ব্যবসায় সহায়ক পরিবেশ-সম্ভাবনার পথের কাঁটা তুলবে কে?

বাংলাদেশ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হবে_ এমনই ভবিষ্যদ্ব্বাণী গোল্ডম্যান সাচ বিনিয়োগ ব্যাংকের। এমন সিদ্ধান্তে আসার পেছনে তাদের প্রচুর গবেষণা কাজ এবং তথ্য-উপাত্ত থাকে। ইচ্ছা করলেই তারা কাউকে সার্টিফিকেট দিতে পারে না।
তারা 'পরবর্তী ১১' টার্মটি ব্যবহার করে_ যেখানে উন্নতির সিঁড়িতে রাশিয়া-চীন-ভারত-ব্রাজিলের পরেই ইন্দোনেশিয়া, ইরান, তুরস্ক, মেক্সিকো, ফিলিপিন্সের মতো দেশগুলোর সারিতে ফেলা হয়েছে বাংলাদেশকে। ম্যাক্রো অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক পরিপকস্ফতা, ব্যবসা ও বিনিয়োগ নীতিতে স্বচ্ছতা এবং শিক্ষার গুণগত মান_ এসব বিবেচনায় নিয়েই বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় থাকা জনবহুল দেশটির জন্য এ যে মস্ত ভরসার দিক। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে অর্থনীতির চেহারা আমূল বদলে দিতে হবে এবং এ জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি। এ কাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ব্যক্তিদের। কিন্তু বুধবার প্রকাশিত বিশ্ব প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রতিবেদন ২০১২-তে বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা যে অভিমত দিয়েছেন তা মোটেই উৎসাহব্যঞ্জক নয়। তারা ব্যবসার ক্ষেত্রে ১৬টি বড় সমস্যা চিহ্নিত করেছেন। যেমন_ দুর্বল অবকাঠামো, দুর্নীতি, বিনিয়োগের জন্য অর্থ না পাওয়া, মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া, উদ্ভাবনী ক্ষমতার অভাব, শ্রম আইনের সীমাবদ্ধতা প্রভৃতি। তারা দুর্নীতির মধ্যে অলিখিত লেনদেনের বিষয়টির উল্লেখ করেছেন। রাজনীতিকদের ওপর আস্থা রাখতে পারেন না বলে জানিয়েছেন। প্রতিবেদনটি প্রকাশকালে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডির শীর্ষ গবেষকরা বলেন, গত বছর বাংলাদেশ ব্যবসায় প্রতিযোগিতায় সক্ষমতার দিক থেকে ১০ ধাপ পিছিয়েছে। নেপাল ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোও পিছিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের খবর হচ্ছে গত বছরের স্কোর আগের বছরের চেয়ে কমেছে। দুর্বল আর্থিক ব্যবস্থাপনা, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর দুর্বল তদারকি, আর্থিক খাতের অনিয়মের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাবের প্রসঙ্গও বাদ যায়নি। শেয়ারবাজার ও হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর এ সমস্যা নিয়ে দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ আছে বলে কেউ মনে করবে না। পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের ব্যর্থতা এবং আয়-বৈষম্য দূর করায় সরকারের উদ্যোগের অভাবের বিষয়টিও উলি্লখিত হয়েছে। এ চিত্র হতাশার, সম্ভাবনা বিনাশের। এখন কী করণীয়, সে নির্দেশনা রয়েছে প্রতিবেদনে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আর্থিক খাতের সক্ষমতা অন্তত আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, সরকারি প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বাড়ানো, অবকাঠামো খাতের প্রকল্পগুলো সময়মতো বাস্তবায়ন প্রভৃতি। অর্থনীতিতে আমরা হাঁটি হাঁটি করে এগোচ্ছিলাম এবং সেটা বিশ্ববাসীর নজর এড়ায়নি। কিন্তু এখন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে উন্নতির ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ার। এটা আদৌ ভালো লক্ষণ নয়। আমরা আশা করব, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ব্যবসায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতার প্রতিবেদনে চিহ্নিত সমস্যাগুলো খতিয়ে দেখা এবং তাদের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে দ্রুত মনোযোগ প্রদান করা হবে। সরকার নিশ্চয়ই বুঝতে পারবে যে হলমার্ক কেলেঙ্কারির মতো বড় ধরনের অনিয়ম প্রকাশের আগেই শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিবেদনে প্রকাশিত অভিমতগুলো প্রদান করেছেন। এ অভিমতকে তাই হালকা করে দেখার উপায় নেই। শিল্প-বাণিজ্যের উদ্যোক্তাদের চিহ্নিত সমস্যাগুলো উপেক্ষার পরিণতি কখনোই ভালো হয় না, এ অভিজ্ঞতা কিন্তু আমাদের রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.