল ১০০ গ্রাম কিনতেই দিতে হয়েছে ৩০ টাকা। ভারত থেকে আমদানি করা টমেটো কিনতেও ১২০ টাকা লাগছে কেজিপ্রতি।
মহাখালী বাজারের তুলনায় অভিজাত এলাকার বাজারে দাম আরেকটু বেশি। আর যেসব এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের বাস বেশি, সেখানে দাম আরো কম। যেমন মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের বাজারে ২০০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে, তেমনি ওই বাজারেই ১৬০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ কেনা গেছে। তবে মান ও জাতের পার্থক্য আছে।
কাঁচাবাজারের এসব পণ্যের দাম প্রতিদিনই ওঠানামা করে। গত রমজানেও এসব পণ্যের দাম বেড়েছিল। তবে রমজানের দুই দিন পরই শসা, বেগুন, কাঁচা মরিচের দাম কমে যায়। এবারও তেমনটি হবে বলে মনে করছেন মহাখালী বাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. মিলন। তিনি বলেন, 'প্রথম দিকে সবাই বেশি বেশি কেনে বলে দাম বেড়ে যায়। আস্তে আস্তে কমে যাবে। প্রতিবারই এমন হয়।'
এফবিসিসিআইয়ের পরামর্শে কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন ও ধনিয়াপাতার রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.