পদ্মাবতীর এগিয়ে চলা by মারুফ সামদানী

অক্টোবর মাসে হয়ে গেল অনূর্ধ্ব-১৯ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্ট। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) আয়োজনে মালয়েশিয়াতে অনুষ্ঠিত এ খেলায় দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছে বাংলাদেশ দলের অন্যতম খেলোয়াড় পদ্মাবতী সমাদ্দার। দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া এই মিডফিল্ডার থাকে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মাইটকুমড়া আশ্রয়ণকেন্দ্রে।
শুধু ফুটবলেই নয়, গত তিন বছরে দেশের সেরা অ্যাথলেট হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে পদ্মাবতী। জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় মাধ্যমিক পর্যায়ে ২০১০ থেকে ২০১২ সাল—টানা তিন বছর ব্যক্তিগত পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সে।
সম্প্রতি পদ্মাবতীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল লোহাগড়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের খেলার মাঠে। একসঙ্গে ফুটবল, হকি, বর্শা নিক্ষেপ—সব খেলাতেই সফলতার রহস্য কী? প্রশ্নের জবাবে সে বলে, ‘লক্ষ্য ছিল জাতীয় পর্যায়ে অ্যাথলেটিকসে প্রতিটি ইভেন্টে প্রথম হব। সেই অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে অনুশীলন করেছি। স্বপ্ন দেখেছি ফুটবলে জাতীয় দলে খেলার। অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় মহিলা দলে দেশের জন্য খেলতে বিদেশে গেছি। এর চেয়ে ভালো লাগা আর কী হতে পারে!’
পদ্মাবতীর শুরুটা তার দিলীপ দাদা ও শান্ত ভাইয়ের মাধ্যমে। কয়েক মাস আগে তাঁদের ডাকে নড়াইল জেলা মহিলা দলের হয়ে ঢাকার কমলাপুর স্টেডিয়ামে ফুটবল খেলতে যায়। সেখানে তার খেলা দেখে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের মহিলা ফুটবল বিভাগের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খেলা শেষে তাকে ডাকেন। জাতীয় দলে খেলার আহ্বান জানান তিনি। গত সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকার আরামবাগে এক মাসের ক্যাম্প হয়। প্রথম ক্যাম্পেই চূড়ান্ত করা হয় পদ্মাবতীকে। সামনের বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে সে। খেলা আর পড়াশোনা— দুটিই চলেপাশাপাশি। মা-বাবা খুব সহযোগিতা করেন তাকে।
দিলীপ চক্রবর্তী লোহাগড়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন ক্রীড়া শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা অ্যাথলেটিকসে এ বিদ্যালয় পাঁচ বছর ধরে চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে। তবে পদ্মাই আমার শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার। ভূমিহীন হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান সে। ওর জীবনযাপন অনেক কষ্টের। এখন খেলার জগতের নীতিনির্ধারকদের চোখে পড়া দরকার।’
মা-বাবাকে নিয়ে তিন সদস্যের সংসার। বড় দুই বোন চম্পা ও চামেলির বিয়ে হয়ে গেছে। পদ্মাবতীর বাবা বলেন, ‘প্রতি মাসে ৩০০ টাকা বয়স্ক ভাতা ও দুধ বিক্রির আয় দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাই। কিন্তু মেয়ের লেখাপড়া চালানো কঠিন হয়ে যায়।’ কীভাবে মেয়ের লেখাপড়া চালাবেন, সেটাই এখন তাঁদের মূল চিন্তা। অভাব-অনটনে বেড়ে ওঠা পদ্মাবতী তবু স্বপ্ন দেখে—বাংলাদেশ অলিম্পিকে স্বর্ণপদক পাবে; ফুটবল ও হকিতে বাংলাদেশ মহিলা দল বিশ্ব অঙ্গনে কৃতিত্ব দেখাবে, সেই জয়ী দলে সে থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.