সাক্ষাৎকার-আওয়ামী লীগ নতুন রক্তের সঞ্চালনেই বেঁচে থাকবে by ওবায়দুল কাদের

সাক্ষাৎকার গ্রহণ :অমরেশ রায় সাবেক ছাত্রনেতা ওবায়দুল কাদের বর্তমানে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। একই সঙ্গে তার হাতে রয়েছে রেল মন্ত্রণালয়। ১৯৯৬ সালে তিনি ছিলেন সংস্কৃতি ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। ছাত্রজীবন শেষে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকার পাশাপাশি সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন।


কলামিস্ট হিসেবে ছিলেন জনপ্রিয়। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন এ দলের সুদীর্ঘ পথপরিক্রমার নানা দিক নিয়ে




সমকাল : আওয়ামী লীগের ৬৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আপনার অনুভূতি কী?
ওবায়দুল কাদের : একদিকে হারানোর বেদনা, অন্যদিকে নতুন করে পাওয়ার আনন্দ_ এ দুইয়ের সংমিশ্রণে যে অনির্বচনীয় অনুভূতি তার কোনো প্রকাশ হয় না। এ সময়ে আমরা যেমন আমাদের জাতির জনককে হারিয়েছি, তেমনি পেয়েছিও অনেক। ১৭৫৭ সালের যে ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, সেই ২৩ জুনই আওয়ামী লীগের জন্ম। যেন আবারও বাংলার আকাশে স্বাধীনতার সূর্যকে উদিত করার মহান লক্ষ্য নিয়েই দলটির প্রতিষ্ঠা। তারপর সুদীর্ঘ পথপরিক্রমায় অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা, আন্দোলন-সংগ্রাম আর রক্তপাতের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দেশের স্বাধীনতা এসেছে। আমরা সেই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসেরই উত্তরাধিকার। সেই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশেরও নয়।
সমকাল : প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ এই সময়ে আওয়ামী লীগের বড় সাফল্য কী বলে আপনি মনে করেন?
ওবায়দুল কাদের : আওয়ামী লীগের ৬৩ বছরের চলার বাঁকে বাঁকে অনেক ভাঙাগড়া, উত্থান-পতন ও আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। দীর্ঘ দুর্গম এ চলার পথে আওয়ামী লীগ নামের বিশাল এ বটবৃক্ষ থেকে কিছু পাতা ও ডালপালা ঝরেছে। ঝড়ের পর ঝড়, দুর্যোগ এসেছে। এর বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। তারপরও এ বটবৃক্ষের পতন ঘটেনি। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে এখনও সুবিশাল অস্তিত্ব নিয়েই টিকে আছে, বেঁচে আছে। তাই বলা যায়, এ বটবৃক্ষের শিকড় অনেক গভীরে; দেশের মানুষের হৃদয়ে প্রোথিত। আওয়ামী লীগ এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা মৃতের ভাগাড়ে দাঁড়িয়ে জীবনের জয়গান গেয়েছে। ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে সৃষ্টির পতাকা উড়িয়েছে। এ দলটি আজ তাই বাঙালি জাতির ইতিহাস আর আশা-ভরসার সঙ্গেও সম্পৃক্ত। এটিই তো এ দলের বড় সাফল্য।
সমকাল : অন্যান্য সাফল্য?
