হাসপাতালের জমি গ্রাসের অপচেষ্টা

জি সি দেবের উদ্যোগটি দ্রুত বাস্তবায়িত হোক কিছু মানুষের লোভের যেন কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। এদের নিজেদের তো কোনো ভালো কাজ করার যোগ্যতাই নেই, অন্য কেউ ভালো কাজ করতে গেলে সেখানেও এরা তাদের অশুভ থাবা বিস্তার করে।


পঞ্চাশের দশকে রাজধানীর টিকাটুলী এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণের জন্য শহীদ বুদ্ধিজীবী জি সি দেবের দান করা প্রায় আট বিঘা জমি গ্রাস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে এমনই একটি চক্র। কী ভয়াবহ এদের লুটপাটের নেশা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব ছিলেন একজন মহৎপ্রাণ ব্যক্তি। দার্শনিক হিসেবেও তাঁর সুখ্যাতি ছিল বিশ্বময়। পঞ্চাশের দশকে তিনি তাঁর জীবদ্দশায় একটি ট্রাস্ট গঠন করে একটি আধুনিক যক্ষ্মা হাসপাতাল করার জন্য এই জমি দান করেছিলেন। সেখানে প্রাথমিকভাবে একটি হাসপাতাল চালুও হয়েছিল। কিন্তু অর্থাভাবে এর কাজ বেশি দূর এগোতে পারেনি। এখনো টিম টিম করে চলছে হাসপাতালটি। এরই মধ্যে এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রথমে হাসপাতালটির নিয়ন্ত্রক সেজে যায় এবং এরপর লিজের জাল দলিলের মাধ্যমে সেই জমি আত্মসাতের চেষ্টা করতে থাকে। ইতিমধ্যে তারা পাঁচটি আবাসিক ভবন তৈরির জন্য একটি ডেভেলপার কম্পানির সঙ্গে চুক্তিও করেছে। সাইনিং মানি হিসেবে নিয়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকা। কিন্তু ট্রাস্টের ফান্ডে সে টাকা জমা হয়নি। ১৯ জুনের কালের কণ্ঠে এ ব্যাপারে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দুদক বর্তমানে বিষয়টি তদন্ত করছে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা দেশের যে কজন কৃতী সন্তানকে হারিয়েছি, শহীদ জি সি দেব তাঁদের মধ্যে অন্যতম। স্বাধীনতার পর চার-চারটি দশক আমরা পেরিয়ে এসেছি। ব্যক্তিজীবনে আমরা অনেকেই নানাভাবে লাভবান হয়েছি। কিন্তু সেই কৃতী সন্তানদের স্মৃতিরক্ষায় আমরা কী করতে পেরেছি? কিছু করতে না পারার এই ব্যর্থতা অনেকেরই মর্মপীড়ার কারণ। তার চেয়ে অনেক বেশি মর্মপীড়ার কারণ হয়, যখন দেখি শহীদ বুদ্ধিজীবী জি সি দেবের মতো একজন মহান ব্যক্তির অর্ধসমাপ্ত উদ্যোগ এগিয়ে নিতে আমরা ব্যর্থ হই। উপরন্তু তাঁর সেই উদ্যোগটির টুঁটি চেপে ধরা হয়, তাঁর দান করা জমি গ্রাস করার চেষ্টা হয়। অথচ আমরা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক বলে দাবি করি! এর চেয়ে বড় লজ্জার কথা আর কী হতে পারে? আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের বিবেককে এসব ঘটনা নাড়া দেয় কি না? আমরা চাই, এ জমি গ্রাস করার অপচেষ্টার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা হোক এবং তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার জি সি দেবের আরাধ্য হাসপাতাল নির্মাণের কাজটি জরুরি ভিত্তিতে হাতে নেবে এবং দ্রুত তা সমাপ্ত করবে।

No comments

Powered by Blogger.