চিড়িয়াখানায় খাঁচা ভেঙে পাখি চুরি-সংখ্যা নিয়েও লুকোচুরি

অবাক কাণ্ড! মিরপুর চিড়িয়াখানার নিরাপত্তার ঘেরাটোপ ডিঙিয়ে খাঁচা ভেঙে ১১টি পাখি চুরি করেছে দুষ্কৃতকারীরা। চুরির ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার রাতের যেকোনো সময়। আর রহস্য দানা বেঁধেছে এখানেই। কারণ ওই সময়টায় সেখানে অবস্থান করেন চিড়িয়াখানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নিরাপত্তারক্ষীরা।
আরো রহস্য, প্রথমে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ১৫০টি পাখি চুরি হয়েছে। পরে দাবি করা হয় এ সংখ্যা ১১। চুরির এক দিন পর মামলা দায়েরের ঘটনাটিও অস্বাভাবিক। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার দায়ে চিড়িয়াখানার দুই নিরাপত্তারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মাত্র কয়েক মাস আগে বিদেশ থেকে আনা হয়েছিল পাখিগুলো।
চুরির রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নেমেছেন পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। তাঁরা রাজধানীর পাখির মার্কেটগুলোতে অভিযান চালাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চিড়িয়াখানার এক কর্মকর্তা জানান, ধারণা করা হচ্ছে, প্রাণী ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংঘবদ্ধ চক্রের লোকজন এ কাজে জড়িত। কারণ চিড়িয়াখানায় অনেক পাখি আছে। সেগুলোর মধ্যে বাছাই করে শুধু বেশি দামের পাখিগুলো চুরি করা হয়েছে।
ঢাকা চিড়িয়াখানার সম্পত্তি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস কালের কণ্ঠকে বলেন, ঘটনার পরপরই কিউরেটর বাদী হয়ে শাহআলী থানায় মামলা করেছেন। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কারণ এ ধরনের ঘটনা এর আগে আর ঘটেনি। বিরল প্রজাতির এ পাখিগুলোর দাম সাত থেকে আট লাখ টাকা।
চিড়িয়াখানার কিউরেটর এম শহীদুল্লাহ গতকাল সকালে সাংবাদিকদের জানান, ১৫০টির মতো পাখি চুরি হয়েছে। পরে তিনি জানান, তিন প্রজাতির ১১টি পাখি চুরি হয়েছে। চুরি হওয়া পাখিগুলোর মধ্যে রয়েছে তিনটি কাকাতুয়া, ছয়টি হলুদ টিয়া ও দুটি লাল টিয়া। চুরির ঘটনায় বরখাস্ত হওয়াদের মধ্যে আছেন নৈশপ্রহরী শঙ্কর লাল মৃধা ও এনিম্যাল কেয়ারটেকার চাঁন মিয়া। গেটকিপার সুফিয়ানকেও পুলিশ সন্দেহের তালিকায় রেখেছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, রবিবার রাতে চুরির ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। ধারণা করা হচ্ছে, চুরি যাওয়া পাখির সংখ্যা আরো বেশি। কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যর্থতা ঢাকতেই সংখ্যা কমিয়ে বলছে। সোমবার সকালে চুরির ঘটনা জানার পর কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যায় বিষয়টি শাহআলী থানাকে জানায়। আর মামলা করা হয় মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে।
শাহআলী থানার ওসি মো. সেলিমুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, মামলা দায়েরের পর তদন্ত শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরির বিষয়টি পুলিশের পাশাপাশি সব সংস্থার লোকজনই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। চিড়িয়াখানায় ঢুকে খাঁচার তালা ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। প্রহরী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

No comments

Powered by Blogger.