ওবায়দুল কাদের : আওয়ামী লীগের অন্য অনেক বড় ও বিশাল সাফল্যও রয়েছে। হাজার বছরের পরাধীন বাঙালি জাতির স্বাধীনতা আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এসেছে। আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুই এদেশের মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সবকিছুতেই আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগসহ দলের সহযোগী শক্তিগুলোর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। স্বাধীনতা অর্জনের ভ্যানগার্ড এ দলটিই জাতিকে সার্বভৌমত্ব, জাতীয় পতাকা, সংবিধান, গণতন্ত্র ও প্রগতিও দিয়েছে। এত জেল-জুলুম-নির্যাতন, বিপদ-আপদ ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে জনগণের আস্থা নিয়ে দলটি বারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়ও অধিষ্ঠিত হয়েছে। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তারা দেশকে উন্নয়ন দিয়েছে। সে সময়টাতেই সত্যিকারার্থে দেশের পরিবর্তন হয়েছে। আর এবার ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শেষ করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে অভিশাপমুক্তির আরেক ধাপে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচার ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের তালিকায় আজ আর বাংলাদেশের নাম নেই। গণতন্ত্রের সূচকেও দেশ অনেকটাই এগিয়ে। নারীর ক্ষমতায়ন তৃণমূল পর্যন্ত পেঁৗছে গেছে। দেশের মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার যেমন কমেছে, তেমনি শিক্ষার হার ও কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। যক্ষ্মা এবং ম্যালেরিয়া রোগ নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের ওষুধ যথেষ্ট সাফল্য দেখিয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার যুগেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ ভাগে পেঁৗছেছে। ক্রিকেটসহ এদেশের খেলাধুলাও এখন বিশ্বমানে পেঁৗছে গেছে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার এদেশের ক্রিকেট থেকেই এসেছে। দেশের দুই জোড়া ছেলেমেয়ে এভারেস্টও জয় করে ফেলেছে। সমুদ্রসীমায় অধিকার প্রতিষ্ঠা তথা সমুদ্রজয়ের মধ্য দিয়ে সমুদ্র ও মহীসোপানের বিশাল মৎস্য, তেল-গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদও আমরা অর্জন করেছি। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় শেখ হাসিনার গতিশীল, দূরদর্শী ও আপসহীন নেতৃত্ব আজ সারাবিশ্বেই প্রশংসিত। এগুলোই তো আওয়ামী লীগের অসামান্য সাফল্য।
সমকাল : আপনার দৃষ্টিতে আওয়ামী লীগের কোনো ব্যর্থতা কিংবা ভুল-ত্রুটি থাকলে মূল্যায়ন করুন।
ওবায়দুল কাদের : কিছু কিছু ব্যর্থতা কিংবা ভুল-ত্রুটি তো থাকবেই। আমি মনে করি, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে পুরোমাত্রায় সফল হলেও দলটির কিছু নেতাকর্মীর আচরণগত কিছু ব্যর্থতা ও সমস্যাও রয়ে গেছে। বিশেষ করে সহযোগী সংগঠনগুলোর কিছু খারাপ আচরণে জনমনে কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে। তবে এসব ভুলত্রুটি সংশোধনের মাধ্যমেই দলের নেতাকর্মীদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আত্মসমালোচনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধিই হবে জনমনের অসন্তোষ দূর করার সবচেয়ে বড় কার্যকর পদক্ষেপ।
অর্থনৈতিকভাবেও দলটির কিছু ব্যর্থতা রয়ে গেছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের উদ্যোগ নিলেও পদে পদে বাধা ও ষড়যন্ত্রের কারণে এখনও পুরোমাত্রায় সফল হতে পারেনি। এখনও আমরা বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকট পুরোপুরি দূর করতে পারিনি। দ্রব্যমূল্য এখনও বাড়তি পর্যায়ে। যানজট বৃদ্ধির পাশাপাশি রাস্তাঘাটগুলোও ভাঙাচোরা ও সংস্কারবিহীন। তবে জনগণের এসব সংকট দূর করতে আমরা কিছু মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছি, যা এ বছরান্তেই দৃশ্যমান হবে। আগামী এক বছরের মধ্যে এর সুফলও জনগণ পেতে শুরু করবে। তখন বিদ্যুৎ-গ্যাস, দ্রব্যমূল্য, যানজট, সড়ক দুর্ঘটনা, রাস্তাঘাট ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহনীয় মাত্রায় চলে আসবে। তখনই আসলে সরকারের ভালো কাজগুলোর প্রতিফলন দেখা যাবে। জনমনে অসন্তোষও কমে আসবে।
সমকাল : এই দলের কাণ্ডারি হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ওবায়দুল কাদের : বাঙালি জাতির ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক নেতারই আবির্ভাব ঘটেছে। পলাশীর প্রান্তরে ব্রিটিশদের হাতে অস্তমিত স্বাধীনতার সূর্য ফিরিয়ে আনতে অসংখ্য আন্দোলন-সংগ্রামও হয়েছে। কিন্তু হাজার বছরের পরাধীন জাতিকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে সেসব আন্দোলন-সংগ্রামের বেশিরভাগ যেমন ছিল অসংগঠিত, তেমনি কেন্দ্রাতীত শক্তি হিসেবে কোনো নেতাও আবির্ভূত হতে পারেননি। একমাত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই সেই কেন্দ্রাতীত শক্তি হিসেবে নিজেকে আবির্ভূত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ষাটের দশক থেকেই তিনি এদেশের মুক্তি সংগ্রামের মূল নেতায় পরিণত হয়ে