অতিথিপরায়ণতা উত্তম গুণ by ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

অতিথিপরায়ণতাকে হজরত মোহাম্মদ (সা.) মুমিনের পরিচায়করূপে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ইমান রাখে, সে যেন অবশ্যই অতিথির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। অতিথির জন্য উত্তম খাবার ও থাকার ব্যবস্থা করা চাই কমপক্ষে একদিন এক রাত।
আর সাধারণভাবে আতিথেয়তা হলো তিন দিন। এরপর অতিথিকে যা আপ্যায়ন করা হবে তা সদাকা হিসেবে গণ্য হবে। আর মেহমানের জন্যও বৈধ নয় দীর্ঘ সময় মেজবানের গৃহে অবস্থান করা যাতে তার কষ্ট হয়। যে ঘরে মেহমানদারি করা হয় সে ঘরে আল্লাহর তরফ থেকে বরকত নাজিল হয়। মেহমানের সঙ্গে মেজবান বসে একত্রে আহার গ্রহণ করলে বরকত যেমন হয়, তেমনি ভ্রাতৃত্ববোধও সুদৃঢ় হয়। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে আগত সব অতিথির প্রতি সম্মানও ভালো ব্যবহার করা জরুরি। মেহমানকে বোঝা মনে করা অনুচিত। ধর্মীয় বিশ্বাস মতে, মেহমান নিজের রিজিক নিয়ে মেজবানের ঘরে আসে; এতে করে মেজবানের রিজিকের পরিমাণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
অতিথি কোনো ঘরে গেলে সর্বপ্রথম গৃহকর্তার অনুমতি নিয়ে ভেতরে ঢুকতে হবে। পূর্ব অনুমতি ছাড়া কারও বাড়িতে প্রবেশ বা আতিথ্য গ্রহণ উচিত নয়; এতে গৃহকর্তা অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। অতিথির উচিত নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী মেজবানের জন্য কিছু উপঢৌকন নিয়ে যাওয়া। মহানবী (সা.) বলেন, তোমরা পরস্পর উপঢৌকন বিনিময় কর, এতে করে মহব্বত বৃদ্ধি পাবে। বিদায়কালীন অতিথির সঙ্গে বাড়ির আঙিনা পর্যন্ত যাওয়া সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। এতে মেহমানের প্রতি সম্মান করা হয় এবং তিনি পুলকিত হন। যে ঘরে অতিথির আনাগোনা নেই, সে ঘর মৃতপুরী।
অতিথি যদি আত্মীয়স্বজন হয় তা হলে তাদের মেহমানদারির প্রতি মেজবানের আরও যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। কারণ, আত্মীয়ের সঙ্গে রক্ত, আত্মা ও বৈবাহিক সম্পর্ক থাকে। মাতা-পিতার পর আত্মীয়স্বজনের হক সর্বাপেক্ষা বেশি। মহানবী (সা.) বলেন, যে জাতির মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী লোক থাকে সে জাতির ওপর আল্লাহর রহমত নাজিল হয় না। আত্মীয়তা ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, আমি আল্লাহ এবং রহমান, আমি আত্মীয়তা সৃষ্টি করেছি। যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে আমিও তার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করি; আর যে ব্যক্তি তা ছিন্ন করে আমিও তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করি।
আতিথ্য প্রদর্শন করতে গিয়ে কেবল ধনী ও অভিজাতদের প্রতি দৃষ্টি দিলে চলবে না। দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তদের প্রতিও সুনজর রাখতে হবে। এতে ধনী-দরিদ্রের মাঝে কোনো বিভাজন উচিত নয়। মহানবী (সা.) বলেন, কেউ যদি তোমাকে খাবারের দাওয়াত দেয়, তা কবুল করা উচিত। খাওয়া শেষ হওয়ার আগে খাদ্যদ্রব্য টেবিল অথবা দস্তরখানা থেকে তোলা উচিত নয়। টেবিল থেকে খাবারের কোনো অংশ নিচে পড়লে তা যদি নষ্ট না হয় তা হলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ব্যবহার করা দরকার। এগুলো আল্লাহর নেয়ামত। টেবিলে অথবা দস্তরখানায় অযথা খাবার নষ্ট করা অনুচিত। খাবারের পেল্গটে খাবারের উচ্ছিষ্ট যেন না থাকে।
পরিবেশিত খাবারের কোনো দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা অতিথির উচিত নয়, এতে মেজবান কষ্ট পেতে পারেন। মহানবী (সা.) কখনও খাবার সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেননি। ইচ্ছা হলে খেতেন, অপছন্দ হলে পরিত্যাগ করতেন। খাবার শেষে শোকরিয়াস্বরূপ আল্লাহর কাছে দোয়া করা রাসূলুল্লাহর (সা.) সুন্নাত। 'হে আল্লাহ! তুমি যে রিজিক আমাকে দিয়েছ, তাতে বরকত দাও এবং রিজিক আরও বৃদ্ধি করে দাও।'
drkhalid09@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.