পুলিশি তদন্ত-এমন প্রহসন কেন?

গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা ও তথ্যপ্রযুক্তির বিপুল অগ্রগতির কারণে তথ্য গোপন রাখা এখন সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি। কোনো ঘটনা গণমাধ্যমের চোখ এড়িয়ে গেলে ইন্টারনেট মাধ্যমে মুহূর্তেই প্রকাশিত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সরকারসহ বিভিন্ন দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানকে সাধারণ কাজও সতর্কতার সঙ্গে করতে হয়।
অপরাধমূলক কাজ হলে তো কথাই নেই, ছোটখাটো ঘটনাও গোপন রাখা সহজ নয়। এমন যখন পরিস্থিতি, তখন প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটে যাওয়া বহুল প্রচারিত ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেওয়া কীভাবে সম্ভব? কিন্তু এমন দুটি অসম্ভবকে সম্ভব করার চেষ্টাই করে চলেছে পুলিশ। আদালত প্রাঙ্গণে তরুণীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা ও হরতাল চলাকালে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর নির্যাতন_ দুটিই বহুল আলোচিত ঘটনা। পত্রিকার সচিত্র প্রতিবেদন শুধু নয়, ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ভিডিওচিত্রও দেখানো হয়েছে। সকলেই দেখেছেন, পুলিশ ও পুলিশের সহযোগীরা তরুণীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরাও তেমন বিবরণ দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশি তদন্তে পুলিশের সংশ্লিষ্টতার কোনো নজির মেলেনি। জয়নুলের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনাও ঘটিয়েছেন পুলিশ সদস্যরাই। ভিডিওচিত্রে তা দৃশ্যমান কিন্তু পুলিশি তদন্তে জয়নুল কীভাবে আহত হলেন তা রহস্যাবৃত। তদন্তকারীরা দুটি ঘটনাতেই পুলিশের অপরাধ দেখতে পায়নি। বিস্ময়কর ঘটনা বটে। বলতে গেলে, এমন তদন্ত করে পুলিশ অসাধ্য সাধন করেছে। যা সত্য তাকে চাপা দিয়ে নতুন সত্য রচনার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এর ফলে পুলিশি তদন্ত বিষয়েই জনমনে অনাস্থা ও প্রত্যাখ্যানের মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। এটি কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। এর মাধ্যমে সাধারণের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। এ অবস্থায় ঘটনা দুটি নিয়ে নতুন তদন্তের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি, পুলিশ জড়িত থাকলে সেই অপরাধের তদন্ত পুলিশই করবে কি-না, তাও ভেবে দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ কোনো সংস্থার কথা ভাবা দরকার। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা ও পুলিশের ভাবমূর্তির স্বার্থে এখন এমন উদ্যোগ আসা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.