ধাপে ধাপে সেই সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়েছেন। তার নেতৃত্বেই ৬ দফা, ১১ দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও সত্তরের নির্বাচনে বাঙালির বিজয় ঘটেছে। ৭ মার্চ তিনি যে অবিস্মরণীয় ভাষণ দিয়েছেন, সেটিই ছিল এদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা। তারপর ২৫ মার্চের কালরাত শেষে ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে তিনি জাতিকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়েছেন। বিজয় অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ উপহার দিয়েছেন। তিনি ছিলেন পরাধীন জাতির বিবেক, যুগকর্তা। স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর জাতির এক অনন্যসাধারণ নেতা। শোষিত-বঞ্চিত জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের প্রতীক। কেবল তাই নয়, স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে অসামান্য সাফল্যও দেখিয়েছিলেন। কিন্তু যখনই তার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যেতে শুরু করেছিল, তখনই দেশি-বিদেশি প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের ষড়যন্ত্র কেবল তাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, এদেশের প্রগতির চাকাকেও পিছিয়ে দিয়েছে। আমার বিশ্বাস, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নতির শিখরে পেঁৗছে যেত।
সমকাল : দলের বর্তমান নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের মূল্যায়ন করুন।
ওবায়দুল কাদের : দেখুন, অনেকেই ভেবেছিলেন ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগ মুসলিম লীগ হয়ে যাবে। আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও বলেছিল, ১০০ বছরেও আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। পঁচাত্তরের পর আওয়ামী লীগ যে আবারও ক্ষমতায় আসবে_ এটাও অনেকে ভাবতে পারেননি। তবে তাদের সে ধারণা অল্প দিনেই ভ্রান্ত বলে প্রমাণ হয়েছে। তাদের হিসাবের অঙ্কও মেলেনি, যখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নতুন দিনের কাণ্ডারি হিসেবে এলেন। ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করে দলকে সুসংগঠিত করতে সারাদেশে চারণের বেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। জেল-জুলুম-নির্যাতন, হত্যার ষড়যন্ত্র ও নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এদেশের দুঃখী মানুষের ভোট-ভাত ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের ঐক্যের প্রতীক হয়ে দেশে এলেও এখন তিনি নিজেকে জাতীয় ঐক্যের প্রতীকে পরিণত করেছেন। তার ব্যক্তিগত ক্যারিশমায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবিই প্রতিফলিত। সব মিলিয়ে এখন তিনি এদেশের মানুষ এবং আওয়ামী লীগ কর্মীদের আস্থা ও বিশ্বাসের একমাত্র ঠিকানা। বাঙালি জাতিরও শেষ ঠিকানা।
সমকাল : আগামী দিনে আওয়ামী লীগ তথা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ কী কী?
ওবায়দুল কাদের : ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নই আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার চ্যালেঞ্জও সরকারের সামনে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে কঠিন কাজ আমরা হাতে নিয়েছি, সেটিও এই সরকারের মেয়াদেই একটি পরিণতির দিকে এগিয়ে নিতে হবে। জেলহত্যার পুনঃবিচার শুরু করতে হবে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ সব গ্রেনেড-বোমা হামলা ও হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ করতে হবে। পদ্মা সেতুর কাজ অন্তত শুরুটা করে দিতে হবে, যাতে পরের সরকার শেষ করতে পারে। আলোচনার মাধ্যমে মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও সম্পর্কও বাড়াতে হবে। এছাড়া বিদ্যুৎ-গ্যাস, দ্রব্যমূল্য, যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির সংকটকে সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসা, শেয়ারবাজার ও পোশাক শিল্পের অস্থিরতা দূর করা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন_ এগুলোও সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
সমকাল : আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে আওয়ামী লীগের করণীয় কী?
ওবায়দুল কাদের : উন্নয়ন ও আচরণ দিয়ে জনগণের ভালোবাসা অর্জনের পাশাপাশি বিরোধী দলের সব আন্দোলন ও নেতিবাচক অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে। দলের কিছু নেতাকর্মীর আচরণগত যে সমস্যা রয়েছে, তার সংশোধনের বার্তা জনগণের কাছে এখনই পেঁৗছে দিতে হবে। এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যা জনমতের বিরুদ্ধে চলে যায়। উন্নয়ন কাজগুলো এগিয়ে নিতে হবে, যাতে আগামী নির্বাচনে জনমত আওয়ামী লীগের ওপর প্রতিফলিত হয়। আমি মনে করি, আমাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অন্তত ৬৫-৭০ ভাগ পূরণ করতে পারলেই আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে। কাজটি কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়।
সমকাল : নতুন প্রজন্ম কেন আওয়ামী লীগের প্রতি আকৃষ্ট হবে?
