সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখার-টিআইবি কারো পক্ষে নয়, আমরা বস্তুনিষ্ঠ

দেশে টিআইবি বন্ধ করতে হবে- সংসদ সদস্যদের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'এর আগেও টিআইবিকে বন্ধের দাবি জানানো হয়েছিল। তবে দুঃসংবাদের বার্তাবাহককে, নাকি দুঃসংবাদের কারণগুলো বন্ধ করবেন- সেটা আপনাদের বিবেচনা।
' তলব করা হলে টিআইবি সংসদে গিয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে রাজি বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টিআইবি বন্ধ করা হলে তা যেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হয়।
কপ-১৮ জলবায়ু সম্মেলন সামনে রেখে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে টিআইবি ও ক্লাইমেট ফিন্যান্স গভর্নেন্স (সিএফজিএন) এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। 'আন্তর্জাাতিক ও জাতীয় জলবায়ু অর্থায়নে চাই স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ন্যায্যতা' শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনে ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) একটি প্রতিবেদন নিয়ে গত সোমবার জাতীয় সংসদে ব্যাপক সমালোচনা হয় এবং প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালকসহ কর্মকর্তাদের তলব ও এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এ দেশে বন্ধের দাবি জানানো হয়।
এ প্রসঙ্গে গতকাল টিআইবির নির্বাহী পরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, 'এমপিরা এমন দাবি করতেই পারেন। তবে এ বিষয়ে টিআইবিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। টিআইবি বন্ধ করার বিষয়টি যেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ঘটে।' এমন দাবির পেছনে টিআইবির প্রতিবেদন বিষয়ে সংসদ সদস্যদের ধারণার ঘাটতিকেই দায়ী করেছেন তিনি। ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, 'প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে সংসদে টিআইবিকে তলবের বিষয়টিকে স্বাগত জানাবে টিআইবি। সংসদে গিয়ে আমরা প্রতিবেদন সম্পর্কে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করব।'
গত ১৪ অক্টোবর দেশের অর্ধেক সংসদীয় আসনের সদস্যদের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। এতে বলা হয়, সংসদ সদস্যদের ৯৭ শতাংশই বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িত। হত্যা, অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত হওয়ায় সমর্থন, প্রশাসনিক কাজে প্রভাব বিস্তার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়ন বরাদ্দের অপব্যবহার, সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তার, নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্লট বরাদ্দ নেওয়াসহ সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠে আসে এ প্রতিবেদনে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'সাংসদদের এ ধরনের মন্তব্যের কারণে টিআইবির সঙ্গে কোনো দূরত্বের সৃষ্টি হয়নি, বরং এই সমালোচনাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছি। সমালোচনা মানেই যে বিরোধিতা নয়, সেটা সংসদ সদস্যদেরও বুঝতে হবে।'
টিআইবির সমালোচনা ও টিআইবির প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য নিয়ে স্পিকার আবদুল হামিদের প্রশ্ন তোলার পরিপ্রেক্ষিতে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম। সংসদ সদস্যদের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনের ভূমিকাই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। আমাদের উদ্দেশ্য সংসদ সদস্যদের আবমাননা করা নয়, বরং তাঁদের ভূমিকা যেন আরো শক্তিশালী হয়- সে জন্যই এ প্রতিবেদন।' তিনি বলেন, টিআইবির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে গণতন্ত্রের হাতকে শক্তিশালী করে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করা।
দুই দিন আগে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর টিআইবির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করা প্রসঙ্গে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'তথ্যমন্ত্রী যে আমাদের প্রতিবেদনটি দেখেছেন, সে জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা মনেকরি আমাদের চেষ্টা সফল, কারণ আমাদের প্রতিবেদন সরকারের নজরে এসেছে।'
রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করে বিরোধী দলকে ক্ষমতায় বসানোই এই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্যে- সরকারের এমন অভিযোগের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, 'এ অভিযোগ ভিত্তিহীন। এমন কোনো উদ্দেশ্য নেই টিআইবির। টিআইবি দলীয় প্রভাবের ঊধর্ে্ব থেকে কাজ করে। আমাদের প্রতিবেদনে ১৪৯ সংসদ সদস্যের মধ্যে ১৩ জন ছিলেন বিরোধী দলের। এর ১২ জনই নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সুতারং, কারো পক্ষে টিআইবির অবস্থান নেই। আমাদের অবস্থান বস্তুনিষ্ঠ।'
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির জাকির হোসেন খান ও রফিকুল হাসান, বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বেলা) সমন্বয়কারী রেহনুমা নুরায়েন, নেটওয়ার্ক ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ বাংলাদেশের (এনসিসিবি) মনসুর হাললাজ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

No comments

Powered by Blogger.