ওবায়দুল কাদের : নতুন প্রজন্ম আকৃষ্ট হবে এ কারণে যে, আওয়ামী লীগ তাদের সামনে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছে। এ ডিজিটাল বাংলাদেশের বাতাস ও ছোঁয়া এখন ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত পেঁৗছে গেছে। প্রত্যন্ত এলাকার তরুণ প্রজন্মও এখন কম্পিউটার ও ইন্টারনেটসহ তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজেদের জীবনকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ প্রতিশ্রুতির প্রতি নতুন প্রজন্ম যে আস্থা-বিশ্বাস রেখেছিল তা বাস্তবায়নের পথে আমরা এগিয়েও চলেছি। তাছাড়া নতুন প্রজন্মের সামনে সমুদ্রজয়সহ বিশাল অর্জনের হাতছানিও আমরা দেখিয়েছি। তবে এটাও ঠিক, এখনও তরুণদের সামনে নানা সমস্যা রয়েছে। এদেশের বেকারত্ব সমস্যা এখনও পুরোপুরি দূর হয়নি। প্রচুর কর্মসংস্থানও গড়ে ওঠেনি। হতাশা থেকে তরুণদের অনেকে জঙ্গিবাদ ও মাদকের প্রতি প্রলুব্ধ হয়। এরপরও আমি বলব, আওয়ামী লীগই তাদের সামনে একমাত্র আশা-ভরসার স্থল। কেননা আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব হাতে নিয়েই অন্য অনেক কাজের মতো বেকারত্ব সমস্যা নিরসনের পদক্ষেপ নিয়েছে। নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টি করে তরুণদের হতাশা দূর করার চেষ্টা করছে। তাই এত সংকট, এত দুঃখ ও এত কষ্টের মধ্যেও নতুন প্রজন্ম আশা হারায়নি। আমার বিশ্বাস, অতীতের মতো আগামী দিনেও তারা আওয়ামী লীগর প্রতি কেবল আকৃষ্টই হবে না, একদিন তারাই দলটির নেতৃত্ব হাতে নিয়ে নব নব অভিযাত্রা ও উৎকর্ষে দল ও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সমকাল : নতুন প্রজন্মের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের জন্য আপনার পরামর্শ কী হবে?
ওবায়দুল কাদের : নতুন প্রজন্মই তো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। তাদের হাতেই আমরা আগামী দিনের নেতৃত্ব তুলে দেব। তাই তাদের সর্বপ্রথম আগামী দিনের নেতৃত্ব গ্রহণে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞানের আলোকে নিজেদের উদ্ভাসিত করতে হবে। অসুস্থ ছাত্র রাজনীতির বিপরীতে সুস্থ ও প্রগতিশীল ধারা গড়ে তুলতে মেধাবী ও নিয়মিত ছাত্রদের এগিয়ে আসতে হবে। কোনো অবস্থায়ই বিপথে যাওয়া যাবে না। সৎ, রুচিশীল ও সুস্থ মানসিকতায় নিজেদের চরিত্রকে উপযুক্তভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে জাতীয় উন্নয়নের ইঞ্জিনের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারেন।
সমকাল :ভবিষ্যতের আওয়ামী লীগকে কীভাবে দেখতে চান?
ওবায়দুল কাদের : আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা এনেছে। এখন এদেশকে আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এবং শোষণ-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতা-দুর্নীতিমুক্ত ও উজ্জ্বল স্বনির্ভর এক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখি। এ স্বপ্নকে সত্যি করতে আমাদের আরও অনেক লম্বা ও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। আওয়ামী লীগকে সেই লক্ষ্য অর্জনের উপযোগী সংগঠন হিসেবেই দেখতে চাই। দীর্ঘ ৬৩ বছরের চলার পথে দলের যে ভুল-ত্রুটি হয়েছে আত্মসমালোচনা ও আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে সেসব ভুল-ত্রুটির সংশোধন করতে হবে। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমেই আমাদের ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যেতে হবে। সময়ের প্রয়োজনে দলে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় ঘটাতে হবে। নতুন তাজা রক্তের সঞ্চালনের মধ্য দিয়ে বিশাল এ বটবৃক্ষকে পুষ্ট করে বাঁচিয়েও রাখতে হবে। আমার বিশ্বাস, আওয়ামী লীগ এ বিশাল চ্যালেঞ্জে জয়ী হবে। বাংলাদেশও অদূর ভবিষ্যতে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে গ্গ্নোবাল স্টেজের তীব্র প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে সক্ষম হবে। এদেশ উন্নয়ন থেকে সমৃদ্ধির পথেই এগিয়ে যাবে।
সমকাল : সাক্ষাৎকার প্রদানের জন্য ধন্যবাদ।
ওবায়দুল কাদের : সমকাল পাঠকদের শুভেচ্ছা।
 

No comments

Powered by Blogger.